ধনাগম যোগটি অনুকূল। দুপুর থেকে কর্মের বাধা মুক্তি ও উন্নতি। শরীর-স্বাস্থ্য সমস্যার যোগ। ... বিশদ
বুধবার রানাঘাট কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী মনোনয়ন জমা দেন। তাঁর বিশাল শোভাযাত্রায় শোভা বর্দ্ধন করেছিলেন মতুয়া সম্প্রদায়ের বহু মানুষ। এবার লোকসভা ভোটে যাঁরা বড় ফ্যাক্টর বলে মত রাজনৈতিক মহলের। সেই শোভাযাত্রায় হাঁটতে হাঁটতে হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুরের ভক্তদের ওই মন্তব্যে সিঁদুরে মেঘ দেখছে গেরুয়া শিবির। বিজেপিকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা বলছিলেন, ‘রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে ৪০ শতাংশ মতুয়া ভোট রয়েছে। এরমধ্যে ২৫ শতাংশ ভোটই এবার তৃণমূল পাবে। মিলিয়ে নেবেন কথাটা।’
ভোটের ঠিক আগে তড়িঘড়ি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) চালু করেন মোদি-শাহরা। শুরুতেই বঙ্গের বিজেপি নেতারা এই পদক্ষেপকে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হিসেবে দেখেন। পরে আইনের নানা জটিলতা ও শর্ত আরোপের বিষয়টি ভালোভাবে নেননি মতুয়া সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশ। তারা নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে সরব হন। ফলে, সিএএ বুমেরাং হতে পারে ভেবে ভোট প্রচারে তা নিয়ে খুব একটা বাক্য ব্যয় করছেন না রাজ্যের বিজেপি নেতারা। অমিত শাহ প্রচারে এসে সিএএ ইস্যুতে অনুপ্রবেশ রোখার পক্ষে সওয়াল করলেও মতুয়াদের ‘নিঃশর্ত নাগরিকত্ব’-এর প্রশ্নে নীরবই থাকছেন। অথচ, অতীতের ভোটগুলিতে এই নাগরিকত্বের গাজর ঝুলিয়ে বাংলায় ভিত শক্ত করেছে বিজেপি। তার মূল কারণ, মতুয়ারা দু’হাত উপুড় করে সমর্থন করেছিলেন।
এবার সেই ভোট ব্যাঙ্কে ফাটল ধরবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপির ওপর ক্ষোভ উগরে দিয়ে এককাট্টা হয়েছে মতুয়া সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশের মানুষ। কৃষ্ণনগর ও রানাঘাট দু’টি লোকসভা কেন্দ্রেই সেই ছবি দেখা গিয়েছে। বিজেপির গড় বলে পরিচিত রানাঘাটে মতুয়াদের একটা অংশ আবার বাম শিবিরে ফিরছে। সোমবার কৃষ্ণনগরে দুই লোকসভা কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়ার শোভাযাত্রায় ভিড় করেছিলেন মতুয়ারা। মতুয়া অধ্যুষিত চাকদহ ব্লক থেকে তাঁরা এসেছিলেন বাম প্রার্থীর সমর্থনে। রানাঘাটের মতুয়াদের অন্য একটি অংশ বিজেপির ‘জুমলাবাজি’ বুঝে গিয়ে শক্ত করেছে মুকুটমণির হাত। এদিন তাঁর মনোনয়নের শোভাযাত্রায় মতুয়াদের ভিড় ও তাঁদের উচ্ছ্বাসই সেটাই প্রমাণ করছে। নবদ্বীপ, কৃষ্ণগঞ্জ রানাঘাট সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মতুয়ারা শোভাযাত্রার সামিল হন। তৃণমূলের ঝান্ডার ভিড়ে নজর কাড়ে মতুয়াদের লাল ত্রিকোণ পতাকাও। ধামসা মাদল বাজিয়ে তৃণমূল প্রার্থীর সমর্থনে পথ হাঁটেন। তীব্র গরম উপেক্ষা করেই লাল পাড় সাদা শাড়ি পরিহিত মতুয়া মহিলাদেরও ভিড় ছিল দেখার মতো।
কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রেও বিজেপির মতুয়া ভোট ব্যাঙ্কে বিভাজন বেশ স্পষ্ট। তার উপর এই কেন্দ্রে পদ্ম শিবিরের উদ্বেগ বাড়িয়ে নির্দল হিসেবে লড়ছেন মতুয়া প্রার্থী সঞ্জিত বিশ্বাস। তিনি মতুয়া সমাজের কাছে বেশ পরিচিত মুখ। ইভিএমে বঞ্চনার প্রতিবাদ জানাতে চান সঞ্জিত। মঙ্গলবার তিনি বড় মিছিল নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিলেন। কিন্তু সময়ের কারণে দিতে পারেনি। বুধবার তিনি মনোনয়ন জমা দিয়ে বলেন, ‘আমাদের ভোটে অন্য রাজনৈতিক দল সুবিধা নেয়। তারপরই আমাদের দাবিদাওয়া ভুলে যায়। আমরা বারবার বঞ্চিত হচ্ছি। এর প্রতিবাদ জানাতেই আমি নির্দল প্রতীকে লড়তে চলেছি।’ রানাঘাটের বর্তমান ভোট সমীকরণ দেখে আত্মবিশ্বাসী মুকুটমণি। তিনি বলছিলেন, ‘মতুয়ারা সব সময় আমার সঙ্গে ছিলেন। বিজেপির নেতারা সিএএ-এর নাম করে মতুয়া ও উদ্বাস্তু মানুষদের সঙ্গে খেলা করেছেন। আসলে ওঁরা সিএএ চালু করে মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন।’