যে কোনও ব্যবসার বৃদ্ধি ও অর্থকড়ি আয় বৃদ্ধি। ধর্মাচরণে মনযোগ বৃদ্ধি। বন্ধুর শত্রুতায় ক্ষতি। ... বিশদ
যোগমায়া দেবীর বাড়ির দশাও খানিকটা একইরকম। তাঁর অনুমতি ছাড়া বাড়িতে কিচ্ছু হয় না। জানলার একটা পর্দা নড়ে না, এমনকী একটা মশাও রাতে মশারির ভিতর ঢুকতে পারে না! তাঁর স্বামী কমলেশবাবু আর একমাত্র কন্যা প্রিয়াঞ্জলি যে কোনও কাজের আগে দশবার তাঁর অনুমতি নেন। যার যা আর্জিই থাকুক শেষমেশ অবিশ্যি তাঁর কথাটাই খাটে। সেটা ইস্কুলে হোক কী বাড়িতে। যেমন প্রিয়াঞ্জলিকে অনেক আদরে মানুষ করেছেন যোগমায়া; ছোটবেলা থেকে গান, নাচ, আবৃত্তি সবকিছু শিখিয়েছেন। কিন্তু ক্লাস টেনের বোর্ড পরীক্ষার দু-বছর আগে সব বন্ধ করে দিয়েছিলেন। প্রিয়াঞ্জলির কোনও ইচ্ছেকে গুরুত্ব দেননি, চোখ পাকিয়ে বলেছিলেন, ‘পিউ, অন্যায় আবদার করবে না। কো-কারিকুলার অ্যাকটিভিটিসের চেয়ে এখন পড়াশোনা অনেক জরুরি। এখন থেকে বোর্ড এগজামকে পাখির চোখ করে রাখ, অন্য কোনওরকমের ডিসট্র্যাকশন চলবে না।’
প্রিয়াঞ্জলিও বাধ্য মেয়ের মতো বোর্ড পরীক্ষাকে পাখির চোখ করে রেখেছিল। প্রথমে দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা, তারপরে দ্বাদশের বোর্ড পরীক্ষায় নব্বই শতাংশের বেশি নম্বর নিয়ে পাশ করে কলেজে ফিজিক্স অনার্সে ভর্তি হয়ে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিল। এই পর্যন্ত তার অ্যাকাডেমিক কেরিয়ারের সমস্ত সিদ্ধান্ত যোগমায়া দেবীই নিয়েছেন। সেখানে কমলেশবাবুর কোনও ভূমিকাই ছিল না।
অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিজিক্সের স্নাতকোত্তরেও প্রিয়াঞ্জলি ফার্স্ট ক্লাস পাওয়ার পর যোগমায়া বললেন, ‘এবার বিদেশের ইউনিভার্সিটিগুলোতে পিএইচডি প্রোগ্রামে চান্স পেতে হবে। জিআরই এবং আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য তৈরি হও।’
প্রিয়াঞ্জলি একবার মিউমিউ করে বলার চেষ্টা করেছিল, ‘মা...ইয়ে মানে, আ-আমি ঠিক...পিএইচডি মেটেরিয়াল নই...,’ কিন্তু যোগমায়া তাকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ডক্টরেট তোমাকে হতেই হবে।
কোন কোন মার্কিন ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করতে হবে আমি বলে দেব। এখন স্কুলে যাচ্ছি, রাতে ফিরে এসে আমি এটা নিয়ে তোমার সঙ্গে বসব।’
সেদিন ইস্কুলে গিয়ে একটা কাণ্ড ঘটল।
মহারানি স্বর্ণকুমারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের হীরক জয়ন্তী বর্ষ উদযাপন নিয়ে স্কুল কমিটির একটা মিটিং ছিল। সেই মিটিংয়ে কমিটির চেয়ারম্যান নরেশ সাহাকে একেবারে ধুয়ে দিলেন যোগমায়া। ভদ্রলোক হীরক জয়ন্তীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলা ব্যান্ড ‘নগর রাখাল’-কে আনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। যোগমায়া ক্লাস ফাইভের বাচ্চাকে বকার ভঙ্গিতে নরেশবাবুকে ধমকে দিলেন, ‘এসব কী বলছেন নরেশবাবু! স্কুলের ডায়মন্ড জুবিলিতে আপনি স্কুলের মধ্যে অপসংস্কৃতি ঢুকিয়ে ছেলেমেয়েগুলোকে উচ্ছন্নে পাঠাবেন! ওইসব ব্যান্ড ফ্যান্ডের গান স্কুলে চলবে না। গানের নামে কতগুলো ইয়াং ছেলে মেয়েদের স্কুলে এসে গাঁকগাঁক করে চেঁচাবে, শিক্ষাঙ্গনকে কলুষিত করবে, এ আমি কিছুতেই হতে দেব না...ছি ছি, আপনার কোনও আক্কেল নেই!’
যোগমায়া দেবীর সেই ঝোড়ো আক্রমণের মুখে নরেশবাবুসহ কমিটি মেম্বারদের বক্তব্য খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছিল। সেই ঘটনার পর ইস্কুলের মেয়েরা আড়ালে বলাবলি করেছিল, ‘কেঁদো বাঘ রাখাল বালকদের খেয়ে নিয়েছে!’
দিনকয়েক পরে হেড মিস্ট্রেসের খাস আর্দালি নমিতা যোগমায়া দেবীর অফিস চেম্বারে ঢুকে বলল, ‘বড়দি, একজন ঢ্যাঙামতো লোক এসেছেন আপনার সঙ্গে দেখা করতে।’
যোগমায়া তখন ইস্কুলের কয়েকটা প্রশাসনিক ফাইল নিয়ে ভারী ব্যস্ত ছিলেন। বললেন, ‘বাইরে অপেক্ষা করতে বল, আমি মিনিট দশেক পরে ডাকছি।’
তারপর কাজের ফাঁকে ভুলেই গিয়েছিলেন লোকটার কথা। যখন মনে পড়ল, তখন প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেছে। তড়িঘড়ি নমিতাকে ডেকে বললেন, ‘হ্যাঁ রে সেই লোকটা কি এখনও অপেক্ষা করছে না চলে গেছে?’
‘না বড়দি, এখনও ঠায় বসে আছে লোকটা।’
যোগমায়া কিঞ্চিৎ লজ্জিত বোধ করলেন। ভদ্রলোককে এতক্ষণ বসিয়ে রেখে তিনি ভুলেই গিয়েছিলেন! বললেন, ‘যা শিগগিরই ডেকে আন ওঁকে।’
কয়েক মুহূর্ত পরে ভদ্রলোক ঘরে ঢুকতেই যোগমায়া হাতটাত জোড় করে এতক্ষণ বসিয়ে রাখার জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন।
ভদ্রলোক হাঁ হাঁ করে উঠলেন, ‘না না ম্যাডাম কী করছেন! আপনি ব্যস্ত মানুষ, আমারই অসময়ে এসে আপনাকে বিরক্ত করা উচিত হয়নি...এসব ক্ষমাটমা চেয়ে আমাকে লজ্জায় ফেলবেন না।’
যোগমায়া দেখলেন ভদ্রলোক প্রায় ছ’ফুট লম্বা। বয়স চল্লিশের আশপাশে। পরনে পাঞ্জাবি আর জিনস। মুখে ইন্টেলেকচুয়াল দাড়ি।
ঘাড় ঝুঁকিয়ে ভদ্রলোক বললেন, ‘নমস্কার, আমি পথিকৃৎ বসু, ক্লাস নাইনের নীলাঞ্জনা আমার ভাইঝি...’
‘নীলাঞ্জনা...ওওও নীলাঞ্জনা, যে মেয়েটা ভারতনাট্যম নাচে? ও লেখাপড়া তো ঠিকঠাকই করছে।’
‘না না, আমি ওর ব্যাপারে কিছু বলতে...’
‘তবে দেখুন, এখন ক্লাস নাইন, ওকে একটু সিরিয়াস হতে হবে। এখন নাচটাচ সব বন্ধ থাক, লেখাপড়াটা মন দিয়ে করুক।’
‘সে তো নিশ্চয়ই,’ পথিকৃৎ বসু ঈষৎ অপ্রতিভ গলায় বলেন, ‘ম্যাডাম, আমি আসলে আপনার কাছে একটা অন্য দরকারে এসেছি।’
‘কী দরকার?’
