কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
শনিবার সকাল থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, হাওড়া ও হুগলি সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক পুলিস বাহিনী ময়নায় আসে। পেটুয়া মোড়ে ময়না আদর্শ শিক্ষায়তনে বাহিনীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টা নাগদ ময়না আদর্শ শিক্ষায়তনের মাঠে প্রায় শ’ দু’য়েক বাহিনীর সামনে অভিযান নিয়ে ব্রিফিং সেরে নেন অতিরিক্ত পুলিস সুপার(হেডকোয়ার্টার) সৈয়দ মহম্মদ মামদোদুল হাসান এবং তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস। বিকেল ৪টে নাগাদ বাহিনী সাঁড়াশি আক্রমণ করার লক্ষ্যে পেটুয়া মোড় থেকে দু’দিকে গোবরাদন এবং তেওয়ারি মোড় হয়ে বাকচায় ঢোকে। এসডিপিও গোবরাদন হয়ে বাহিনীকে নিয়ে বাকচার দিকে যান। অন্যদিকে ময়না থানার ওসি মাহিউল ইসলাম তেওয়ারি মোড়ের দিকে বাহিনীকে লিড করেন। মারুতি ভ্যান, মেশিন ভ্যান, পুলিসের জিপ এবং বাইকে চেপে বাহিনী দু’দিক দিয়ে বাকচার দিকে এগয়। বাকচা পশ্চিম সংসদের নিমতলা এলাকা পেরনোর পরই কাটা রাস্তার সম্মুখীন হয় বাহিনী। সেখানে নেমেই পুলিস মাইক্রোফোনে জানায়, এলাকাকে উপদ্রুত করে রাখা লোকজন এলাকাছাড়া করা হবে। সেইকাজে সাধারণ মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন।
পেটুয়া মোড় থেকে শ্রীধরপুর হয়ে খিদিরপুর যাওয়ার রাস্তা নিমতলার কাছে কাটা রাস্তার মাটি, পাথর কেটে পুলিসের গাড়ি এগয়। রাস্তার দু’ধারে ছিল উৎসুক মানুষজনের ভিড়। বিকেল ৪টে ৪০মিনিট নাগাদ খিদিরপুর প্রাইমারি স্কুলের কাছে গাড়ি থামিয়ে পুলিস নামে। তখন ঝিমঝিম করে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাহিনী কেলেঘাই নদীর রাস্তা বরাবর পায়ে হেঁটে গোড়ামহাল গ্রামের দিকে এগয়। বরুণা গ্রাম এই মুহূর্তে একেবারে পুরুষশূন্য। মূলত গোড়ামহালকে টার্গেট করেই এদিন বাহিনী এলাকায় ঢোকে। সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বাহিনীকে দেখেই শঙ্খধ্বনি দেন গ্রামের মহিলারা। সতর্ক হয়ে পড়ে বাহিনী। অফিসাররা পজিশন নিয়ে নেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর সাড়ে ৬টা নাগাদ গোড়ামহালে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালানোর সময় কিছুটা দূরে বোমা ফাটানো হয়।
এদিন স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রশস্ত্র, রাবার বুলেট এবং টিয়ার গ্যাস সমেত পুলিসের টিম গ্রামে ভিতর অভিযানে নামে। গোড়ামহাল গ্রামে এখনও দুষ্কৃতীরা লুকিয়ে রয়েছে বলে সন্দেহ পুলিসের। সেই থেকেই অভিযানের টার্গেট ছিল ওই গ্রাম। গ্রামে পুলিস ঢুকতেই মহিলা কর্মীরা শঙ্খধ্বনি দেন। তারপরই দূর থেকে বোমা ফাটানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ বাহিনী সার্চ লাইট চেয়ে পাঠায়। থানা থেকে লাইট গোড়ামহালে নিয়ে যাওয়া হয়। গত ১৪অক্টোবর আঁধারিয়া গ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বসুদেব খুন হন। সেই খুনের ঘটনায় ২১জনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়। অধিকাংশের বাড়ি বরুণা এবং গোড়ামহাল গ্রামে। এই মুহূর্তে বরুণা গ্রাম ফাঁকা হলেও গোড়ামহালকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। খুনের ঘটনায় অভিযুক্তরা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য বাগচার সীমানা লাগোয়া ভগবানপুর এবং সবং থানা এলাকায় অতিরিক্ত বাহিনী পজিশন নিয়েছিল। গোড়ামহাল গ্রামেই বোমাবাজি হয়। রাত পর্যন্ত অভিযান চলে। দীপাবলির আগেই বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে দুষ্কৃতীদের বিচ্ছিন্ন করতে চাইছে পুলিস। তাছাড়া গত কয়েকদিনে বাকচা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের বহু নেতা-কর্মী ঘরছাড়া। এদিন বাকচার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কোথাও তৃণমূল কংগ্রেসের একটি পতাকা দেখতে পাওয়া যায়নি। ঘরছাড়া তৃণমূল কর্মীরাও চাইছেন, দীপাবলির আগে ঘরে ফেরানোর ব্যবস্থা করুক প্রশাসন।