উত্তরবঙ্গ

‘বর্তমান’-এর জন্মলগ্ন থেকে বাড়ি বাড়ি কাগজ দিচ্ছেন কোচবিহারের লালুচন্দ্র

সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: তখন দেশ সবে স্বাধীন হয়েছে। দেশ ভাগের সমস্যায় দীর্ণ গোটা উপ মহাদেশ। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলার জামালপুর সাবডিবিশন থেকে ছিন্নমূল একটি পরিবার চলে এসেছিল কোচবিহারে। বসবাস শুরু করে কোচবিহার শহর থেকে আট কিমি দূরে ট্যাঙ্গনমারি এলাকায়। শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। এই উত্তাল সময়ে লালুচন্দ্র দে নেহাতই নাবালক। কিন্তু কৈশোরে পা দিয়েই নামতে হয় কর্মজীবনে। বয়স তখন সবে মাত্র ১৩-১৪। পেশা, খবরের কাগজ বিলি। 
তারপর তোর্সা দিয়ে বয়ে গিয়েছে বহু জল। কংগ্রেস জমানা, বাম জমানা, বর্তমান শাসক দলের জমানাতেও সেই একই পেশায় রয়ে গিয়েছেন তিনি। ট্যাঙ্গনমারির লালুচন্দ্র দে এখন ৮৮ বছরের বৃদ্ধ। অথচ এখনও সকাল হলেই আশপাশের কিছু বাড়িতে তিনি নিয়মিত পৌঁছে দেন খবরের কাগজ। খালি চোখে খবরের কাগজ পড়েন। প্রখর স্মৃতিশক্তি তাঁর। তাঁর মনে আছে,সেই ষাটের দশকে কোচবিহারে সংবাদপত্র আসত বিমানে। ট্যাঙ্গনমারি থেকে সাইকেলে বিমানবন্দরে পৌঁছে সংবাদপত্র সংগ্রহ করে জেলাশাসকের বাংলোতে খবরের কাগজ দিয়ে কাজ শুরু করতেন তিনি। এরপর সারা কোচবিহার শহর। কত মানুষ, কত পরিবার, কত শিশু যে তাঁর হাত ধরে দিনের পর দিন বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলেছে তার কোনও ইয়ত্তাই নেই। 
তখন বাম জমানা। ১৯৮৪ সালের ৭ ডিসেম্বর প্রখ্যাত সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্ত ‘বর্তমান পত্রিকা’ প্রকাশ করেন। তাঁর বলিষ্ঠ কলম,নির্ভীক সাংবাদিকতা তখন সর্বজনবিদিত। বামপন্থী মানুষেরাও তাঁর লেখা খুঁজে পড়েন। সেই সময় শহরজুড়ে কাগজ দেওয়ার সুবাদে অনেকেই বরুণ সেনগুপ্তের লেখা পড়ার জন্য তাঁর কাছ থেকে ‘বর্তমান’ খবরের কাগজ সংগ্রহ করতেন। সেই সব দিনের কথা বলতে গিয়ে চোখের কোণে জল চিকচিক করে ওঠে অশীতিপর লালুচন্দ্রের। গলা বুজে আসে। 
ছিপ ছিপে শরীর নিয়ে সাইকেলে হাওয়া কেটে সময়ের আগে দৌড়তেন যুবক লালুচন্দ্র। বাবুরহাট, বিবেকান্দ স্ট্রিট, কালীঘাট রোড, পান্থশালা, নিউ কোচবিহার। তখন দিনের খবরের কাগজ দিনেই আসত। সত্তরের দশকের শুরুতে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ট্রেনে কাগজ আসা শুরু হলে একদিন পরে কলকাতা থেকে কাগজ এসে পৌঁছত উত্তরের এই প্রত্যন্ত জেলায়। সেই ‘বাসি’ খবরের কাগজই টাটকা সংবাদের স্বাদ এনে দিত বাসিন্দাদের। কারণ তখন টেলিভিশন ছিল না। সোশ্যাল মিডিয়া, ইন্টারনেট তো দূর অস্ত! এই সংবাদপত্র বিলি করেই আজীবন সংসার প্রতিপালন করেছেন লালুবাবু। এখন ছেলেরা বড় হয়েছে। তবু পাড়ার কিছু বাড়িতে নিয়মিত সংবাদপত্র পৌঁছে দিয়ে আসেন তিনি। পুরনো সেই সব দিনের কথা বলতে গিয়ে স্মৃতিমেদুর লালুচন্দ্র দে বলেন, ‘বর্তমান’ প্রকাশিত হওয়ার পর প্রথম দিকে ৫০-৬০টি কাগজ আসত। তারপর ‘বর্তমান’ এর চাহিদা বাড়তে শুরু করল। বহু সিপিএম নেতাও বর্তমান নিতেন। এই কাগজ বিক্রি করেই সবকিছু করেছি। এখনও খালি চোখে কাগজ পড়ি। কিছু বাড়িতে কাগজও পৌঁছে দিই। কোচবিহারের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক দেবব্রত চাকি বলেন, তখন ছোট ছিলাম। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কখন লালুচন্দ্র কাগজ দেবেন? সেই সময় থেকেই তাঁকে চিনি। খবরের কাগজ পড়ার হাতেখড়িই তাঁকে দিয়েই। 
উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতির অধ্যাপক ট্যাঙ্গনমারির বাসিন্দা আশুতোষ সরকার বলেন, আমার এখন ৬২ বছর বয়স। জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই লালুচন্দ্রকে কাগজ দিতে দেখছি। আজও আমার বাড়িতে তিনিই কাগজ দিয়ে যান। ব্যাঙ্ক কর্মী গৌতমকুমার ভাদুড়ি বলেন, গ্রামের দিকে বলে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম, যদি সময়মতো কাগজ না পাই! কাগজ, পত্রিকার টাকা নেওয়ার জন্য তাঁকে কিন্তু বারবার বলতে হতো।
দেশ, দুনিয়া, রাজ্যের খবর জানতে বর্তমান-এ নজর লালুচন্দ্র দে’র। ছবি: চন্দন দাস।
19d ago
কলকাতা
রাজ্য
দেশ
বিদেশ
খেলা
বিনোদন
ব্ল্যাকবোর্ড
শরীর ও স্বাস্থ্য
বিশেষ নিবন্ধ
সিনেমা
প্রচ্ছদ নিবন্ধ
আজকের দিনে
রাশিফল ও প্রতিকার
ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
mesh

পড়ে গিয়ে বা পথ দুর্ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্তির যোগ থাকায় সতর্ক হন। কর্মে  উন্নতি ও সাফল্যের যোগ।...

বিশদ...

এখনকার দর
ক্রয়মূল্যবিক্রয়মূল্য
ডলার৮৪.২৮ টাকা৮৬.০২ টাকা
পাউন্ড১০৪.৮৬ টাকা১০৮.৫৭ টাকা
ইউরো৮৬.৮৬ টাকা৯০.২০ টাকা
[ স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া থেকে পাওয়া দর ]
*১০ লক্ষ টাকা কম লেনদেনের ক্ষেত্রে
25th     December,   2024
দিন পঞ্জিকা