কর্মপ্রার্থীদের কোনও সুখবর আসতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। গুপ্ত শত্রু থেকে সাবধান। নতুন কোনও প্রকল্পের ... বিশদ
করোনা ভাইরাসের জেরে দীর্ঘদিন স্কুলের পঠনপাঠন বন্ধ রয়েছে। পডুয়াদের স্কুলে আসা নিষেধ। কিন্তু, বাজিতপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক নিয়মিত বোলপুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে স্কুলে আসছেন। সেই সময় তাঁর ভাবনায় আসে মাছ চাষের। সেইমতো তিনি বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ চাষের প্রশিক্ষণ নেন। এরপর নিজেই গাঁটের টাকা খরচ করে বায়োফ্লেক পদ্ধতির চেয়ে কম খরচে স্কুলে মাছ চাষের পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন সহকর্মী মেহতাব আলি।
স্কুল ক্যাম্পাসেই কৃত্রিম পুকুর তৈরি করে ৪০০০ মাছের চারা ফেলেন। এখানে বায়োফ্লকের মতো ২৪ঘণ্টা অক্সিজেন মেশিন চালানোর প্রয়োজন নেই। ফলে, সবসময় বিদ্যুতেরও প্রয়োজন নেই। পাঁচঘণ্টা অন্তর আধঘণ্টা অক্সিজেন মেশিন চালালেই হবে। প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত দাস বলেন, প্রথম ১৫দিন মাছের খাবার হিসেবে বিস্কুট সহ অন্যান্য খাবার দেওয়া হয়েছিল। মাছের মল থেকে যে অ্যামোনিয়া মিশ্রিত বর্জ্য জমছে, সেটা দু’দিন অন্তর বের করে একটা জায়গায় জমা করা হচ্ছে এবং সেই অ্যামোনিয়ার জল ছোট পাইপের মাধ্যমে ১৫০ স্কোয়ার ফুট মাপের জমিতে ফেলা হচ্ছে। সেখানে বিশেষ ধরনের অ্যাজোলা উদ্ভিদ চাষ হচ্ছে। এই অ্যাজোলাই আবার মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এবং অ্যাজোলা উদ্ভিদের জলাধার থেকে অতিরিক্ত জল সব্জি চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে। এই মাছগুলি নির্দিষ্ট সাইজের হওয়ার পর পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে ছাত্রছাত্রীদের পাতে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে অনেকগুলি সুবিধা রয়েছে। যা বায়োফ্লক পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। জেলার মধ্যে এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ প্রথম হচ্ছে। পরবর্তীকালে সরকারি কোনও আর্থিক সহযোগিতা মিললে বড় আকারের করার পরিকল্পনা রয়েছে।
রাজ্যের স্কুলগুলিতে মিডডে মিলে মাথাপিছু যা বরাদ্দ হয় তাতে আনাজ, ডাল, সয়াবিন, ডিম, তেল সহ মুদিখানার সামগ্রী এবং গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হয় স্কুলগুলিকে। তাই বছর সাতেক আগে স্কুল ক্যাম্পাসে বেশকিছুটা জায়গাজুড়ে জৈব পদ্ধতিতে আনাজ চাষ শুরু করেছিলেন প্রধান শিক্ষক। উৎপাদিত আনাজে সপ্তাহের দু’দিন মিডডে মিল চলে যায় বলে স্কুল সূত্রে খবর।
২০১৮ সালে শিক্ষারত্ন সম্মান পাওয়া এই শিক্ষক বলেন, আনাজ চাষ করে মিডডে মিলে সরকারি বরাদ্দের উপর নির্ভরতা আমরা অনেকটাই কমাতে পেরেছি। এবার মাছ উৎপাদন হলে মিডডে মিলে বাড়তি মাত্রা যোগ হবে। তাছাড়া শুধু পড়ুয়াদের পুষ্টি জোগাতে বা খরচ সাশ্রয়ের জন্যই নয়, গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির সামনে উঠোন থাকে। এই পদ্ধতিতে মাছ চাষ করলে সেই পরিবারের আয়ের উৎস হবে। একইভাবে বহু বেকার যুবক-যুবতী আয়ের নতুন দিশা পাবে।