উপস্থিত বুদ্ধি ও সময়োচিত সিদ্ধান্তে শত্রুদমন ও কর্মে সাফল্য। ব্যবসায় গোলযোগ। প্রিয়জনের শরীর-স্বাস্থ্যে অবনতি। উচ্চশিক্ষায় ... বিশদ
হায়দরাবাদ, ১২ মে: দ্বাদশ আইপিএলের রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে চেন্নাই সুপার কিংসকে ১ রানে হারিয়ে চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে নজির গড়ল মুম্বই ইন্ডিয়ান্স।
জয়ের জন্য ১৫০ রান তাড়া করতে নেমে চেন্নাই ৯ ওভারে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে ৭০ রান তুলে ফেলেছিল। কিন্তু তার পরেই ম্যাচে নাটকীয় পটপরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিরে যান সুরেশ রায়না (৮), অম্বাতি রায়াডু (১)। তা সত্ত্বেও আশা ছাড়েননি সিএসকে’র সমর্থকরা। মহেন্দ্র সিং ধোনি যখন ব্যাট করতে নামেন তখন গ্যালারিতে ওঠে হলুদ ঝড়। কিন্তু ক্রিকেট দেবতা যেন অন্য কিছু চেয়েছিলেন। গোটা বিশ্ব যাঁকে সেরা রানার হিসাবে জানে, সেই ধোনিই (২) এদিন ওভার থ্রো থেকে রান চুরি করতে গিয়ে রান আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন। যদিও ধোনির রান আউট নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। রিপ্লেতে স্পষ্ট বোঝা যায়নি, ঈশান কিষাণের ডাইরেক্ট থ্রো নন স্ট্রাইকার এন্ডের উইকেট ভেঙে দেওয়ার আগে ধোনির ব্যাট ক্রিজ স্পর্শ করেছিল কিনা। যদিও মাঠের জায়ান্ট স্ক্রিনে রিপ্লে দেখে ধোনি ডাগ-আউটে হাঁটা দেন। তার পরেই আউটের সিদ্ধান্ত জানান থার্ড আম্পায়ার নাইজেল লং। মনে করা হচ্ছে ধোনির ব্যাট মাটি স্পর্শ করেনি।
পর পর উইকেট পড়ে যাওয়ায় চেন্নাইয়ের আস্কিং রেট অনেকটা বেড়ে যায়। শেষ পাঁচ ওভারে জয়ের জ্যন দরকার ছিল ৬২ রান। ষষ্ঠদশ ওভারে শেন ওয়াটসনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সামনে দিশেহারা হয়ে পড়েন মুম্বইয়ের পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। তিনি ২০ রান দেন। পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকে ম্যাচের ভাগ্য। দর্শকরা কখনও হাসছেন, কখনও কাঁদছেন। এর মধ্যেই ওয়াটসনের সহজ ক্যাচ ফেলেন রাহুল চাহার। স্নায়ুর চাপ নিতে পারেননি তিনি। আগেও রাহুল ৪২ রানে ওয়াটসনের ফিরতি ক্যাচ ফেলেছিলেন। ৩১ রানে মালিঙ্গার হাত থেকে প্রথম জীবন পেয়েছিলেন চেন্নাইয়ের অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানটি। তিনটি ক্যাচ পড়ায় ওয়াটসন আর পিছন ফিরে তাকাননি। ১৮তম ওভারে ক্রুনাল পান্ডিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি ছক্কা হাঁকান তিনি। চেন্নাইয়ের টার্গেট এক ধাক্কায় নেমে ১২ বলে দাঁড়ায় ১৮ রান। মুম্বইকে বার বার লড়াইয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন পেসার যশপ্রীত বুমরাহ। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তিনি ফেরান ডোয়েন ব্র্যাভোকে (১৮)। প্রথম পাঁচটি বলে মাত্র পাঁচ রান দিয়ে একটি উইকেট তুলে নিয়েছিলেন বুমরাহ। কিন্তু শেষ বলে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি’ককের হাত থেকে বুমরাহর ডেলিভারি ছিটকে বাউন্ডারি হয়ে যায়। অন্তিম ওভারে চেন্নাইয়ের জয়ের জন্য দরকার ছিল ৯ রান। