কাজকর্মে জটিলতা মুক্তি ও কর্মোন্নতি। অপচয়মূলক বা অপ্রত্যাশিত ব্যয় বাড়বে। পারিবারিক ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক। ... বিশদ
পাঁচ হিমোগ্লোবিন নিয়ে হাওড়ার গাববেড়িয়া স্টেট জেনারেল হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজে এসেছিলেন খানাকুলের নাজিবা। মৃত্যু তখন কড়া নাড়ছে শিয়রে। রক্তচাপ অস্বাভাবিক বেশি। হার্ট ফেলিওরের জন্য তাঁকে রাখতে হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে। স্ত্রীকে ওই অবস্থায় দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন স্বামী। বলেছিলেন, ‘ডাক্তারবাবু, আমার বাচ্চার দরকার নেই। বউকে বাঁচান যেভাবেই হোক।’ চিকিৎসকরা তারপর সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত দেন, ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থাতেই প্রসব করানো হবে। শেষমেশ তাই হয়। তারপর বাচ্চাটিও কঠিন সময় পার করে এখন অনেকটা সুস্থ। ছুটির অপেক্ষায় রয়েছেন মা ও শিশু দু’জনেই।
এই কাহিনি নাজিবার একার নয়। এক জানুয়ারি থেকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে প্রসব হওয়া ৮৪ জন মায়েরই নাজিরার মতো ঘটনা। চিকিৎসক পরিভাষায় এঁরা প্রত্যেকেই চিহ্নিত একটি সরকারি পরিভাষায়—‘ম্যাটারনাল নিয়ার মিস’! সোজা বাংলার এ কথার অর্থ, যাঁদের কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছে মৃত্যু। হারতে হারতেও যাঁরা জিতে গিয়েছেন জীবনের লড়াইয়ে। মেডিক্যালের স্ত্রীরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ রামপ্রসাদ দে বলেন, ‘দিবারাত্রের চেষ্টার পরও বেশ কিছু প্রসূতিকে হারিয়েছি। আবার গত পাঁচ মাসে এই ৮৪ জনের কাহিনিও ভোলবার নয়। এঁদের জন্য লড়তে লড়তে মনে হয়েছে, পৃথিবীর অনেক পেশায় মধ্যে চিকিৎসক পেশা আসলে অনন্য।’
চিকিৎসা পরিভাষায় ঠিক কী বলা হয় ‘ম্যাটারনাল নিয়ার মিস’কে? প্রসবকালে বা ছ’সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাতের সময় যেসব প্রসূতি অত্যন্ত আশঙ্কাজনক সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েও শেষমেশ প্রাণে বাঁচেন, তাঁদের বলা হয় ‘ম্যাটারনাল নিয়ার মিস’!
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, জানুয়ারি থেকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে ১৯ থেকে ৫১ বছর বয়সী মায়েদের মধ্যে ৮৪ জন নতুন জীবন পেয়েছেন। সকলেই সিসিইউ নয়ত ইডেন বাড়ির অবস্টেটিকস এইচডিইউতে ভর্তি ছিলেন। তিনবার আইভিএফ করেও ব্যর্থ, রক্তের ক্যান্সার, মেনিনজাইটিস, তীব্র রক্তক্ষরণ, হার্টের অসুখ, উচ্চ রক্তচাপ, প্রচণ্ড খিঁচুনি বা একলাম্পশিয়া, একটোপিক প্রেগনেন্সি বা জরায়ুর বদলে অন্যত্র সন্তান আসা, ডিম্বাশয় ফেটে যাওয়া, সেপটিসেমিয়া—জটিলতার মধ্যে কী নেই!
যেমন হাওড়ার প্রিয়া বৈদ্য। তীব্র খিঁচুনির পর অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন প্রিয়া। সপ্তাহখানেক ছিলেন ভেন্টিলেটরে। বেঁচে যাবেন ভাবাই যায়নি। সদ্য ‘মা’ হওয়া সেই প্রিয়া বলেন, ‘খুব কঠিন সময় গিয়েছে। চিকিৎসকদের জন্য বেরিয়ে আসতে পেরেছি। দু’জনেই ভালো আছি।’