‘দরকার...মানে, ইয়ে, মানে আমি একজন চিত্রপরিচালক, বেশ কিছু তথ্যচিত্র ও ফিচার ফিল্ম করেছি। কয়েকটা ছোট ছবি সানডান্স, লোকার্নো...’
‘হবে হয়তো...আমি আবার ছবিটবি তেমন দেখি না, তাই আপনার নাম শুনিনি। হলে গিয়ে শেষ ছবি দেখেছি সত্যজিৎ রায়ের ‘আগন্তুক’। এবার আপনার দরকারটা বলে ফেলুন পথিকৃৎবাবু।’
‘দরকার ঠিক নয়, ম্যাডাম...আসলে আমি একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি। আমার একটা ছবির চরিত্রে আপনাকে অভিনয় করতে হবে। প্লিজ ‘না’ বলবেন না, ম্যাডাম...আসলে আমার ছবির চিত্রনাট্যে চরিত্রটার যেমন লুক, যেমন প্রোফাইল আছে, তার সঙ্গে আপনি হুবহু মিলে যান...’
যোগমায়া আকাশ থেকে পড়লেন! ভদ্রলোক বলছেন কী! তিনি একটু কঠিন গলায় বললেন, ‘আপনি তো আমাকে চেনেনই না, তাহলে কী করে জানলেন আপনার ছবির রোলটার জন্য আমিই মানানসই?’
‘না, ম্যাডাম আপনাকে আমি চিনি আমার দাদা-বউদির চোখ দিয়ে। নীলাঞ্জনার পেরেন্টস টিচার মিটিং হলে বউদি আসে, ওঁর কাছ থেকেই আপনার কথা জেনেছি।’
যোগমায়া দেখেছেন লোকটা এরকম উৎপটাং আবদার নিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য এক ঘণ্টা অপেক্ষা করেছে। তার মানে নাছোড়বান্দা পার্টি! একে অন্যপথে বিদায় করতে হবে।
‘দেখুন, সত্যজিৎ রায় আর মৃণাল সেন ছাড়া আর কোনও বাঙালি ছবি করতে জানে বলে আমার মনে হয় না। সিনেমা-নাটকে আমার তেমন রুচি নেই। আমি অ্যাকাডেমিশিয়ান...’
‘এগজ্যাক্টলি ম্যাডাম,’ পথিকৃৎ যোগমায়ার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, ‘রোলটা তো একজন অ্যাকাডেমিশিয়ানের, মানে শিক্ষিকার...আপনি প্লিজ আমাকে ফেরাবেন না, আরেকবার ভেবে দেখুন, খুব গুরুত্বপূর্ণ রোল।’
‘বেশ,’ যোগমায়া হাত জোড় করে উঠে দাঁড়ালেন, ‘আপনি এবার আসুন পথিকৃৎবাবু, আমি ভেবে দেখব।’
পথিকৃৎ যাওয়ার আগে তাঁর ভিজিটিং কার্ড দিয়ে গেলেন। যোগমায়া ফের ফাইল টেনে বসলেন, কিন্তু কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারলেন না। লঘু বিনোদনে তাঁর কোনওকালেই রুচি ছিল না, ইস্কুল থেকে বাড়ি ফিরে নিউজ চ্যানেল দেখেন। কমলেশবাবু কখনও ভুলক্রমে টিভি সিরিয়াল চালালে বিরক্ত হয়ে উঠে যান। অথচ আজ পথিকৃৎ বসু নামের লোকটা চলে যাওয়ার পর তিনি বারবার অন্যমনস্ক হয়ে পড়লেন।
রাতে বাড়ি ফিরে ন’টা নাগাদ একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন এল। ধরতেই ওপাশ থেকে পথিকৃৎ বসুর গলা ভেসে এল—‘ম্যাডাম, তাহলে রোলটা করছেন তো?’
