রাহুল চক্রবর্তী, কলকাতা: মঙ্গলবার বেলা সওয়া এগারোটা। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের মাঠকলের কাছে গাছের ডালে পড়ছে করাতের ঘা। রাস্তার ধারে লাল ফিতে দিয়ে চালকদের সতর্ক করা হচ্ছে— সাবধানে গাড়ি চালান। মাঠকল থেকে সুকান্তপল্লির দিকে যত এগবেন, চোখে পড়বে গাছের গুঁড়ি, ভাঙা ডাল। সবগুলিই নিপুণভাবে কাটা হয়েছে করাত দিয়ে। এক্সপ্রেসওয়ের ধারে সেসব স্তূপাকৃত হয়ে পড়ে রয়েছে। কাটা গাছের সংখ্যা নেহাত কম নয়। হাতে গুনে শেষ করা যাবে না। রাস্তা সম্প্রসারণের প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরাই জানালেন, রাস্তা চওড়া করতে গেলে কিছু গাছ তো কাটতেই হবে। সব মিলিয়ে শ’খানেক গাছ আপাতত কাটা হয়েছে ওই অঞ্চলে। তাঁর দেওয়া তথ্য বলছে, কল্যাণী ও বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে মিলিয়ে গাছ কাটা হয়েছে পাঁচশোর বেশি। 
কল্যাণী ও বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে সংযুক্ত করার কাজ শুরু হয়েছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এই কাজ করছে। এখন কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে নিমতায় ২০১ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত এসে থমকে রয়েছে। এই রাস্তাকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত করতে গিয়ে বেশ কিছু বাধার সম্মুখীন হতে হয়। মাঝে বেশ কিছু দোকান ও বাড়ি ছিল। যেগুলি সরানো যাচ্ছিল না। ফলে দুই এক্সপ্রেসওয়ে সংযুক্তিকরণ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ধীরে ধীরে কাটে আইনি জটিলতা। তবে পুরোটা না কাটলেও অধিকাংশ বাধাই দূর হয়েছে। তার সূত্র ধরেই দু’টি এক্সপ্রেসওয়ের সংযুক্তিকরণ ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এই কাজ করতে গিয়েই কাটতে হয়েছে প্রচুর গাছ। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপর প্রকল্পের হোর্ডিংয়ের নীচে সারি বেঁধে রাখা হয়েছে গাছের গুঁড়ি, ডালপালা। যে অংশে গাছ নিধন চলছে, সেই সব এলাকা মূলত উত্তর ও দক্ষিণ দমদম পুরসভার মধ্যে। পরিকাঠানো গড়তে গিয়ে যে সব গাছ বলি দেওয়া হল, সেই তালিকায় আম, কুল, নারকেল, জামরুল, নিমগাছ যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে মেহগনি, অর্জুন, শিরিশ, কাঠবাদাম, শিমূল, কৃষ্ণচূড়া, বকুল, বাবলা গাছ। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত বেসরকারি সংস্থার আধিকারিক আশুতোষ কুমার বলেন, ‘বনদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে, তাদের অনুমতি নিয়েই গাছ কাটা হচ্ছে। কল্যাণী ও বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে মিলিয়ে পুরো প্রকল্পে প্রায় ৭০০টি গাছ কাটা হচ্ছে। বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপরই বেশি গাছ কাটতে হচ্ছে।’ উন্নয়নের কারণে গাছ কাটা হলেও, নতুন গাছ বপন করা হবে বলে দাবি করেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপর এখনও পর্যন্ত শ’তিনেক গাছ কাটা হয়েছে।
কল্যাণী ও বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের সংযুক্তিকরণ ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে। এই কাজ শেষ হতে আরও বছর দেড়েক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আধিকারিকরা। জানা গিয়েছে, বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ের উপর ব্রিজ তৈরি হবে। তার ফলে বিমানবন্দরের দিক থেকে সরাসরি ব্রিজের উপর দিয়ে ডানলপের দিকে চলে যাওয়া যাবে। একইভাবে আসা যাবে দক্ষিণেশ্বর থেকে এয়ারপোর্টেও। আবার বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে এসে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে এসেও ওঠা যাবে। এর ফলে কলকাতা, শহরতলি ও জেলার মধ্যে সড়কপথে যোগাযোগ আরও বাড়বে। জেলা থেকে ওই দুই এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সাধারণ মানুষ কম সময়ে কলকাতায় আসতে পারবেন। এখন কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে মাঝেরহাটি মোড়ে এসে ঘুরপথে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের।