নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মঙ্গলবার রাতে কলকাতা পুরসভার ৮৮নং ওয়ার্ডের সাহানগর রোডে তৃণমূলের সাংসদ ও এক মন্ত্রীর অনুগতদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে রীতিমতো অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসকদল। ঘটনার পর প্রায় ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউই এনিয়ে মুখ খোলেননি। তবে এরই মধ্যে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান মঙ্গলবার রাতের ঘটনায় ‘নিগৃহীত’ বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের ভবানীপুরের বাড়িতে যান। তিনি শোভনদেববাবুর সঙ্গে কথা বলেন। তাঁর শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। মন্ত্রী তাঁকে বলেন, চিকিৎসকরা ওষুধ দিয়েছেন। তিনি এদিন দিনভর বিশ্রামে ছিলেন। তবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে যেভাবে নিগৃহীত হয়েছেন, তাতে তিনি যে ব্যথিত, সেকথাও স্পষ্ট করে দেন মন্ত্রী। সূত্রের খবর, আজ-কালের মধ্যেই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে এনিয়ে চিঠি দেবেন এবং এর বিচার চাইবেন। বিহিত না হলে অন্য কিছু ভাববেন বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। পরে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী ও বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান যৌথভাবে বলেন, মঙ্গলবার রাতের ঘটনাই শাসকদলের অভ্যন্তরীণ অবস্থাকে প্রকট করে দিয়েছে। দলের প্রবীণরা যে কতটা সঙ্কটে, তা এই ঘটনা থেকে প্রমাণিত। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এনিয়ে ট্যুইট বার্তায় বলেছেন, যে দলের নিজেদের মধ্যে কোনও সমন্বয় নেই, সেই দল কীভাবে গণতন্ত্র রক্ষা করবে। মন্ত্রী ও সাংসদের অনুগামীরা যেভাবে ঝামেলা করল এবং মন্ত্রী নিগৃহীত হলেন, তাতে রাজ্যের কী অবস্থা, সেটা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এদিকে, বিদ্যুৎমন্ত্রী ফোনে বলেন, আমি কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। আমি মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও আমার গায়ে হাত তোলা হয়েছে। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে।
ঘটনার রাতে যাঁর গোষ্ঠীর সঙ্গে মন্ত্রীর অনুগামীদের সংঘাত, সেই কলকাতা দক্ষিণের সাংসদ তথা স্থানীয় কাউন্সিলার মালা রায়ের কথায়, এলাকার মানুষ প্রতিটি ঘটনার সাক্ষী রয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন, কে কার গায়ে হাত দিয়েছেন। কারও বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত কুৎসা করা আমি পছন্দ করি না। যদিও এত কিছুর পরেও তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ মুখ না খোলায় শাসকদলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এদিন শোভনদেববাবুর অনুগতরা বিধায়ক তথা মন্ত্রীকে হেনস্তা করার অভিযোগে এলাকায় মিছিল করেন। প্রতিবাদে পাল্টা রাস্তায় নামে মালাদেবীর অনুগতরাও। তবে রাজনীতির জাঁতাকলে পড়েছে টালিগঞ্জ থানার পুলিস। শাসকদলের দুই হেভিওয়েটের দ্বন্দ্বের মাঝে পড়ে কার্যত স্যান্ডউইচ পুলিস। তারা এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
মঙ্গলবার রাতের ঘটনার পর বুধবার সকালে সাহানগর রোড, প্রতাপাদিত্য রোড, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের অংশ ঘুরে বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গেল, ওইদিন আলো বন্ধ করা নিয়ে বাসিন্দারা সন্ধ্যা থেকেই প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। তাঁরা বলেন, সাহানগর রোডে কয়েকটি আলো নিভিয়ে সিনেমা দেখানোই যেত। কিন্তু তা না করে এলাকার বিধায়ক তথা বিদ্যুৎমন্ত্রীর অনুগতরা গোটা এলাকা অন্ধকার করে দেয়। এতে তাঁরা সমস্যার মধ্যে পড়েন। এর প্রতিবাদ করায় এলাকার মহিলাদের মারধর করা হয়েছে। শিশুরাও ছাড় পায়নি বিদ্যুৎমন্ত্রীর অনুগামীদের হাত থেকে।