দীপ্তিমান মুখোপাধ্যায়, হাওড়া: কর্তব্যে গাফিলতি ও ডেঙ্গু নিয়ে ভুল রিপোর্ট দেওয়ার জন্য হাওড়া পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের ১৪০ জন কর্মীকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়াও জেলাশাসকের সঙ্গে পুরসভার কমিশনারের আলোচনায় ঠিক হয়েছে, আগামী ১৬ নভেম্বর ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। হাওড়া শহরের ৬৬টি ওয়ার্ডকে ১২টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি জোনের নেতৃত্বে থাকবেন একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার অফিসার। এছাড়াও পুরসভার মেডিকেল অফিসাররাও তাঁদের সঙ্গে থাকবেন। হাওড়া পুরসভা এলাকায় ডেঙ্গু ছেয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত সরকারি রিপোর্টেই হাওড়া শহরে ১২০০ ও গোটা জেলায় প্রায় ২১০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত বলে জানা গিয়েছে। এই অবস্থায় পুরসভার গাফিলতিকেই স্থানীয় লোকজন দায়ী করেছেন। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বিভিন্ন এলাকায় নর্দমা পরিষ্কার হচ্ছে না। জঞ্জাল ডাঁই হয়ে রয়েছে। অথচ পুরসভা সেগুলি পরিষ্কারের ব্যবস্থা করছে না। তাছাড়া ব্লিচিং পাউডার, মশা মারার তেল বা ফগিংও দীর্ঘদিন করা হয়নি। তার ফলে সারাদিন মশার দাপটে শহরের লোকজন অতিষ্ঠ। বাড়িতে বাড়িতে জ্বর ও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। হাওড়া জেলা হাসপাতাল ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতেও জ্বর ও ডেঙ্গু রোগী ভর্তি। এই অবস্থায় পুরসভার গাফিলতির দিকেই আঙুল উঠেছে।
হাওড়া পুরসভার কমিশনার বিজিন কৃষ্ণা বলেছেন, কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল। আমরা তদন্ত করে দেখেছি, তাঁরা ঠিকমতো রিপোর্ট দেননি। যে এলাকায় ডেঙ্গু হয়নি বলে তাঁরা রিপোর্ট দিয়েছিলেন, দেখা গিয়েছে, সেখানে অনেকে ডেঙ্গুতে ও জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তাই তাঁদের শোকজ করা হয়েছে। এছাড়াও আমরা বিশেষ অভিযান চালাব। এতদিন আমাদের মনিটরিং করার কোনও অফিসার ছিলেন না। তাই জেলা প্রশাসনের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। একজন করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিটি জোনে তত্বাবধান করবেন।
হাওড়া পুরসভায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। মূলত উত্তর হাওড়া ও দক্ষিণ হাওড়ায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। দক্ষিণ হাওড়ায় একটি বড় আবাসনে প্রতিটি বাড়িতে জ্বরে আক্রান্ত যেমন আছে, তেমনই এই আবাসনেই বেশ কয়েকজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। উত্তর হাওড়ায় বেশ কিছুদিন ধরেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও পুরসভা কোনও নজর প্রথম থেকে দেয়নি। সেই কারণে উত্তর হাওড়ার প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ডেঙ্গু রোগী রয়েছে। একই অবস্থা দক্ষিণ হাওড়াতেও।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত বরো অফিসগুলি থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল। কিন্তু, সেখান থেকেই আসল পরিস্থিতির কথা পুরসভার কর্তাদের জানানো হয়নি। ডেঙ্গু রোগী বা জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমিয়ে দেখানো হয়েছে। এই নিয়ে অভিযোগ জমা হওয়ায় পুরসভার হেড অফিস থেকে তদন্ত করা হয়। তদন্তে পুরসভার কর্তারা জানতে পারেন, প্রকৃত তথ্য দেওয়া হয়নি। সেই কারণেই পুরসভার কমিশনার তাঁদের শোকজ করার সিদ্ধান্ত নেন। আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলেও পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। তাঁরাও কর্তব্যে গাফিলতি করেছেন। এলাকা পরিষ্কার বা ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল, তা তাঁরা নেননি।
পুরসভার নিজস্ব পরিকাঠামোর অভাব থাকায় এবার ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষ অভিযানের তত্ত্বাবধান করবেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার একজন করে অফিসার। গোটা শহরকে ১২টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। ওই জোনে প্রায় ২০ জন করে কর্মী থাকবেন। তাঁরা এলাকা পরিষ্কার, নিকাশি নালা পরিষ্কার, এলাকায় ব্লিচিং ছিটানো, ফগিং ও মশা মারার তেল দেবেন। তাঁদের নেতৃত্ব দেবেন একজন করে হেলথ অফিসার। পুরসভার এক কর্তা বলেছেন, আপাতত একদিনের অভিযান হবে। তারপর রিপোর্ট নিয়ে ১৫ দিন টানা এই অভিযান চালানো হবে।