নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা এবং বিএনএ: ফের করোনার বলি হলেন আরও এক রাজ্যবাসী। ফলে পশ্চিমবঙ্গে এই রোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল দুই। রবিবার রাত দু’টো নাগাদ কোভিড ১৯ সংক্রমণে মারা যান কালিম্পং-এর বাসিন্দা সুনীতা দেবী সিং (৪৪)। ২৬ মার্চ জ্বর এবং তীব্র শ্বাসকষ্টের জন্য তাঁকে সেখানে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতির জন্য ভেন্টিলেশনে রাখতে হয় রাতে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। কিছুদিন আগে মেয়ের চিকিৎসার জন্য চেন্নাই গিয়েছিলেন তিনি। দমদমের সেই প্রৌঢ়ের মতো এদিন তাঁর মৃতদেহ দাহ করা নিয়েও বিস্তর ঝামেলা হয়েছে। মৃতের সংস্পর্শে আসা প্রায় ৭০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, ফের নতুন করে দু’জনের দেহে এই রোগ ধরা পড়েছে। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২৩। তবে আরও একটি সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে একজনের বাড়ি অভয় মিত্র লেনে। বয়স ৭৭। পেশায় ব্যবসায়ী। তাঁকে ই এম বাইপাসের অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ৫৯ বছর বয়সি আর এক প্রৌঢ়ের দেহে এদিন করোনার সংক্রমণ ধরা পড়েছে। দিনভর করোনা নিয়ে উদ্বেগের খবরের মধ্যে কিছুটা আশার কথা হল, তিন সংক্রামিতের দ্বিতীয়বার পরীক্ষার প্রাথমিক রিপোর্টে করোনামুক্ত হওয়ার খবর মিলেছে। তঁারা হলেন আমলা পুত্র, স্কটল্যান্ডের তরুণী এবং বালিগঞ্জের সেই ব্যবসায়ী। তবে চূড়ান্ত রিপোর্টের অপেক্ষা চলছে।
এদিকে আগে করোনা পজিটিভ হওয়া রোগীদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা বেশ আশঙ্কাজনক। একজন পিয়ারলেসে ভর্তি সেই বৃদ্ধ। অন্যজন সল্টলেকের আমরি হাসপাতালে ভর্তি শেওড়াফুলির এক বাসিন্দা। দু’জনেই ভেন্টিলেশনে। দু’জনের ক্ষেত্রেই শ্বাসকষ্টের তীব্র সমস্যা এআরডিএস হয়েছে। পিয়ারলেসের বৃদ্ধের ইউরিন কম হওয়ায় চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন। এছাড়া অ্যাপ্ল্যাস্টিক অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত এক ৫৫ বছরের মহিলার মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এদিন উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বনগাঁর বাসিন্দা শিখাদেবী সম্প্রতি চিকিৎসার জন্য চেন্নাই ও ভেলোর গিয়েছিলেন। ফিরে শুকনো কাশি অনবরত হওয়ায় ডাক্তার দেখান। তঁার রিপোর্ট অবশ্য নেগেটিভ এসেছে। তবে বরানগরের আক্রান্ত ব্যক্তিকে এদিন অ্যাপোলোয় আনা হয়েছে। তঁার ভাইও পিয়ারলেসে ভর্তি। তাঁর নমুনা কিন্তু নেগেটিভ এসেছে। ফলে দাদা কীভাবে সংক্রামিত হয়েছেন, সেই প্রশ্ন কিন্তু এখন উঠতে শুরু করেছে। উদ্বেগ বেড়েছে স্বাস্থ্যকর্তাদের। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। শেওড়াফুলি, বরানগর সহ নতুন করে করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে শয়ে শয়ে মানুষ আসায় আতঙ্ক বেড়েছে। শেওড়াফুলির আক্রান্ত চন্দননগরের যে নার্সিংহোমে ভর্তি হন, সেখানে রোগী ভর্তি থাকাকালীন সময়ে অপারেশন করায় এক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ সহ চার চিকিৎসককে সিঙ্গুরে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে আলিপুরের কমান্ড হাসপাতালে ওই করোনা আক্রান্ত চিকিৎসকের সংস্পর্শে আসায় ১০-১২ জন সেনাকর্মী এবং অফিসারের শারীরিক অবস্থার দিকে লক্ষ্য রাখছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। তিনি দিল্লি থেকে যে বিমানে ফেরেন, নজর আছে তাতেও।