কর্মক্ষেত্রে অশান্তির সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কার শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যাশিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার: ... বিশদ
অ্যাডিলেড, ১৫ জানুয়ারি: যুগলবন্দি! একজন মঞ্চ গড়লেন। আর একজন ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছাড়লেন। সেঞ্চুরি করে বিরাট কোহলি হয়তো ম্যাচের সেরা হয়েছেন ঠিকই, তবে অস্ট্রেলিয়ার কফিনে শেষ পেরেক পুঁতে সমর্থকদের চোখে ‘হিরো’ কিন্তু মহেন্দ্র সিং ধোনিই।
জয়ের জন্য ২৯৯ রান তাড়া করতে নেমে বিরাট কোহলি সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে যখন আউট হলেন, তখনও ভারতের দরকার ছিল ৩৮ বলে ৫৭ রান। আস্কিং রেট ন’য়ের বেশি। ধোনি ২৫ রানে ব্যাট করছিলেন। খেলে ফেলেছিলেন ৩৫টি বল। আর সদ্য ব্যাট হাতে নামা দীনেশ কার্তিকের উপর খুব একটা আস্থা ছিল না। গত ম্যাচের ব্যর্থতা দেখার পর সমর্থকরা হয়তো বিশ্বাস করেননি, ম্যাচটা ৬ উইকেটে জিতবে ‘টিম ইন্ডিয়া’। যাবতীয় জল্পনার অবসান ঘটিয়ে রীতিমতো অঙ্ক কষে পঞ্চম উইকেটে দীনেশ কার্তিকের সঙ্গে ৫৭ রানের অপরাজিত পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন মাহি। যার ফলে চার বল বাকি থাকতেই জয়ের কড়ি জোগাড় করে নিতে পেরেছে কোহলি বাহিনী। ৫৪ বলে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন ধোনি। দীনেশ কার্তিকের সংগ্রহ ১৪ বলে ২২ রান।
শেষ ওভারের জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৬ বলে ৭ রান। বেহরেনডর্ফের প্রথম ডেলিভারি লং অনের উপর দিয়ে সোজা মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দেন মাহি। হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পাশাপাশি দলের জয় নিশ্চিত করে ফেলেন ‘এম এস ডি’। পরের বলে সিঙ্গলস নিয়ে জয়ের কড়ি জোগাড় করার পরেও প্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি ধোনির মধ্যে। কোথাও যেন তাঁকে একটু অভিমানী মনে হয়েছে। তবে ধোনি বুঝিয়ে দিলেন, তিনি ফুরিয়ে যাননি। সেরা ফিনিশার হিসাবে আজও তিনি প্রথম সারিতেই রয়েছেন। বিশ্বকাপের আগে মাহির এই ফর্ম (পর পর দু’টি হাফ-সেঞ্চুরি) ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে অনেকটাই চাপমুক্ত রাখবে।
শুরু থেকেই চালিয়ে খেলার চেষ্টা করেন ভারতের দুই ওপেনার শিখর ধাওয়ান ও রহিত শর্মা। পাঁচটি বাউন্ডারির সাহায্যে ধাওয়ান ২৮ বলে ৩২ রানে আউট হন। দ্বিতীয় উইকেটে রহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি ৫৪ রান যোগ করেন। প্রথম দিকে একটু গুটিয়ে থাকলেও রহিত কিন্তু উইকেটে সেট হওয়ার পরেই চালিয়ে খেলা শুরু করেন। আর তার ফলেই ৪৩ রানে তিনি স্টোইনিসের বলে ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে হ্যান্ডসকম্বের হাতে ধরা পড়েন।
বিরাট কোহলি একদিক ধরে রেখে রানের গতি সচল রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন। অম্বাতি রায়াডুর সঙ্গে ৫৯ রান যোগ করেন কোহলি। রান রেট কিছুটা মন্থর হলেও কোহলির মজবুত ব্যাটিং অস্ট্রেলিয়াকে চাপে ফেলে দেয়। অম্বাতি রায়াডু গত ম্যাচেও
হতাশ করেছিলেন। এদিনও সুযোগটা কাজে লাগাতে ব্যর্থ তিনি। ৩৬ বলে ২৪ রান করে তিনি ম্যাক্সওয়েলের বলে অহেতুক তুলে মারতে গিয়ে স্টোইনিসের হাতে ধরা পড়েন।
