যে কোনও ব্যবসার বৃদ্ধি ও অর্থকড়ি আয় বৃদ্ধি। ধর্মাচরণে মনযোগ বৃদ্ধি। বন্ধুর শত্রুতায় ক্ষতি। ... বিশদ
রবির যখন বছর পাঁচেক বয়স, তখনই তাঁর বাবা স্বপন টুডু মারা যান। দুই কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানকে নিয়ে প্রচণ্ড প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চলতে হয়েছে রবির মা জননী টুডুকে। জননী নিজে লেখাপড়া না জানলেও শিক্ষার প্রতি খুব অগাধ শ্রদ্ধা ও টান রয়েছে। তাই এত প্রতিকূলতার মধ্যে তিনি তাঁরা দুই কন্যাকে হাইস্কুল পর্যন্ত পাঠিয়েছেন, বিয়ে দিয়েছেন। দিনমজুরের কাজ করে ছেলে রবির পড়াশোনার যাবতীয় খরচ চালিয়ে যাচ্ছেন। জননী বলেন, আমার শরীর খারাপ হলে সংসারে হাঁড়ি চড়ে না। তবুও আমি ছেলের পড়াশোনার বিষয়ে কোনও আপস করিনি। যত কষ্ট হোক, ছেলের পড়াশোনার সমস্ত খরচ জুগিয়ে যাচ্ছি।
রবি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর হুগলির গোঘাট হাইস্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকেই মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। রবি বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল অধ্যাপক বা প্রশাসনিক আধিকারিক হওয়া। কিন্তু মাধ্যমিকের পরীক্ষাটা খুব খারাপ হওয়ায় (৫৩.৪২ শতাংশ নম্বর) খুব ভেঙে পড়েছিলাম। ভেবেছিলাম, আর বোধহয় পড়াশোনা হবে না। কিন্তু মায়ের কষ্টটা দেখে ফের মনোবল বাড়ে। মন দিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করি। এবার কলা বিভাগ থেকে ৪৭১ নম্বর পেয়ে আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বেড়েছে। ঝিমিয়ে যাওয়া স্বপ্ন আবার উজ্জীবিত হয়েছে। তবে, এই ফলের পিছনে মায়ের অবদান ছাড়াও স্কুলের সমস্ত শিক্ষকদের প্রচুর ভূমিকা রয়েছে বলে তিনি জানান।
রবির প্রাপ্ত নম্বর বাংলায় ৮৬, ইংরেজিতে ৯৫, ভূগোলে ৯৮, ফিজিক্যাল এডুকেশনের ৯৭, সংস্কৃতে ৯৫ এবং ইতিহাসে ৮৬। সবাই পাশে থাকার কারণে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা চালাতে তেমন সমস্যায় পড়তে হয়নি রবিকে। কিন্তু আগামী দিনে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সামনে অন্ধকার দেখছেন রবি। তিনি বলেন, অনার্স নিয়ে পড়ার প্রচুর খরচ। মায়ের ক্রমশ বয়স হচ্ছে। সব দিন কাজও যেমন করতে পারেন না। তেমনি প্রতিদিন কাজও পান না। তাই কী করে এগিয়ে যাব, তা নিয়ে খুব চিন্তায় রয়েছি। তাঁর মায়ের পক্ষে হস্টেলে থাকা, টিউশনি, বই কেনার খরচ চালানো সম্ভব হবে না। তাই কী করবেন তা নিয়েই চিন্তায় রয়েছেন।