গুরুজনের চিকিৎসায় বহু ব্যয়। ক্রোধ দমন করা উচিত। নানাভাবে অর্থ পাওয়ার সুযোগ। সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়ায় ... বিশদ
ইংল্যান্ডের সর্বকালের সেরা গোলরক্ষক গর্ডন ব্যাঙ্কস ৮১ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন। ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ জেতাতে তিনি বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন। সেবার বিশ্বকাপের সবক’টি ম্যাচে তিনি ইংল্যান্ডের দুর্গপ্রহরী ছিলেন। সেই বিশ্বকাপজয়ী দলের তিন সদস্য আগেই প্রয়াত হয়েছিলেন। এঁরা হলেন ক্যাপ্টেন ববি মুর, অ্যালান বল ও রে উইলসন। গর্ডন ব্যাঙ্কস হলেন চতুর্থ সদস্য যিনি জীবনের মায়া কাটিয়ে ওপারে পাড়ি দিলেন। তবে সর্বকালের বিশ্বসেরা গোলরক্ষক হিসেবে ফিফা স্বীকৃতি দিয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের লেভ ইয়াসিনকে। এই নিয়ে কোনও অভিযোগ কখনও তোলেননি ব্যাঙ্কস।
ফুটবলের লোকগাঁথায় ঢুকে গিয়েছে ১৯৭০ সালের বিশ্বকাপে গর্ডন ব্যাঙ্কসের সেই অবিশ্বাস্য সেভটি। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ব্রাজিলের মুখোমুখি হয়েছিল ইংল্যান্ড। মেক্সিকোর গুয়াদালজারার জালিস্কা স্টেডিয়ামে সেবার সেলেকাওদের ক্যাপ্টেন ছিলেন কার্লোস আলবার্তো। আর সেই সর্বকালের সেরা ব্রাজিল একাদশের আপফ্রন্টে ফুটবল সম্রাট পেলের নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিলেন জেয়ারজিনহো, টোস্টাও, রিভেলিনোরা। ওই ম্যাচটি জেয়ারজিনহোর দেওয়া একমাত্র গোলে জিতেছিল ব্রাজিল। সেই ম্যাচে রাইট উইং দিয়ে জিয়ারজিনহোর একটি হরিণ গতির দৌড়ে দিশাহারা হয় ইংল্যান্ড রক্ষণ। গোল লাইনে পৌঁছে তাঁর তোলা ক্রস যখন উড়ে আসছে দ্বিতীয় পোস্টের দিকে তখন প্রথম পোস্ট ছেড়ে মুভ করতে থাকেন ইংল্যান্ড গোলরক্ষক গর্ডন ব্যাঙ্কস। ছ’গজের বক্সের বাইরে থেকে দুরন্ত স্পটজাম্প নিয়ে পেলে সেই বল নিখুঁত ড্রপ হেডে রেখেছিলেন দ্বিতীয় পোস্টে। মাটিতে ড্রপ খেয়ে বল যখন গোলে ঢুকছে তখনই অবিশ্বাস্য ক্ষিপ্রতায় দ্বিতীয় পোস্টে উড়ে গিয়ে আঙুলের ডগা দিয়ে তা ক্রসবারের উপর দিয়ে তুলে দেন ব্যাঙ্কস। পরে ফুটবল সম্রাট পেলে অকপটে কবুল করেছিলেন, তাঁর দেখা এটাই সেরা সেভ। যদিও পরে গর্ডন ব্যাঙ্কস এই প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘বলটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই গোলে ঢুকছিল। আমার কানে ভাসছিল, পেলে চিৎকার করছে গোল বলে। আমি তখন ডান দিকে শরীর ছুঁড়ে দিয়েছি। মেক্সিকোয় যাওয়ার পর থেকেই প্র্যাকটিসে লক্ষ্য করেছিলাম, বলের বাউন্স ওখানে বেশি। তাই বাড়তি সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় পেয়ে গিয়েছিলাম। পেলেও ভাবতে পারেনি, ওকে আমি ওইভাবে গোল থেকে বঞ্চিত করব।’ ইংল্যান্ডের সেই দলের আরেক দিকপাল ফুটবলার স্যার ববি চার্লটন পরে বলেছিলেন, ‘আমরা সবাই ধরে নিয়েছিলাম, গোল হয়েই গিয়েছে। কিন্তু শুধু আমাদের নয়, গোটা দুনিয়াকে স্তব্ধ করে গর্ডন ব্যাঙ্কস ওই হেড রুখে দিয়েছিল। আমার ফুটবল জীবনে এমন সেভ আর দেখিনি।’ যদিও গর্ডন ব্যাঙ্কস নিজে পেলের ওই হেড বাঁচানোর মুহূর্তটিকে তাঁর জীবনের সেরা সেভ বলে মানতে রাজি হননি। ২০১৬ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘না, ওটা আমার সেরা সেভ নয়। ১৯৭২ সালে স্টোক সিটির দুর্গের নীচে লিগ কাপ সেমি-ফাইনালে জিওফ হার্স্ট পোস্টের কোণে যে পেনাল্টি রেখেছিল ওটা বাঁচিয়েই সবচেয়ে বেশি তৃপ্তি পেয়েছিলাম। কারণ, সেবার আমরা স্টোক সিটির হয়ে লিগ কাপ জিতেছিলাম।’
১৯৫৯ সালে লেস্টার সিটির হয়ে তাঁর পেশাদার ফুটবলজীবন শুরু। সেবার তিনি পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন সাত হাজার পাউন্ড। এরপর ছয়ের দশকে তিনি পাড়ি দেন স্টোক সিটিতে। তখন লেস্টার সিটির দুর্গরক্ষার দায়িত্বে আসেন পিটার শিলটন। তিনি এই মৃত্যুর পর গভীর শোকপ্রকাশ করে বলেছেন, ‘আমার ফুটবলজীবনের আইডল চলে গেলেন। ওঁকে দেখেই গোলরক্ষক হওয়ার প্রেরণা পেয়েছিলাম।’ দু’বার এফ এ কাপের ফাইনালে খেলেছেন ব্যাঙ্কস। এছাড়া দু’বার জিতেছেন লিগ কাপ খেতাব। স্টোক সিটির স্টেডিয়ামের বাইরে তাঁর একটি মর্মর মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। গর্ডন ব্যাঙ্কসের মৃত্যুতে এফ এ ছাড়াও শোকপ্রকাশ করেছে জার্মান ফুটবল সংস্থা ডিএফবি। ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে সাবেক পশ্চিম জার্মানিকে হারিয়ে ববি মুরের নেতৃত্বে প্রথম ও শেষবার জিতেছিল ইংল্যান্ড।