বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
সদয়া জননী গোলাপ-মাকে করেন আদেশ: ‘‘ঠাকুরের ফুল একটি এনে দাও।’’ একটি পদ্ম এনে গোলাপ-মা দিলেন জননীর হাতে। ফুলটি হাতে ক’রে ফিরে চাইলেন মা ঠাকুরের পানে; মনে মনে কী যে কথা হ’ল, বাইরে তা বুঝলো না কেউই। তারপর সেই প্রসাদী, কমলদল তুলে দিলেন আর্ত্ত মেয়ের হাতে; বললেন—‘‘তোমার মেয়ের মাথায় বুলিয়ে দেবে।’’ বিদেশিনীর সে কী আর্ত্তিভাঙা রূপ—কৃতজ্ঞতার ভারে সে যেন লুটিয়ে পড়বে মা’র চরণধূলায়! জোড়হাতে বলে, ‘‘ফুলটি লইয়া কী করবি?’’ ‘‘কেন, কী আর ক’রবে, শুকিয়ে গেলে গঙ্গায় ফেলে দেবে।’’ চিরন্তন রীতিই দেখান গোলাপ-মা। কিন্তু বিদেশিনীর কাছে এ যে পরম-পাওয়ার ধন! একান্ত প্রতিবাদের ভঙ্গীতে তাই সে ব’লে ওঠে, ‘‘না, না, এ ভগবানের জিনিস। ফেলিয়া দিব? একটি নূতন কাপড়ের থলে করিয়া রাখিয়া দেব। সেই থলেটি মেয়ের গায়ে রোজ বুলাইয়া দিব।’’ সস্নেহে সম্মতি পান তিনি মা’র মুখে: ‘‘হ্যাঁ, তাই ক’রো।’’ কী জ্বলন্ত বিশ্বাস! বিদেশিনী বলে তার অতীত জীবনের কাহিনী। তার আরও একটি সন্তানের শৈশবে ঘটেছিল যে ঘটনা। একদিন সে সন্তানটিও হয়েছিল রোগকাতর। সেদিন বিদেশিনী ঠিক এমনি আকুতিই জানিয়েছিল তাদের অলখ-দেবতা ঈশামসীর চরণতলে—সরস অশ্রুসিক্ত একটি রুমাল দিয়েছিল বিছিয়ে, যেমন ক’রে কাঙাল পাতে তার ভিক্ষার ঝুলি। কতক্ষণ চেয়েছিল জানি না। পরে সে যখন প্রার্থনাঅন্তে চোখ মেলে চাইলো, দেখলো তিনটি কাঠি র’য়েছে সেই রুমালের ভিতর। কী যে পেল, সেই জানে। ছুটে নিয়ে এলো তার রুগ্ন শিশুর শয্যাপাশে, বুলিয়ে দিলো সেই তিনটি কাঠি তার অঙ্গে। কৃপার জিয়ন-কাঠির পরশ পেয়ে মৃত্যুমুখে এসে পড়লো নব-জীবনের আলো! বলতে বলতে আর হয় না বলা—চোখ ভ’রে তার নামে অশ্রুগঙ্গা। তারপর আবার অন্তরের আকুতিটুকু জানিয়ে সে নেয় বিদায়। সম্বল ক’রে নিয়ে যায় মায়ের প্রসন্ন আশিস আর কৃপার আমন্ত্রণ: ‘‘তুমি মঙ্গলবারে এসো।’’ ঠাকুরের কী মহিমা! এবারেও সে পেলো বিশ্বাসের পুরস্কার। কন্যারত্ন তার উঠে বসলো নীরোগ হয়ে, আর মঙ্গলবারে এসে সেও পেলো মা’র করুণার দান—ইষ্টমন্ত্র। সীমা-অসীমার মিলন-মাঙ্গলিকে গড়া এ-যুগের এই মাতৃভাব-লীলা!
সন্তানের কুশল-চিন্তায় কত তন্দ্রাহীন রজনী যেন পার হয়ে। একদিন নয়, দিনের পর দিন। তাই গভীর রাতেও ভক্ত এসে পেয়েছে সমান আদর-আপ্যায়ন। গভীর রাতে সন্তানের স্মৃতির তীর্থে মা’র স্নেহের পরশ হয়ে থাকে অম্লান; সে ভুলতে পারে না সে-মমতা-মথিত কণ্ঠ: ‘‘তোমাদের আস্তে এত দেরি হ’ল?