সন্তানের দাম্পত্য অশান্তিতে মানসিক চিন্তা। প্রেম-প্রণয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ ও মনঃকষ্ট। ব্যবসার অগ্রগতি। ... বিশদ
তাঁত শ্রমিক পরিবারে ছেলে দীপঙ্কর নিজের পায়ে দাঁড়াতে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছে। স্থানীয় স্বরূপগঞ্জ ভাগীরথী বিদ্যাপীঠের মাঠে নিয়মিত প্র্যাকটিস করে সে। পাশাপাশি লেখাপড়াও চলছে সমান তালে। নবদ্বীপের স্বরূপগঞ্জ পঞ্চায়েতের গাদিগাছা কাঁঠালতলায় দীপঙ্করের বাড়ি। বাড়ি বলতে একটি মাত্র টিনের চালা ঘর। তারই মধ্যে খুবই কষ্টে পড়াশোনা করে দীপঙ্কর। বাবা দীপাংশু দেবনাথ একজন পাওয়ারলুম শ্রমিক। রোজগার সামান্যই। সংসারের অভাব দূর করতে দীপঙ্করের মা সুপ্রিয়াদেবী বাড়িতে চরকায় সুতো কাটেন। দীপঙ্করের ঠাকুরমা কলকাতায় থেকে রান্নার কাজ করেন। ঠাকুরদা ৭৪ বছরের বিজয়হরি দেবনাথ অসুস্থ, কর্মক্ষমতাহীন। স্বামী-স্ত্রীর স্বল্প রোজগারে কোনও রকমে চলে সংসার। জানা গিয়েছে, অনূর্ধ্ব ১৯ অল ইন্ডিয়া ন্যাশনাল ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ হরিয়ানায় হতে চলেছে। সম্প্রতি দীঘায় বাংলা দলের চূড়ান্ত নির্বাচনের জন্য ফুটবল ট্রায়াল হয়েছিল। এখানে বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া, মালদা, উত্তর দিনাজপুর, জলপাইগুড়ি সহ বিভিন্ন জেলার ফুটবলাররা অংশ নিয়েছিলেন। নদীয়া থেকে কেবলমাত্র দীপঙ্করই নির্বাচিত হয়েছে।
স্থানীয় ভাগীরথী বিদ্যাপীঠের ছাত্র দীপঙ্কর জানায়, প্রতিদিন সকালে আমি অনুশীলন করি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আমার প্রিয় খেলোয়াড়। ওকে অনুসরণ করি। ওঁর ছবি আমার মোবাইলে আছে। নদীয়া থেকে আমরা ৮ জন গিয়েছিলাম দীঘাতে ফাইনাল ট্রায়ালে। সেখানে আমি একাই সুযোগ পেয়েছি। আমরা খুব গরিব। আমি চাই একজন বড় ফুটবলার হয়ে আমার মতো অন্য দরিদ্র খেলোয়াড় এবং আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে।
দীপঙ্করের বাবা দীপাংশু দেবনাথ বলেন, আমার ছেলে ফুটবল পাগল। আমি একজন তাঁত শ্রমিকো সামান্য রোজগার, তাতেই কোনওরকমে সংসার চালাই। ছেলের খেলাধুলার খরচ জোগাতে পারি না। কোনও সাহায্য পেলে উপকার হতো। ওর খেলার সরঞ্জামও কিনে দিতে পারি না।
দীপঙ্করের মা সুপ্রিয়া বলেন, আমি সংসার সামলে বাড়িতে চরকায় সুতো কাটি। প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ টাকা রোজগার হয়। ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি, ও যেন ভালো ফুটবলার হতে পারে। কোচ রমেন দেবনাথ বলেন, দীপঙ্কর আট বছর বয়স থেকে অলিম্পিক ক্লাব ফুটবল অ্যাকাডেমিতে নিয়মিত অনুশীলন করছে। খেলাধুলার প্রতি দীপঙ্করের আগ্রহ দেখে মনে হয় আগামীদিনে ও একজন বড় খেলোয়াড় হবে। দীপঙ্করকে নিয়ে শুধু তার পরিবার বা কোচ নয়, স্বপ্ন দেখছে গোটা নবদ্বীপ। বাবা-মায়ের সঙ্গে দীপঙ্কর দেবনাথ।