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক রহিত শর্মা অভিজ্ঞতার উপর আস্থা রেখে মালিঙ্গার হাতে বল তুলে দেন। যে মালিঙ্গা একটা সময় মুম্বইয়ের সমর্থকদের হতাশ করেছিলেন, তাঁর হাত ধরেই আনন্দ ফেরে মুম্বই শিবিরে। মালিঙ্গা প্রথম তিন বলে দেন চার রান। চতুর্থ বলে শেন ওয়াটসন দু’রান নিতে গিয়ে রান আউট হতেই চেন্নাই চাপে পড়ে যায়। ওয়াটসন ৫৯ বলে আটটি বাউন্ডারি ও চারটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৮০ রান করেন। তিনি যদি শেষ বল পর্যন্ত থাকতেন, তাহলে চেন্নাই হয়তো চ্যাম্পিয়ন হতে পারত। অন্তিম বলে দরকার ছিল দু’রান। স্লোয়ার ইয়র্কার দেন মালিঙ্গা। ব্যাটসম্যান শার্দুল ঠাকুরের পায়ে লাগতেই আম্পায়ার কোনও দিকে না তাকিয়ে লেগ বিফোর দিয়ে দেন। জয়ের আনন্দে মেতে ওঠেন রহিত শর্মারা।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেয় মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। কিন্তু প্রথম দু’ওভারে মাত্র ১০ রান তোলে তারা। যদিও তৃতীয় ওভারে চেন্নাইয়ের পেসার দীপক চাহার তিনটি ছক্কা সহ মোট কুড়ি রান দেন। তখন মনে হয়েছিল, শক্তিশালী ব্যাটিং নিয়ে মুম্বই রানের পাহাড় তৈরি করবে। কিন্তু সেটা হয়নি। শার্দুল ঠাকুর চেন্নাই সুপার কিংসকে প্রথম সাফল্যটি এনে দেন। কুইন্টন ডি’কক ২৯ রানে ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক মহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে। রহিত ১৫ রানে আউট হন। ধোনি দুরন্ত প্রয়াসে তালুবন্দি করেন রহিতের ক্যাচটি। দ্বাদশ ওভারের দ্বিতীয় বলে ইমরান তাহির বোল্ড করেন সূর্যকুমার যাদবকে (১৫)। পরের ওভারে ক্রুনাল পান্ডিয়াকে (৭) আউট করে মুম্বইকে আরও চাপে ফেলে দেন শার্দুল। তুলে মারতে গিয়ে আউট হন ঈশান কিষাণ। ২৬টি বল খেলে মাত্র ২৩ রান করেন তিনি। দিল্লি ক্যাপিটালসের পেসার কাগিসো রাবাদাকে (২৫টি) টপকে দ্বাদশ আইপিএলের সর্বাধিক উইকেট সংগ্রহকারী হলেন ইমরান তাহির। ১৭টি ম্যাচে ২৬টি উইকেট নিয়ে বেগুনি টুপির মালিক হিসাবে টুর্নামেন্টের সেরা বোলারের পুরস্কারও জিতে নিলেন তাহির। ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের জন্য সুনাম রয়েছে কিয়েরন পোলার্ড ও হার্দিক পান্ডিয়ার। অনেকেই তাই ভেবেছিলেন, শেষ পাঁচ ওভারে মুম্বইয়ের স্কোর অনেকটা বাড়বে। কিন্তু তা হয়নি। চার রানে হার্দিকের সহজ ক্যাচটা যদি সুরেশ রায়না না ফেলতেন, তাহলে আরও খারাপ হাল হত মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের। জীবন পেয়ে হার্দিক একটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান। যখন তিনি বিপজ্জনক হয়ে উঠছিলেন, ঠিক তখনই দীপক চাহারের ইয়র্কারে লেগ বিফোর হয়ে মাঠ ছাড়েন । আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নেন হার্দিক। যদিও রিপ্লেতে স্পষ্ট হয়ে যায়, বলটি তাঁর ব্যাটে লাগেনি। ওই ওভারের চতুর্থ বলে রাহুল চাহার শূন্য হাতে ডাগ-আউটে ফেরেন। ১৯তম ওভারে দীপক চাহার মাত্র ৪ রান দিয়ে দু’টি উইকেট তুলে নেন। অন্তিম ওভারে কিয়েরন পোলার্ড ও ডোয়েন ব্র্যাভোর ডুয়েল দারুণ জমে উঠেছিল। প্রথম তিনটি বলে কোনও রান নিতে না পারায় পোলার্ড চাপে পড়ে যান। ব্র্যাভো যখন চতুর্থ বল করতে যাচ্ছিলেন তখন পোলার্ড সরে যান। আম্পায়াররা তাঁকে সতর্কও করেন। চতুর্থ বলে রান আউট হন মিচেল ম্যাকলেনাঘান (০)। শেষ দু’টি ডেলিভারিতে বাউন্ডারি হাঁকান পোলার্ড। শেষ পর্যন্ত তিনি ২৫ বলে ৪১ রানে অপরাজিত থাকেন। তাঁর ইনিংসে রয়েছে তিনটি বাউন্ডারি ও তিনটি ওভার বাউন্ডারি। চেন্নাইয়ের হয়ে শার্দুল ৪ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ২টি, দীপক চাহার ৪ ওভারে একটি মেডেন সহ ২৬ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। ইমরান তাহিরের ঝুলিতে গিয়েছে ২টি উইকেট। মুম্বইয়ের হয়ে বুমরাহ ৪ ওভারে ১৪ রান দিয়ে দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক হন।