নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: আরামবাগে বিজেপির অন্তর্দ্বন্দ্ব চরম আকার নিয়েছে। নির্বাচনে পরাজয়ের পর দলের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন। বাবুসোনা রায়, কার্তিক মালের মতো নেতারা পরাজয়ের জন্য বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতির দিকে আঙুল তুলেছেন। একে অপরের লড়াই এবার আদালত পর্যন্ত গড়াল। সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সভাপতি বিমান ঘোষ দলীয় নেতা কার্তিক মালের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য এক কোটি টাকার মানহানির মামলার হুঁশিয়ারি করেছেন। কার্তিকবাবু নিঃশর্ত ক্ষমা না চাইলে এই মামলা করা হবে। একইসঙ্গে দলের তরফে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে জয়ের বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন বিজেপির নেতা কর্মীরা। কিন্তু, খুব সামান্য ভোটের ব্যবধানে এই কেন্দ্রে গেরুয়া শিবির পরাজিত হয়। ফল প্রকাশের পর থেকে দলের নেতা-কর্মীরা একে অপরকে কাঠগড়ায় তুলছেন। দলের ডামি প্রার্থী রঘু মল্লিক ও ভাস্কর মালিক প্রায় ২০ হাজার ভোট পান। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই সংগঠনের অন্দরে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দলের প্রথমসারির নেতা-কর্মীরা ডামি প্রার্থী দাঁড় করানোর জন্য প্রকাশ্যে মুখ খুলতে শুরু করেন। বিজেপির ডামি প্রার্থী রঘুবাবু দলের প্রার্থী অরূপকান্তি দিগারের পরাজয়ের পর নিজের আফশোসের কথা সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছিলেন। এরপরেই দলের ভিতর বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, বিজেপির বিধায়করা দলের অন্দরে এনিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সাংগঠনিক জেলা বিজেপির মিডিয়া সেলের কনভেনর বাবুসোনা রায় পরাজয়ের জন্য জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন। সংগঠনের প্রথম সারির নেতাদের ভোট পরিচালনার কাজে দূরে রাখা হয় বলে গুরুতর অভিযোগ করেন। পুর মণ্ডলের বিজেপির সহ সভাপতি কার্তিক মাল এক সপ্তাহ আগে সংবাদ মাধ্যমে অভিযোগ করেন, ‘বিমান ঘোষ ডামি প্রার্থী দিয়ে প্ল্যান করে বিজেপিকে হারিয়েছেন।’ এছাড়াও তিনি বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন।
কয়েকদিন চুপ থাকার পর আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার বিজেপি সভাপতি বিমানবাবু শনিবার বিকেলে শহরের দৌলতপুর বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তিনি বলেন, ‘আরামবাগ শহরের এক ব্যক্তি ব্যক্তিগত আক্রোশের জন্য সংবাদ মাধ্যমে আমার সম্বন্ধে বেশকিছু বাজে মন্তব্য করেছিলেন। যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল নেই। পিছনে আরও কিছু ব্যক্তি তাঁকে সহযোগিতা করে দলের ভাবমূর্তি নষ্টের চেষ্টা হয়। যেহেতু আমাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছেন, তাঁর বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়েছে। আমার বিরুদ্ধে বলা বক্তব্যের কী প্রমাণ আছে, তথ্য আছে, তা দেখাতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আইনি লড়াই চলবে। দলীয়স্তরেও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ওই নেতার নাম বিমানবাবু মুখে না বললেও লিগ্যাল নোটিসে কার্তিক মালের নাম রয়েছে। যদিও এনিয়ে কার্তিকবাবু বলেন, ‘আইনি নোটিস এখনও হাতে পাইনি। নোটিস হাতে আসার পর বক্তব্য রাখব।’