কাজকর্মে জটিলতা মুক্তি ও কর্মোন্নতি। অপচয়মূলক বা অপ্রত্যাশিত ব্যয় বাড়বে। পারিবারিক ক্ষেত্রে সুসম্পর্ক। ... বিশদ
ঘটনাস্থল কাঁথির রূপশ্রী বাইপাসের ধার। অনেক জোরাজুরি সত্ত্বেও নাম বলতে চাইলেন না। সিগারেটটা ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে দিতে দিতে বললেন, ‘কাঁথি ছোট্ট শহর। নাম বললে সহজেই চিহ্নিত হয়ে যাব। ঝুট ঝামেলা কে আর চায় বলুন?’
কাঁথির লোকসভা আসনটা তৃণমূল ও বিজেপির কাছে প্রেস্টিজ ফাইট। প্রায় দু’দশক এখানে তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ ছিল অধিকারী পরিবারের হাতে। শুধু পার্টির নয়, গোটা পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন এই পরিবারের সদস্যদের কথায় চলত। আর চলবে নাই বা কেন? জেলার দু’টি লোকসভা আসন। দু’টিই ছিল এই পরিবারের কব্জায়। জেলায় দু’টি উন্নয়ন পর্ষদ। দু’টিই অধিকারীদের হাতে। তাছাড়াও মন্ত্রী, পুরসভার চেয়ারম্যান, সবই পরিবারের অথবা তল্পিবাহকদের দখলে। গোটা অধিকারী পরিবারটাই এখন জার্সি বদলে বিজেপি।
নরেন্দ্র মোদি উঠতে বসতে পরিবারতন্ত্র নিয়ে কটাক্ষ করেন। অথচ তাঁর দল একই পরিবার থেকে একজনকে বিধানসভায় পাঠিয়েছে, আর একজনকে লোকসভার টিকিট দিয়েছে। কারণ অধিকারী পরিবারের কাছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব আত্মসমর্পণ করেছে। তার জন্য দলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ আছে। কিন্তু কেউ মুখে বলতে সাহস পায় না। কারণ তৃণমূলের মতো বঙ্গ বিজেপিতেও অধিকারী পরিবারের ‘নিরঙ্কুশ প্রাধান্য’।
তবে তৃণমূল এই কেন্দ্রে যাঁকে প্রার্থী করেছে, তিনি জেলা রাজনীতিতে ‘টাফ ম্যান’ বলে পরিচিত। উত্তম বারিকের জন্যই কাঁথি আসনের লড়াই জমে গিয়েছে। অধিকারী পরিবারের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের দম এই জেলার যে ক’জন তৃণমূল নেতার আছে, উত্তমবাবু তাঁদের অন্যতম। চাপের সামনে মাথা নোয়ান না। আয়কর নোটিস পাওয়ার পরেও তাঁর বুক চিতিয়ে লড়াই সেটাই প্রমাণ করেছে।
পাণিপারুল মোড়ে চণ্ডী মন্দিরের কাছে চায়ের দোকানে যুবকদের ভিড়। বেশিরভাগই বিজেপির সমর্থক। দু’-একজন তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। তবে সকলেই খুব ভালো বন্ধু। গেরুয়াপন্থী যুবকদের দাবি, অধিকারী পরিবার বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় মরা গাঙে বান এসেছে। তৃণমূলপন্থীদের পাল্টা দাবি, বানটা এসেছিল একুশে। তখন অনেকেই ভেবেছিল, বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। জেলার ছেলে মুখ্যমন্ত্রী হবে। তাই আবেগ কাজ করেছিল। ভোটও পেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এখন আর সেটা নেই। এবার অধিকারী পরিবার টের পাবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ছাড়া লড়াইটা সত্যিই কতটা কঠিন! এ তো গেল দল। আর সাধারণ মানুষ? রূপশ্রী বাইপাসের ধারে ওই ভদ্রলোক কিন্তু বলছিলেন, ‘এবার মানুষকেই ঠিক করতে হবে, তারা জমিদারির পক্ষে, না গণতন্ত্রের।’