কর্মপ্রার্থীদের কোনও চুক্তিবদ্ধ কাজে যুক্ত হবার যোগ আছে। ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। বিবাহের যোগাযোগ ... বিশদ
২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত দেশের ২২টি রাজ্যের বিভিন্ন জলাশয়ে প্রায় ১৪ হাজার খাঁচা বসানো হয় বলে জানা গিয়েছে। বেশিরভাগই দেশের পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও ছত্তিশগড়ে। প্রায় ৪৩ শতাংশ। এরপরই রয়েছে দেশের পশ্চিমাঞ্চল। গুজরাত, মহারাষ্ট্র, গোয়া। যেখানে খাঁচার সংখ্যা ৩৪ শতাংশ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খাঁচায় পাঙ্গাস ও কিছু ক্ষেত্রে তেলাপিয়া মাছ উৎপাদন হচ্ছে। পূর্বাঞ্চলে খাঁচায় পোনা ও মাগুর মাছ চাষ হচ্ছে বলে খবর। স্থানীয় চাহিদা অনুযায়ী সিফরি বিভিন্ন রকম খাঁচার উপর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। দেখা গিয়েছে, ৬ বাই ৪ বাই ৪ ঘন মিটারের একটি খাঁচায় পাঙ্গাস মাছ চাষ করে বছরে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে। খাঁচায় মাছ চাষ করে দেশে বছরে ৮ লক্ষ শ্রমদিবস তৈরি হচ্ছে। ১৪ হাজার খাঁচায় প্রায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হচ্ছে। মাঝারি ও বড় জলাশয়ের ০.১ শতাংশ এলাকাতেও যদি খাঁচায় মাছ চাষ করা যায়, তা হলে ১০-১৫ লাখ মেট্রিক মাছ উৎপাদন সম্ভব। ঝাড়খণ্ডের চাওলি জলাশয়ে খাঁচায় মাছচাষ দৃষ্টান্ত।
মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আমাদের রাজ্যে খাঁচায় মাছচাষে প্রভূত সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। তা হলে মাছ উৎপাদনে বহুলাংশে এগিয়ে যাবে পশ্চিমবঙ্গ। গভীরতা ও স্রোত রয়েছে এমন জলাশয়ে খাঁচায় মাছচাষ করা যায়। পুরুলিয়ায় অনেক জলাশয় রয়েছে, যেখানে খাঁচায় মাছচাষ করা যেতে পারে। ইটভাটার অনেক পুকুর পড়ে রয়েছে, সেখানেও এই প্রযুক্তি কার্যকরী হতে পারে। উলুবেড়িয়ায় দামোদর নদে খাঁচায় মাছচাষ শুরু হয়েছে সম্প্রতি।
সিফরির মুখ্য বিজ্ঞানী ড. অর্চনকান্তি দাস জানিয়েছেন, আমাদের রাজ্যে উন্মুক্ত কয়লা খাদানে জমা জলে খাঁচায় মাছ চাষ করা যেতে পারে। ঝাড়খণ্ডে তা অনেক আগেই শুরু হয়েছে। ৫ মিটার বাই ৫ মিটার জিআই খাঁচার দাম ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। সিফরি ওই খাঁচা তৈরি করেছে। নদীতেও খাঁচা পেতে মাছ চাষ করা সম্ভব। বাংলাদেশের চাঁদপুরে ডাকাতিয়া নদীতে ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে খাঁচা বসানো হয়েছে। তাতে মাছচাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে গোটা দেশে প্রায় ২০ হাজার খাঁচায় মাছচাষ চলছে।
২০১০ সাল থেকে মাইথন ড্যামে খাঁচায় মাছ চাষ করা হচ্ছে। শুধু পাঙ্গাস বা তেলাপিয়া নয়, খাঁচায় গলদা চিংড়ি, বাটা ও পাবদা মাছ চাষও সফল হয়েছে। বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে ৫ হাজারের বেশি খাঁচায় মাছচাষ চলছে। তবে যে জলাশয়ে রেসিডেন্ট মাছ হিসেবে তেলাপিয়া রয়েছে, সেখানেই শুধুমাত্র খাঁচায় তাঁরা মনোসেক্স তেলাপিয়া মাছ চাষের সুপারিশ করে থাকেন বলে জানিয়েছেন অর্চনকান্তিবাবু। তিনি জানিয়েছেন, সিফরি ইতিমধ্যেই ‘কেজ গ্রো ফিড’ তৈরি করেছে। যা বাজার চলতি মাছের খাবারের চেয়ে পুষ্টিগুণে অনেক ভালো এবং দামও কম। পাশাপাশি তাঁরা আবিস্কার করেছেন ফর্মালিন কিট। যা দিয়ে কোনও মাছে ফর্মালিন দেওয়া আছে কিনা সহজেই শণাক্ত করা যাবে। লেক ভাইরাসের আক্রমণে তেলাপিয়া মাছে মড়ক দেখা দেয়। এই ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দিলে আর কিছুই করার থাকে না। এক সপ্তাহের মধ্যে জলাশয়ের সমস্ত তেলাপিয়া মারা যায়। মারাত্মক লোকসানের মুখে পড়তে হয় মৎস্যচাষিদের।
সিফরির পক্ষ থেকে তেলাপিয়া লেক ভাইরাস কিট আবিস্কার করা হয়েছে। যা দিয়ে কোনও তেলাপিয়া মাছ লেক ভাইরাস আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা বোঝা যাবে।
২০২২ সালের মধ্যে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে খাঁচায় মাছচাষ প্রযুক্তি, এমনটাই দাবি মৎস্য বিজ্ঞানীদের। আমাদের দেশে নদীতে বাঁধ দিয়ে ছোট, বড় অনেক জলাশয় তৈরি করা হয়েছে। যাদের রিজার্ভার বলে। রিজার্ভারে মাছ উৎপাদনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সেখানে খাঁচায় মাছচাষ করা সম্ভব। খাঁচায় মাছচাষ দেশের অভ্যন্তরীণ মাছ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন মৎস্য বিজ্ঞানীরা।