বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
গীতায় খাদ্যের আলাদাভাবে বর্ণনা করা হয়নি, প্রত্যুত আহারী বা ব্যক্তির বর্ণনা হলে সেখানে আহারেরও বর্ণনা হয়—যেমন সাত্ত্বিক ব্যক্তির প্রিয় বলে সাত্ত্বিক আহারের, রাজসিক ব্যক্তির প্রিয় বলে রাজসিক আহারের এবং তামসিক ব্যক্তির প্রিয় বলে তামসিক আহারের বর্ণনা হয়েছে (১৭/৮-১০)।
সুতরাং গীতায় যেখানে খাদ্যের কথা এসেছে, সেখানে ভগবান আহারী অর্থাৎ ব্যক্তিটির কথা বর্ণনা করেছেন, যেমন ‘‘নিয়তহারাঃ (৪/৩০) পদ দ্বারা নিয়মিত আহারকারী’’ নাত্যশ্নতন্তু যোগোহন্তি ন চৈকান্তমনশ্নতঃ (৬/১৩) পদ দ্বারা নিয়মিত ভোজনকারী, ‘‘যুক্তাহারবিহারস্য (৬/১৭) পদদ্বারা অধিক ভোজনকারী, ‘‘যুক্তাহারবিহারস্য (৬/১৭) পদ দ্বারা নিয়মিত ভোজনকারী ‘‘যদশ্নাসি’’ (৯/২৭) পদে ভোজ্য পদার্থ ভগবানে অর্পণকারী, এবং ‘‘লঘ্বাশী’’ (১৮/৫২) পদ দ্বারা অল্প ভোজনকারীর বর্ণনা করা হয়েছে।
গীতাতে যে তিনটি গুণের (সত্ত্ব, রজ, তম) বর্ণনা করা হয়েছে তাতেও তারতম্য থাকে। সাত্ত্বিক মানুষের মধ্যে সত্ত্বগুণের প্রাধান্য হলেও সঙ্গে রাজসিক-তামসিক ভাব থাকে। রাজসিক মানুষের মধ্যে রজোগুণ প্রাধান্য পেলেও সঙ্গে সাত্ত্বিক ও তামসিক ভাব থাকে, তেমনি তামসিক মানুষের মধ্যে তমোগুণের প্রাধান্য থাকলেও সঙ্গে সাত্ত্বিক-রাজসিক ভাবও থাকে। এর কারণ এই যে সম্পূর্ণ সৃষ্টিই ত্রিগুণাত্মক (১৮/৪০)। দুটি গুণকে দমিত করে একটি গুণ প্রধান হয়ে ওঠে (১৪/১০) সুতরাং সাত্ত্বিক মানুষের সাত্ত্বিক পদার্থ স্বাভাবিকভাবে প্রিয় লাগালেও তিনটি গুণের মিশ্রণ থাকার ফলে অথবা প্রথমে রাজসিক ও তামসিক ভোজ্য গ্রহণের অভ্যাসে অথবা শরীরে কোন পদার্থ কম হলে অথবা শরীর অসুস্থ হলে কখনও কখনও রাজসিক-তামসিক খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছা হয়। যেমন খুব নুন বা নোন্তা জিনিস খাবার ইচ্ছা হয় বা আধাপক্ শাক ইত্যাদি খেতে মনে ইচ্ছা আসে।
রাজসিক ব্যক্তির রাজসিক পদার্থ স্বাভাবিকভাবে প্রিয় লাগলেও তিনটি গুণের সংমিশ্রণ থাকায় অথবা আগে সাত্ত্বিক-তামসিক পদার্থ খাবার অভ্যাসে অথবা অন্য কোন কারণবশতঃ কখনো কখনো সাত্ত্বিক রাজসিক পদার্থের ইচ্ছা হয়ে যায়। যেমন প্রথমে দুধ, কাজু, পেস্তা, বাদাম ইত্যাদি খাওয়া হয়েছে, এবং অসুস্থতার জন্য শরীর কমজোরী বা দুর্বল হলে বল বাড়াবার জন্য ঐসব সাত্ত্বিক দ্রব্য খাওয়ার ইচ্ছা হয়। এরকমই কখনো কখনো রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি তামসিক পদার্থ খাবার ইচ্ছা জাগে।
