সংবাদদাতা, মালবাজার: ফুল ঝাড়ুকেই এখন প্রধান অর্থনৈতিক ফসল হিসাবে বেছে নিয়েছেন কালিম্পং জেলার গোরুবাথান ব্লকের সামসিং ফরেস্ট কম্পাউন্ড বস্তির কয়েকশ চাষি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় সকলেই এখন ঝাড়ুকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। কারণ ঝাড়ু ফলিয়ে তাঁরা এখন বেশি লাভের মুখ দেখছেন। একবার গাছ লাগালেই কেল্লাফতে। প্রতিবছর নিজে থেকেই ফলন দেয়। প্রায় বিনা খরচে বিঘা প্রতি কয়েক কুইন্টাল ঝাড়ুর ফলন হয়। এর চাহিদাও বেশ ভালো। পাহাড়ের মধ্যে সব চাইতে বেশি ঝাড়ুর জোগান আসে এই কম্পাউন্ড বস্তি থেকেই। এখানকার আবহাওয়া এবং জলবায়ু ঝাড়ু চাষের যে বিশেষ উপযোগী তা এখানকার চাষিরা বুঝতে পেরেছেন। তাই ঝাড়ু গাছ লাগিয়ে সাফল্য পেয়ে এখানকার চাষিরা এখন ঝাড়ু চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। স্বাভাবিকভাবেই এখন এখানকার বাসিন্দারা ঝাড়ু ফলিয়েই নিশ্চিন্তে দিন কাটাচ্ছেন।
এলাকার ঝাড়ু চাষি লছু রাই, বিজয় রাই, অক্ষয় রাইরা বলেন, এক সময় আমরা ঝাড়ু ছাড়াও এলাচ, আদা, রসুন চাষ করতাম। কিন্তু কোনওটাতে সেভাবে লাভ হয়নি। কিন্তু ঝাড়ু চাষ করে আমরা ভালো ফল পেয়েছি। লাভও বেশি হচ্ছে। একবার লাগালে আর কিছু করতে হয় না। তাই খরচ সেভাবে নেই। বিঘা প্রতি চাষে ১০ হাজার টাকার মতো আয় হয়। এখন আমাদের মতো অনেকেই ঝাড়ু চাষের দিকেই ঝুঁকছেন।
প্রসঙ্গত, গোটা পাহাড়ে এলাচ চাষ বেশি হয়। কিন্তু বর্তমানে পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় এলাচ গাছে পোকা লেগে যাচ্ছে। ফলে সেভাবে ফলন না হওয়ায় চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। গোটা পাহাড়ের মতো এই এলাকাতেও এক সময় এলাচ চাষ ভালো হতো। এছাড়াও আদা, রসুন, অসময়ে ফুলকপি, বাঁধাকপি সহ পাহাড়ি নানা ফসল ফলিয়েই বাসিন্দারা জীবন জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু বর্তমানে চাষিরা সেই চাষ সেভাবে করতে পারছেন না। কারণ ফসলগুলি লাগাতে বেশি খরচ হলেও ফলন কম হতো। অনেক সময় লাগানোর যে খরচ হতো তাও উঠত না। তাই তিন বছর আগে থেকে তাঁরা ঝাড়ু গাছের দিকে একটু বেশি করে নজর দেন এবং হাতেনাতে তার ফলও পান। ঝাড়ু লাগানো হয় জুন-জুলাইতে। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই গাছ বড় হয়ে ফলন দেওয়া শুরু করে দেয়। ডিসেম্বরের শেষের দিকে ঝাড়ু তোলা শুরু হয়ে যায়। আর একবার লাগালেই প্রতিবছর ফলন দেয়। শুধুমাত্র বর্ষায় ঝাড়ু গাছে পাশে ঘাস হলে তা পরিষ্কার করে দিলেই হয়। আর কোনও বাড়তি খরচ থাকে না।