কর্মপ্রার্থীদের কোনও চুক্তিবদ্ধ কাজে যুক্ত হবার যোগ আছে। ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। বিবাহের যোগাযোগ ... বিশদ
রসগোল্লা নিয়ে রাজ্যের গর্বের সীমা নেই। দু’বছর আগে বাংলার ওই মিষ্টিতে জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন বা জিআই তকমা পেয়েছিল রাজ্য সরকার। রসগোল্লা নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি গোটা প্রশাসনিক প্রক্রিয়াটি উতরে দিয়েছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দপ্তর। জিআইয়ের জন্য আবেদন করেছিল খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তর। কিন্তু সহজে সেই স্বীকৃতি আসেনি। প্রতিবেশী রাজ্য ওড়িশা মাঝপথে বাগড়া দিয়ে বসে। তাদের দাবি ছিল, জগন্নাথদেবকে যে মিষ্টি বহু শতাব্দী ধরে দেওয়া হচ্ছে, তা কোনওভাবেই বাংলার নিজস্ব সম্পদ নয়। রসগোল্লার জন্ম ওড়িশায়। কিন্তু তাদের আইনি লড়াই ধোপে টেকেনি। ২০১৭ সালের ১৪ নভেম্বর জিআই পায় বাংলার রসগোল্লা। কিন্তু তাতেও হাল ছাড়েনি ওড়িশা। তারাও জিআইয়ের দাবি জানায় পেটেন্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। তাদের জিআই মেলে ‘ওড়িশারো রসগোলা’য়। তারপরেও বাংলার রসগোল্লার স্বীকৃতি বাতিলের জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়া হয় ওড়িশার তরফে। কিন্তু সম্প্রতি সেই আশাতেও জল ঢেলেছে কর্তৃপক্ষ। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রসগোল্লা বাংলারই।
যে রসগোল্লা নিয়ে এত কাণ্ড, তার মান ধরে রাখতে এবার নিজেই উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, দুধ, আইসক্রিম সহ অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্যের পাশাপাশি মাদার ডেয়ারির তরফে আমরা আগে প্যাঁড়া এনেছিলাম। বাজারে তার চাহিদা ভালোই। পরবর্তীকালে ছোট্ট প্যাকে আসে গোবিন্দভোগ চালের পায়েস। তাও সুনাম অর্জন করে। এবার আমরা রসগোল্লা ও পান্তুয়া আনছি। প্রাথমিকভাবে কিছু উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু তার গুণমান ও স্বাদ যাতে আরও ভালো করা যায়, তার জন্য গবেষণা চলছে। আমরা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে এই বিষয়ে পাশে পেয়েছি। উৎকৃষ্ট মানের মিষ্টি উৎপাদন শুরু হলেই আমরা তা প্যাকেটে পুরে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে নিয়ে আসব। আশা করছি, সেই স্বাদ শীঘ্র চেখে দেখতে পারবেন মিষ্টিপ্রেমীরা।
মাদার ডেয়ারির কর্তারা জানিয়েছেন, ডানকুনির কারখানায় তাঁরা ওই মিষ্টিগুলি উৎপাদন করবেন। ইতিমধ্যেই তার জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন বসে গিয়েছে। রসগোল্লা ও পান্তুয়া বাজারে আসবে দু’টি, পাঁচটি ও ১০টির প্যাকে। প্রতিটি মিষ্টির দাম ১০ টাকা। কিন্তু বাজারে শ’য়ে শ’য়ে দোকান আছে, যেখানে পয়সা ফেললেই রসগোল্লা ও পান্তুয়া মেলে। এমনকী একাধিক সংস্থা এখন টিনের কৌটোয় রসগোল্লা বিক্রি করে। তা পৌঁছে যায় রাজ্য এমনকী দেশের বাইরেও। তাহলে সরকারি রসগোল্লায় কী এমন নতুনত্ব থাকবে, যা কিনতে উৎসাহী হবেন মানুষ? কর্তারা বলছেন, প্রথমত, বৈজ্ঞানিক উপায়ে তৈরি মিষ্টিগুলি একেবারে নিরাপদ। যেহেতু তা অনেক গবেষণার ফলশ্রুতি, তাই তার স্বাদ হবে উৎকৃষ্ট। দামও সবার আয়ত্তের মধ্যে। তাছাড়া ১০ টাকায় বাজার চলতি যে মিষ্টি পাওয়া যায়, তার থেকে এই রসগোল্লা ও পান্তুয়ার বহর আরও বড় হবে, দাবি দপ্তরের কর্তাদের। তাই সরকারি মিষ্টিতে ক্রেতারা তাঁদের চাহিদার থেকেও বেশি কিছু পাবেন, এমনটাই দাবি তাঁদের। আইসক্রিম সহ মাদার ডেয়ারির পণ্যগুলির যেভাবে বিপণন করে রাজ্য, সেভাবেই ওই রসগোল্লা ও পান্তুয়া বিক্রি হবে, জানিয়েছে রাজ্য। আপাতত বাংলার স্বাদ চেনাতে ভিয়েনঘরে ছানা পাকাতে ব্যস্ত তারা।