মানসিক অস্থিরতার জন্য পঠন-পাঠনে আগ্রহ কমবে। কর্মপ্রার্থীদের যোগাযোগ থেকে উপকৃত হবেন। ব্যবসায় যুক্ত হলে শুভ। ... বিশদ
উল্লেখ্য, রবিবার পরিযায়ী পাখিদের খোঁজে কালিয়াচক-২ ব্লকের পঞ্চানন্দপুর এলাকায় গঙ্গা নদীর তীরবর্তী কিছু চরে গিয়েছিলেন মালদহ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করাও সংগঠনের সদস্যদের উদ্দেশ্য ছিল। তখনই তাঁদের নজরে আসে, বেশ কিছু পরিযায়ী পাখি মৃত বা মৃতপ্রায় অবস্থায় পড়ে রয়েছে চরের আবাদ হওয়া এলাকায়। প্রাথমিক শুশ্রূষার পরে সংগঠনের সদস্যরা মাত্র একটি পাখিকে বাঁচাতে সমর্থ হলেও বাকিগুলি মারা যায়। আগের অভিজ্ঞতা থেকে এই পাখিপ্রেমীরা বুঝতে পারেন, আবাদ হওয়া জমির ফসলে ব্যবহৃত রাসায়নিক গলাধঃকরণ করেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েছে নিরীহ পরিযায়ী পাখিগুলি।
মালদহ ওয়াইল্ড লাইফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কিশোর বণিক বলেন, মৃত পাখিগুলি ‘লিটল স্টিন্ট’ এবং ‘টেমিঙ্ক’স স্টিন্ট’ প্রজাতির। গত বছরেও একই ধরণের অভিজ্ঞতা হয়েছিল। তখন বনদপ্তরের বিশেষজ্ঞরাই জানিয়েছিলেন, রাসায়নিক খেয়েই মৃত্যু হয়েছিল পাখিগুলির। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল। আমরা এব্যাপারে বনদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি ইতিমধ্যেই।
অতিরিক্ত বিভাগীয় বন আধিকারিক সীতাংশু গুপ্ত বলেন, আমরা বিষয়টি শুনেছি। সোমবার থেকেই গঙ্গার চর এলাকায় নজরদারির কাজ আরম্ভ হয়ে গিয়েছে। কালিয়াচক রেঞ্জের রেঞ্জার দীপক মণ্ডল নিজেই বিষয়টির তত্ত্বাবধান করছেন। বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্যে এলাকায় সচেতনতা তৈরি করতে কর্মসূচিরও পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে পরিযায়ী পাখিদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের বেশ কিছু উদাহরণ সামনে এসেছে। স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, মুড়িতে বা মৃত মাছে কড়া রাসায়নিক মিশিয়ে ফেলে রাখা হচ্ছে এলাকায়। রাসায়নিক মিশ্রিত ওই মুড়ি, চিঁড়া বা মাছ মুখে দিলেই অসুস্থ হয়ে ছটফট করছে পরিযায়ী পাখিরা। ওই অবস্থায় সেগুলিকে ধরে ফেলে ধারালো ব্লেড দিয়ে তাদের পেট চিরে ফেলা হচ্ছে। বের করে ফেলে দেওয়া হচ্ছে বিষে আক্রান্ত পাখিগুলির পাকস্থলী। ধড় থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হচ্ছে পাখিগুলির। ফলে বিষ মিশ্রিত রক্ত বেরিয়ে যাচ্ছে। এরপরে ওই পাখিগুলির মাংস ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন বাজারে।
স্থানীয় এক বাসিন্দার বক্তব্য, আগে প্রকাশ্যেই গুলি করে মারা হতো বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিকে। এখন বনদপ্তরের নজরদারির কারণে প্রকাশ্যে গুলি করে পরিযায়ী পাখি হত্যা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে চলছে চোরাগোপ্তা শিকার। তাতে গুলির বদলে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক।
পক্ষী বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই পরিযায়ী পাখিগুলি বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপাল সহ বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশ থেকে মালদহ সহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় চলে আসে শীতের শুরুতেই। আবার কিছু পাখি আসে অস্ট্রেলিয়া, জাপান এমনকি সাইবেরিয়া থেকেও। মালদহে গঙ্গা নদীর চরগুলিতেই মুখ্যত বাসা বাঁধে এই পাখিগুলি। নভেম্বর মাসের শুরু থেকে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাস পর্যন্ত থেকে এরা আবার ঘরে ফিরে যায়।
মাংসের লোভে লিটল স্টিন্ট, টেমিঙ্ক’স স্টিন্ট ছাড়াও কমন শেলডাক, রেড-ক্রেস্টেড পোচার্ড, পায়েড অ্যাভোসেট, উলি নেকড স্ট্রোকের মতো পাখিগুলি চোরাশিকারিদের প্রধান লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন পক্ষী বিশেষজ্ঞরা।
এই ধরণের পরিযায়ী পাখিদের হত্যা করা ১৯৭২ সালের বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন অনুযায়ী বেআইনি। অতিরিক্ত বিভাগীয় বন আধিকারিক বলেন, এই ধরণের পাখি শিকার করতে গিয়ে ধরা পড়লে কম পক্ষে তিন বছরের হাজতবাস হতে পারে।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, একদিকে যেমন নদীপথে বিভাগীয় নিরাপত্তা কর্মীদের নজরদারি করতে পাঠানো হয়েছে, তেমনই গঙ্গা তীরবর্তী এলাকাগুলিতেও নজরদারির কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।