নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কেউ বলছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বাংলায় হয়তো তৃণমূলই ফের আসবে? আপনার মত কি? কেমন ফল হবে তৃণমূলের? প্রশ্নের উত্তরে খোলা মঞ্চে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব, ‘হয়ত নয়! আমরাই আসব। বাংলার মানুষের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা, ভরসা আছে।’ হাতে মাত্র একটি বছর। ২০২৬ সালে রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তারজন্য এখন থেকে সাংগঠনিক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। ১৩ বছর ধরে বাংলার শাসন ক্ষমতায় থাকা তৃণমূলের নবান্নে কর্মকাণ্ডের পরিধির বছর যে আরও সুদীর্ঘ হবে, সেটা ছক্কা হাঁকিয়ে জানিয়ে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একটি বৈদ্যুতিন সাংবাদ মাধ্যমের শুক্রবার সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে মমতা বলেন, ‘বাংলার মানুষ আমাদের কাজকে গ্রহণ করেছেন। আর সর্বধর্মের পীঠস্থান বাংলা। তাই তৃণমূল এক নম্বর স্থানে আছে, এক নম্বর স্থানেই থাকবে।’ রাজনৈতিক মহল মনে করছে, এই বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে ২০২৪ সালের শেষ মাসে দাঁড়িয়ে ২০২৬ সালের ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
বলাই বাহুল্য, যে বিজেপি ২০২১ সালে বাংলায় ২০০ আসন জয়ের টার্গেট নিয়েছিল, ফের ২৬’এ ক্ষমতা দখলের স্বপ্নে বিভোর, তাদের উদ্দেশেও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন মমতা। তাৎপর্যপূর্ণ হল, ছাব্বিশ সালের লড়াইয়ে মমতার সঙ্গী হবেন কী সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়? কেন না ওই অনুষ্ঠানেই মমতার কণ্ঠে যখন ছাব্বিশে ক্ষমতা ধরে রাখার প্রত্যয়ী সুর, তখন তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘সৌরভ বোল্ড আউট করবে।’ এই বক্তব্যের সূত্র ধরে ওই অনুষ্ঠানেই অপর এক প্রশ্নকর্তা জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে কি ছাব্বিশ সালে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় নাম দেখা যাবে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের? উত্তরে সৌরভ বলেন, আমি ক্রিকেট সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পরি। রাজনীতির বিষয়ে নয়। আর এটা সঠিক প্ল্যাটফর্ম নয় এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার। একইসঙ্গে মমতাও বলেন, ঠিকই বলেছে ও।
প্রশাসনিক থেকে দলীয় সব বিষয়ে এদিন বৈদ্যুতিন সাংবাদ মাধ্যমের ওই অনুষ্ঠানে সোজাসাপ্টা উত্তর দিয়েছেন মমতা। এমনকী অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থাকা দর্শকদেরও নিরাশ করেননি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সাংবাদিক, শিল্পপতি, শিক্ষাবিদ, চলচ্চিশিল্প, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সমাজসেবী—সকলের সব প্রশ্নের জবাব স্টেট ব্যাটে দিয়েছেন মমতা। দিল্লির রাজনৈতিক পরিসর সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ইন্ডিয়া জোট আমি তৈরি করেছি। আঞ্চলিক ও জাতীয় সব দলের সঙ্গে আমার ভালো সম্পর্ক। ইন্ডিয়া জোটে এখন যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের দেখা উচিত। আমি কলকাতায় বসেও চালিয়ে দিতে পারি। তবে আমি বাংলার মাটিতেই থাকতে ভালোবাসি। এখানেই জন্ম, এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করব। মহারাষ্ট্রে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তার স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মমতা। বলেছেন, স্থিতিশীল সরকার নয়। এক বছর চলতে পারে কি না, দেখা যাক।
গত কয়েকদিন ধরে তৃণমূলের অন্দরে জোর চর্চা চলছে আগামীদিন সংগঠনে কি কোনও বড়সড় রদবদল হতে চলেছে? বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে মমতা প্রশ্ন করা হয়, পরবর্তী উত্তরসূরি নিয়ে। তাঁর জবাবে তৃণমূল নেত্রী বলেন, তৃণমূল যৌথ পরিবার। আমিত্বে নয় আমসত্ত্বে বিশ্বাস করি। দলের সবাই যৌথভাবে ঠিক করবে। দল চলে সকলকে নিয়ে। ভোট কুশলী সংস্থা ‘আইপ্যাক’এর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক এখন কোনও পর্যায়ে? দু’পক্ষের মধুচন্দ্রিমা পর্ব যে শেষ হতে চলেছে, তা স্পষ্ট। তাঁর কথায়, যে কুশীল বিহারে নিজের দলকে জেতাতে পারে না, সে অন্যকে কীভাবে জেতাবে! ওরা টাকার বিনিময়ে শুধু সার্ভে করে। আর জি কর কাণ্ড নিয়ে প্রথম দিকে আন্দোলন অন্যকরম থাকলেও, পরে তাতে রাজনীতির রং লাগে। যা নিয়ে মমতা বলেছেন, প্ল্যানটেড গেম।