হঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ
সিউড়ির গাংটে গ্রামে বাড়ি সুব্রত দাসের। গ্রামের একচিলতে মাটির বাড়িতে বসবাস। বাবা মোহন দাস সাইকেলে করে গ্রাম ঘুরে সব্জি বিক্রি করেন। এই আয়ে ছেলের পড়াশোনা দূরঅস্ত। সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে মোহনবাবুর কাছে। কিন্তু, দু’চোখে স্বপ্ন ছেলের। সেই স্বপ্ন পূরণে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল অর্থ। জানা গিয়েছে, অভাবী সংসারে পড়াশোনা করে সুব্রত মাধ্যমিকে ৬৫ শতাংশ নম্বর পেয়েছিলেন। উচ্চ মাধ্যমিকে ৬৬ শতাংশ। সিউড়ির বীরভূম মহাবিদ্যালয়ে স্নাতকস্তরে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে ভালো রেজাল্ট করার পর বিশ্বভারতী থেকে এমএ পড়তে চান সুব্রত। ফর্ম ফিলআপ করার পর মেধা তালিকায় ৪নম্বরে নাম রয়েছে তাঁর। কাউন্সেলিংয়ের আগেই জমা দিতে হবে সাড়ে ছ’হাজার টাকা। কিন্তু, গ্রামেগঞ্জে কয়েকজন ছেলে-মেয়েকে বাড়িতে পড়িয়ে যা বেতন পাওয়া যায় তা দিয়ে তো আর এত টাকা জোগাড় করা যায় না। এদিকে এমএ পাশ করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন তাঁর। শেষ পর্যন্ত নিজের রক্ত বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন ওই ছাত্র। ইতিমধ্যে দু’-তিনবার রক্ত বিক্রি করে হাজার দু’য়েক টাকা জোগাড় করেছেন। টিউশনি পড়িয়ে আরও ২০০০টাকা রয়েছে। কিন্তু, প্রয়োজন এখনও প্রায় আড়াই হাজার টাকা।
এদিকে রক্ত বিক্রি করে লেখাপড়ার ইচ্ছার খবর জানাজানি হতেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় বীরভূম জেলা পরিষদ। সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী ও অতিরিক্ত জেলাশাসক দ্বিপ্তেন্দু বেরা তাঁকে ৩০০০টাকা দেন। এদিন টাকা জমা দেওয়ার শেষ দিনে অনলাইনে সেই টাকা জমা করেছেন সুব্রত। আজ, শনিবার কাউন্সেলিং। সুব্রত বলেন, আমি জানি রক্ত বিক্রি করা অপরাধ। কিন্তু, এছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না। সভাধিপতি ও অতিরিক্ত জেলাশাসক যেভাবে সাহায্য করেছেন তা ভোলার নয়। মোহনবাবু বলেন, দুই মেয়ের বিয়ে দিতেই সব চলে গিয়েছে। মাটির বাড়ি ছাড়া কিছু নেই। ছেলে বহু কষ্টে লেখাপড়া করে। ওর রক্ত বিক্রির কথা জানতে পেরে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, একটা ছেলে লেখাপড়া করতে চায়। আমরা যতটা সম্ভব পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। তার স্বপ্ন পূরণ হোক এই কামনা করছি।