যোগমায়া বেশ জোরের সঙ্গে বলতে চেয়েছিলেন ‘আমি এখনও ভেবে দেখিনি’ কিন্তু গলাটা কেমন নরম শোনাল।
বাড়িতে সাড়ে ন’টায় খাওয়ার নিয়ম করেছেন যোগমায়া। দশটার মধ্যে আলো নিভিয়ে সবাইকে বিছানায় যেতে হয়। প্রিয়াঞ্জলির পরীক্ষার আগে অবিশ্যি রাত জেগে পড়ার অনুমতি আছে।
সেদিন খাওয়ার পর টিভির সামনে কিছুক্ষণ বসে থাকলেন যোগমায়া। মেয়ে আর স্বামী শোওয়ার ঘরে সেঁধিয়ে যাওয়ার পর রিমোট দিয়ে চুপিচুপি কয়েকটা বাংলা সিরিয়াল আর সিনেমার চ্যানেলে ঘোরাঘুরি করলেন। খানিক বাদে বিছানায় ফিরে এসেও শান্তি নেই। মনের ভিতর কী একটা যেন খচখচ করছে। মনে পড়ল স্কুলশিক্ষিকা হওয়ার আগে ছোটবেলায় তাঁর অনেক কিছুই হতে ইচ্ছে করত। এয়ার হোস্টেস, ডাক্তার, নার্স, পুলিস এমনকী ফুচকাওয়ালাও! যখন তাঁর পাঁচ বছর বয়স তখন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এইসব বিচিত্র ভূমিকায় অভিনয় করতেন। অবিশ্যি আর পাঁচটা বাচ্চা মেয়েও তো এইগুলোই করে! তাঁর কন্যা প্রিয়াঞ্জলিও তো ছোটবেলায় তাই করত!
তবে কী এই অভিনয়ের ইচ্ছেটা মানুষের জন্মগত! জীবন যদি তাঁকে সত্যি সত্যিই অভিনয় করার সুযোগ দেয়, মন্দ কী! পরক্ষণেই যোগমায়ার মনে হল এসব তিনি কী ভাবছেন! বাহান্ন বছর বয়সে তিনি এমন তরলমতি বালিকার মতো ভাবছেন কী করে! একটি নামকরা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার এসব মানায় না।
গোটা রাতটা বিছানায় ছটফট করে কাটল! পরদিন ইস্কুলে গিয়েও মন বসাতে পারলেন না। ইতিমধ্যে পথিকৃৎ বসু তাঁকে নিজের বেশ কয়েকটি সিনেমার ইউটিউব লিংক পাঠিয়েছেন। সেগুলো খুলে দেখলেন ভদ্রলোকের কাজগুলি বেশ ভালো। অত্যন্ত উঁচু সিনেম্যাটিক সেন্স।
সারাদিনে পথিকৃৎ আরও তিনবার তাঁর সিদ্ধান্ত জানার জন্য ফোন করলেন। তিনবারই যোগমায়া কোনও সিদ্ধান্ত জানাতে পারলেন না।
রাত দশটার সময় চতুর্থ ফোনটা যোগমায়া নিজেই করলেন। তবে বাথরুম থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে।
‘পথিকৃৎ, আমি রাজি। তবে আমার দুটো শর্ত আছে। আপনার শ্যুটিংয়ের কাজ খুব দ্রুত শেষ করতে হবে আর ব্যাপারটা পাঁচকান করা চলবে না।’
‘ম্যাডাম, আমি রাজি,’ ফোনের ওপাশে পথিকৃৎ একটু দম নিলেন, ‘আগামী শুক্রবার বেলা তিনটে নাগাদ রাজলক্ষ্মী স্টুডিওতে চলে আসুন। একটা স্ক্রিন টেস্ট করে নেব। জায়গাটা চেনেন তো, আনোয়ার শা রোডে।’
‘ডান।’
ফোনটা কেটে বাথরুম থেকে বেরিয়ে এলেন যোগমায়া। খুব সন্তর্পণে এসে বিছানায় শুয়ে পড়লেন। খাটের অন্যপ্রান্তে কমলেশবাবু তখন নাক ডাকছেন। যোগমায়া ঠিক করে নিয়েছেন অভিনয় করার পুরো ব্যাপারটা বাপ-মেয়ের কাছে গোপন রাখতে হবে, নাহলে তাঁর এতদিনের তৈরি ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।
পরের শুক্রবার যোগমায়া কাজের ছুতোয় ইস্কুল থেকে বেরিয়ে দুটো নাগাদ রাজলক্ষ্মী স্টুডিওতে পৌঁছলেন। একটা বড় বিল্ডিংয়ের তিনতলায় শ্যুটিং ফ্লোর। স্ক্রিপ্ট রেডিই ছিল। পথিকৃৎ সেটা ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে এই দুলাইনের সংলাপটা বলবেন। ডায়ালগ থ্রো করার সময় যেটুকু ইমোশন দেওয়ার, সেটা দেবেন। আমি ক্যামেরার পাশে ওই মনিটরে সবটা দেখব।’
হাতের কাগজটায় লেখা সংলাপটার দিকে তাকালেন যোগমায়া। লেখা আছে—‘আমি সারা জীবন এক মিথ্যার জগতে বাস করেছি। আজ বুঝি, নিজের স্বপ্নের চেয়ে বড় কিছু নেই!’
ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে সংযত আবেগ দিয়ে যোগমায়া গড়গড় করে সংলাপটা বলে গেলেন। মনিটরের পিছন থেকে পথিকৃৎ বুড়ো আঙুল তুলে বোঝালেন, শট ওকে!
তারপরে কাছে এগিয়ে এসে পথিকৃৎ বললেন, ‘ম্যাডাম, দারুণ হয়েছে। এটা নায়িকা-প্রধান ছবি। আমাদের ছবির শ্যুটিং সামনের সপ্তাহ থেকেই শুরু হবে। আপনার চরিত্রটা হল নায়িকার মায়ের। পাশের ঘরে ছবির নায়িকা ও অন্যান্য অভিনেতারা আছেন, আসুন, আমি আলাপ করিয়ে দিই।’
যোগমায়া পথিকৃতের পিছুপিছু গেলেন। চিত্রপরিচালক পাশের ঘরের দরজাটা খুলে ধরতেই যোগমায়া চমকে উঠলেন। ঘরের ভিতর একটা সোফায় পাশাপাশি বসে আছেন কমলেশ আর প্রিয়াঞ্জলি। বাপ-মেয়েকে একসঙ্গে দেখে যোগমায়ার মুখে ক্ষণিকের বিস্ময় ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল। ধীরে ধীরে মুখের পুরনো কাঠিন্য ফিরে এল। রহস্যটা যেন একটু একটু করে স্পষ্ট হচ্ছে।
কমলেশ এগিয়ে এসে বললেন, ‘তুমি কোনওদিন মেয়ের মনটা বোঝার চেষ্টা করনি, ওর ইচ্ছে-অনিচ্ছেকে গুরুত্ব দাওনি। কলেজে পড়ার সময়ই পিউ আমাকে বলেছিল, বাবা, আমি অভিনয় করতে চাই। তোমাকে লুকিয়ে ওদের ইস্কুলের নাটকে অভিনয়ও করত। তাই গ্র্যাজুয়েশনের পরেই আমি ওকে একটা অভিনয় শেখার স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলাম। সপ্তাহে দু’দিন কলেজের পর যেত। সেখানেই পথিকৃৎ বসুর সঙ্গে আমাদের আলাপ।’
যোগমায়া হতভম্ব হয়ে চিত্রপরিচালকের দিকে তাকালেন। তিনজন ষড়যন্ত্রকারীর বিরুদ্ধে আত্মপক্ষ সমর্থনে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তার আগেই পথিকৃৎ বলে উঠলেন, ‘ম্যাডাম, পুরোটা কিন্তু কনস্পিরেসি নয়, আমার ওয়েব সিরিজ ‘ইচ্ছেপূরণ’-এর নায়িকা প্রিয়াঞ্জলি যেমন সত্যি, আপনার রোলটাও কিন্তু তেমন সত্যি, ওটা কিন্তু আপনাকে করে দিতেই হবে। দেবেন তো? প্লিজ প্লিজ...’
চিত্রপরিচালক মশাইয়ের কথায় রাগ করতে গিয়েও যোগমায়া ফিক করে হেসে ফেললেন।