তামসিক মনুষ্যের তামসিক পদার্থ স্বাভাবিকভাবে প্রিয় লাগলেও কখনো শরীর দুর্বল হলে বা অন্য কোন কারণেও দুধ, ঘি প্রভৃতি সাত্ত্বিক এবং টক, নোন্তা প্রভৃতি রাজসিক পদার্থ খাবার ইচ্ছা জাগে।
সাত্ত্বিক ব্যক্তির পূর্বসংস্কারের জন্য রাজসিক-তামসিক খাদ্য ভোজনের ইচ্ছা হলেও তিনি তা করেন না, কেননা সত্ত্বগুণের প্রাধান্য থাকায় তাঁর বিবেক জাগ্রত থাকে, বিবেকই তাকে এই কাজ থেকে বিরত করে। শুধু তাই নয়, সাত্ত্বিক পদার্থ স্বাভাবিক প্রিয় হলেও তাতে সাত্ত্বিক পদার্থের প্রবল ইচ্ছা থাকে না। তীব্র বৈরাগ্য হলে তো সাত্ত্বিক পদার্থকেও উপেক্ষা করা হয়। রাজসিক মানুষেরা শরীর পুষ্ট ও ঠিক রাখার জন্য সাত্ত্বিক ও তামসিক দ্রব্য ব্যবহার পছন্দ করে। রাগের (আসক্তির) প্রাধান্য থাকায় এই ইচ্ছা বা পছন্দ ঐসব পদার্থ সেবন করতে তাকে বাধ্য করে। তামসিক ব্যক্তিদেরও সাত্ত্বিক ও রাজসিক মানুষের সাহচর্যে সাত্ত্বিক ও রাজসিক পদার্থ গ্রহণ করার ইচ্ছা বা রুচি হয়। কিন্তু মোহ এবং মূঢ়তার প্রাধান্য থাকায় এই ইচ্ছা তাদের ওপর বিশেষ কোন প্রভাব ফেলে না।
সাত্ত্বিক ব্যক্তি যদি সাত্ত্বিক ভোজ্য পদার্থ রাগপূর্বক বেশী মাত্রায় সেবন করে তবে সেই ভোজন রাজসিক হয়, যা পরিণামে দুঃখ, শোক এবং রোগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, যদি সে লোভের বশবর্তী হয়ে অধিক মাত্রায় কোন পদার্থ সেবন করে তবে সাত্ত্বিক ভোজনও তামসিক হয়ে যায় যা অধিক নিদ্রা এবং আলস্যের কারণ।
রাজসিক মানুষও যদি রাজসিক ভোজন রাগপূর্বক করে তাহলে পরিণামে রোগ, পেট জ্বালা ইত্যাদি হবে। যদি সে ঐসব পদার্থ অধিক মাত্রায় সেবন করে তাহলে জ্বালা, দুঃখ, রোগাদির সঙ্গে সঙ্গে নিদ্রা, আলস্য ইত্যাদিও বেড়ে যাবে। কিন্তু ঐ খাদ্যই সে বিচার-বিবেচনা পূর্বক অল্পমাত্রায় যদি করে তাহলে তার পরিণাম রাজস (দুঃখ-শোক) না হয়ে সাত্ত্বিক হয় অর্থাৎ অন্তঃকরণে নির্মলতা, শরীর হাল্কা, তাজা ইত্যাদি হয়। ঘুম কম পাবে এবং আলস্য হবে না, কেন না সে যুক্তাহার করেছে।
তামসিক মানুষেরা যদি মোহপূর্বক তামসিক ভোজন করে তাতে তামসিক বৃত্তি অত্যন্ত বেড়ে যায়। যদি ভোজন সে অল্পমাত্রায় করে তাহলে ঐ রূপ বৃত্তি হয় না; অল্প পরিমাণে ঐ বৃত্তি থাকে অর্থাৎ অধিক মোহিত করা বৃত্তি হয় না।
স্বামী রামসুখ দাসের ঈশ্বরকে মানবো কেন ও নামজপের মহিমা থেকে