ধোনি যখন ব্যাট করতে নামেন তখন ভারতের দরকার ছিল ১৯.২ ওভারে ১৩৮ রান। কাজটা মোটেও সহজ ছিল না কোহলি ও ধোনির কাছে। কারণ, একটা ভুল শট তাঁদের যাবতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে পারত। সেই সঙ্গে ছিল সিরিজে টিকে থাকার কঠিন চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বিরাট কোহলির ব্যাটিং দক্ষতা ও মহেন্দ্র সিং ধোনির বুদ্ধিমত্তার যুগলবন্দিতে ধীরে ধীরে ম্যাচে জাঁকিয়ে বসে ভারত। বয়সের ফারাক বিস্তর হলেও রানিং বিটুইন উইকেটে কোহলি ও ধোনি একে অপরকে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছেন। সিঙ্গলসকে তাঁরা দু’রানে রূপান্তরিত করেছেন অনায়াসে। ৪৩তম ওভারে পিটার সিডলের ডেলিভারি ডিপ স্কোয়ার লেগে খেলে একদিনের ক্রিকেটে ৩৯তম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বিরাট। তবে ইনিংস তিনি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। রিচার্ডসনের বলে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ১০৪ রানে কোহলি ধরা পড়েন ম্যাক্সওয়েলের হাতে। ৫টি চার ও ২টি ছক্কা দিয়ে সাজানো রয়েছে বিরাটের ইনিংস। মাঠ ছাড়ার আগে তাঁকে বেশ আপসোস করতে দেখা গিয়েছে। তবে গত ম্যাচে রহিতের সেঞ্চুরি বৃথা গেলেও এদিন ক্যাপ্টেনের ইনিংস পূর্ণতা পেয়েছে ধোনির ‘ক্ল্যাসিক’ ব্যাটিংয়ের সুবাদে।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ৯ উইকেটে ২৯৮ রান তোলে। শুরুতেই অ্যারন ফিনচ (৬) ও অ্যালেক্স কেরির (১৮) উইকেট হারালেও শন মার্শের দুরন্ত ব্যাটিংয়ের সুবাদে দ্রুত ঘুরে দাঁড়ায় অস্ট্রেলিয়া। তৃতীয় উইকেটে মার্শ ও খাওয়াজা ৫৬ রান তুলে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন ভারতকে। কিন্তু জাদেজার দুরন্ত থ্রোয়ে খাওয়াজা (২১) রান আউট হয়ে যান। পিটার হ্যান্ডসকম্ব শুরুটা ভালো করেও ২০ রানের বেশি করতে পারেননি। সামির বলে মার্কাস স্টোইনিস ২৯ রানে সাজঘরে ফেরেন। একটা সময় অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ১৮৯। সেখান থেকে ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে ৯৪ রান তোলেন মার্শ। তবে একবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ম্যাক্সওয়েল। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি ৪৮ রান করেন।
তবে শেষ তিন ওভারে অস্ট্রেলিয়া ১৭ রান তোলে। চারটি উইকেট হারায়। ৪৮তম ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারের তৃতীয় বলে ম্যাক্সওয়েল আউট হন। পঞ্চম বলে ভুবি ফেরান শন মার্শকে। ১১টি চার ও ৩টি ছক্কার সাহায্যে মার্শ করেন ১৩১ রান। রিচার্ডসনকে (২) আউট করেন সামি। অন্তিম ওভারের প্রথম ডেলিভারিতে ভুবনেশ্বর কুমার তুলে নেন পিটার সিডলের উইকেট (০)। মার্শ-ম্যাক্সওয়েল জুটি শেষ পর্যন্ত থাকলে স্কোর ৩১৫-৩২০ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু ভুবনেশ্বরের বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের জোরে অস্ট্রেলিয়াকে তিনশোর মধ্যেই আটকে রাখতে সফল হয়ত ভারত। ভুবি চারটি ও সামি নেন তিনটি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া ২৯৮/৯-- (শন মার্শ ১৩১, ম্যাক্সওয়েল ৪৮, ভুবনেশ্বর ৪৫/৪, সামি ৫৮/৩)। ভারত ২৯৯/৪--(কোহলি ১০৪, ধোনি অপরাজিত ৫৫, কার্তিক অপরাজিত ২৫)।