বিদ্যার্থীদের উচ্চবিদ্যার ক্ষেত্রে মধ্যম ফল আশা করা যায়, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সাফল্য আসবে। ব্যবসাতে যুক্ত ... বিশদ
হুগলি জেলার কৃষি দপ্তরের উপ অধিকর্তা (প্রশাসন) অশোক তরফদার জানিয়েছেন, আলুচাষিদের এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। ধসা রোগ প্রতিরোধে সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মাঠে মাঠে পরিদর্শন করছেন কৃষি আধিকারিকরা। চাষিদের পাশে থেকে ধসা রোগ প্রতিরোধে তাঁরা সবরকম সহযোগিতা করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কীভাবে আলুতে ধসা মোকাবিলা করতে হবে, সেসম্পর্কে মাইকিং করা হচ্ছে। ফেস্টুন, পত্র-পত্রিকার মাধ্যমেও চাষিদের সজাগ করা হচ্ছে। সরকার সবরকম সহযোগিতা করছে চাষিদের। তবে এবারের আবহাওয়া আলুচাষের প্রতিকূল। ফলন কমবে কি বাড়বে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়।
হুগলির শস্য সুরক্ষা আধিকারিক বাপ্পাদিত্য সেনাপতি জানিয়েছেন, জেলায় এখনও সেভাবে আলুতে ধসা কিংবা অন্য রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। যেটুকু দেখা দিয়েছে তা সহজেই মোকাবিলা করা যাচ্ছে। আসলে আলু বসানোর সময় ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। ফলে অধিকাংশ এলাকায় আলু চাষ শুরু হতে দেরি হয়েছে। তার উপর বারবার তাপমাত্রার পরিবর্তন আলুগাছের বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। কোথাও কোথাও ধসা দেখা দিয়েছে। চাষিদের বলা হচ্ছে, রোগহীন আলুগাছে প্রতিষেধক হিসেবে প্রতি ১৫ লিটার জলের ড্রামে ৩৭.৫ গ্রাম ম্যানকোজেব অথবা ৬০ গ্রাম কপার অক্সিক্লোরাইড মিশিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করতে হবে। আর নাবি ধসায় আক্রান্ত গাছে প্রতিকার হিসেবে প্রতি ১৫ লিটার জলের ড্রামে সাইমক্সানিল ৮ শতাংশ ও ম্যানকোজেব ৬৪ শতাংশ অর্থাৎ মোট ৪৫ গ্রাম মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এছাড়াও ডাইমিথোমর্ফ ১২ শতাংশ ও পাইরাক্লস্ট্রাবিন ৬.৭ শতাংশ মিলিয়ে ৩৭.৫ গ্রাম জলে গুলে স্প্রে করা যেতে পারে। এছাড়াও ডাইমিথোমর্ফ ২৭ শতাংশ ও অ্যামিটক্ট্রাডিন ২০.২৭ শতাংশ অর্থাৎ ৪০ মিলি প্রতি ১৫ লিটার জলের ড্রামে মিশিয়ে প্রয়োগ করলে সুফল মিলবে। মনে রাখতে হবে, স্প্রে করার সময় স্প্রেয়ার নজেল যেন অবশ্যই নীচের দিকে থাকে। তা হলে গাছের কাণ্ড ও পাতার নীচের অংশ ওষুধ মিশ্রিত জলে ভিজবে। এছাড়া স্প্রের জন্য প্রতি বিঘায় ১৫ লিটার মাপের ড্রামে ১০০-১০৫ লিটার জল অবশ্যই দিতে হবে।
হুগলির উপ কৃষি অধিকর্তা (বিশ্বব্যাঙ্ক) জয়ন্তকুমার পাড়ুই বলেন, আলুতে ধসা লেগেছে ঠিকই। কিন্তু ফলন কমে যাবে, একথা এখনই বলার সময় হয়নি। আলু উঠলে তবেই ফলন বোঝা যাবে। আর দু’সপ্তাহ মোটামুটি শীত থাকলেই আলুর ফলন ভালো হবে। এবারে আলুর দামও আছে। জয়ন্তবাবু বলেন, হুগলির অর্থকরী ফসল আলু। জেলায় ১৮টি কৃষি ব্লকে তিন লক্ষ ৫১ হাজার আলুচাষি রয়েছেন। এঁদের অধিকাংশের শস্যবিমা করা আছে। ফসলের ক্ষতি হলে তাঁরা সাহায্য পাবেন।
উল্লেখ্য, হুগলি জেলার মুণ্ডেশ্বরী নদী, দামোদর নদের তীরবর্তী ও উঁচু এলাকা থেকে আলু উঠতে শুরু করেছে। ধনেখালি, পোলবা, পুরশুড়া, তারকেশ্বর, পাণ্ডুয়া, হরিপাল ও আরামবাগ প্রভৃতি ব্লকে কুফরি জ্যোতি, কুফরি চন্দ্রমুখী, কুফরি পোখরাজ প্রজাতির আলুর চাষ হয়েছে। নিরাপদ চৌধুরী, ভূদেব ঘোষের মতো অভিজ্ঞ চাষিরা জানিয়েছেন, এবার শীতে আবহাওয়ার পরিবর্তন আলু চাষে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। ধসা রোগ দেখা দিচ্ছে। একাধিকবার ছত্রাকনাশক ওষুধ প্রয়োগ করতে হচ্ছে। সরকারি আধিকারিকরাও সহযোগিতা করছেন। তবে এবারে আবহাওয়ার বড্ড বেশি খামখেয়ালিপনা। আলুতে দাম থাকলেও তাই ফলন নিয়ে চিন্তিত সকলেই। ফলনের জন্য ১১০ দিন সঠিক সময়। আর কিছুদিন ঠাণ্ডা থাকলেই আলুচাষিরা খুশি হবেন।
প্রসঙ্গত, হুগলি জেলায় ২০১৮-১৯ সালে আলু চাষ হয়েছিল ৮৭ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। ২০১৯-২০ সালে জেলায় আলু চাষ হয়েছে ৮৫ হাজার ৪৮৭ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের চেয়ে কিছুটা হলেও কম।