বৃহস্পতিবার, 19 জুন 2025
Logo
  • বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫

শুকনো পাতার মতো

বাড়ি ফিরছি। বাড়ি মানে মেস। শনিবার দুটোয় ছুটি। কিন্তু অনেকেই বেরয়নি। বিকেল পর্যন্ত তাস আর আড্ডা চলবে। আমিও থেকে যাই। আজ আর দাঁড়ালাম না। ছুটি হতেই বেরিয়ে পড়লাম।

শুকনো পাতার মতো

আশিস ঘোষ: বাড়ি ফিরছি। বাড়ি মানে মেস। শনিবার দুটোয় ছুটি। কিন্তু অনেকেই বেরয়নি। বিকেল পর্যন্ত তাস আর আড্ডা চলবে। আমিও থেকে যাই। আজ আর দাঁড়ালাম না। ছুটি হতেই বেরিয়ে পড়লাম।
এই মফস্‌সল শহরে অফিস ছুটির পর কিছুই করার থাকে না। কলকাতায় আড্ডা ছিল। কফি হাউস ছিল। সিনেমা ছিল। আর কিছু না হোক একা একা রাস্তায় ঘুরেও সময় কাটানো যেত। এখানে অফিস ছুটির পর যে যার বাড়ি চলে যায়। আমরাও মেসের ঘরে ফিরে আসি। আড্ডা দিই। তাস-টাস খেলি। টিভিও দেখি, নতুন কোনও ছবি এলে, সিনেমায় যাই। প্রথম প্রথম এখানে এসে খুব খারাপ লাগত। কলকাতাকে মনে পড়লেই মন খারাপ হয়ে যেত। কিন্তু আস্তে আস্তে সবকিছুতেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। কী আর করা। মানিয়ে নিতেই হবে।
বাসস্ট্যান্ডের মোড়ে একটি দোকানের শেডে দাঁড়ালাম। একটানা এতটা রাস্তা হাঁটায় চোখ মুখ জ্বালা করছে। ধানবাদের বাস দাঁড়িয়ে। একটু পরেই ছাড়বে। বড় বড় সব পেটি ছাদে তোলা হচ্ছে। বাস ভর্তি লোক। ওঠার জন্যে এখনও অনেকে নীচে দাঁড়িয়ে।
রুমালে মুখ মুছে সিগারেট ধরালাম। কাল সকালে এখান থেকে আমাকেও বাসে উঠতে হবে। দুর্গাপুর যেতে ঘণ্টা দুয়েক। তারপর কলকাতার ট্রেন। ব্যস! এক মাস ছুটি। আবার কি এখানে ফিরে আসতে হবে? কলকাতায় যে ইন্টারভিউটা আছে, চাকরিটা যদি হয়ে যায়? সিগারেটে টান দিয়ে, ওপর দিকে ধোঁয়া ছাড়লাম। প্রায় দু’বছর পর বাড়ি ফিরছি। অবশ্য সহকর্মীরা  আমাকে বিশ্বাস করে না। ‘রুম মেট’ গৌতমের ধারণা তদবির করে এখান থেকে ট্রান্সফারের চেষ্টায় আছি। ইন্টারভিউয়ের ব্যাপারটা এখনও কাউকে বলিনি। ভাবুক না যা খুশি।
সিগারেটের টুকরোটা পাশের নর্দমায় ফেলে, মেসের রাস্তা ধরলাম। খানিকটা যেতেই বাজার পেরিয়ে কালীতলা। মন্দিরের পাশের গলি দিয়ে একটু এগলেই মেস বাড়ি। গলিতে ঢুকতে যাব, পেছনে গাড়ির শব্দ, রাঁচির বাস ফিরছে। তার মানে পৌনে তিনটে। গলিটা ফাঁকা। কেউ হাঁটছে না। মেস বাড়ির বড় ফটকের অর্ধেকটা বন্ধ। রাস্তার কলে বালতি জমতে শুরু করেছে। জল এলেই ছুটোছুটি শুরু হবে। একটা ছোট ছেলে, সাইকেলের চাকা ঘোরাতে ঘোরাতে এদিকেই আসছে। ঘষা লোহায় রোদ পড়ে ঝলসে উঠছে। গোল চাকাটা গড়াতে গড়াতে ক্রমশ যেন বড় হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটা ছুটতে ছুটতে পেছিয়ে পড়ছে। ফাঁকা গলির দু’পাশের বাড়িগুলো হঠাৎ যেন আরও উঁচু হয়ে গেল। ছেলেটাও হাওয়ায় ভাসছে। চাকাটা গড়াতে গড়াতে সামনে আসতেই, পাশে সরে গেলাম। ‘রিন-রিন’ শব্দে চাকাটা টাটা রোডের দিকে ছুটে গেল।
ঘরের দু’দিকে দুটো খাট। গৌতমের বিছানা-পত্তর গোটানো। তাড়াহুড়োয় আমারটা সকালে গোছানো হয়নি। বাঁদিকের জানলায় একটা কাক বসেছিল। সাড়া পেতেই উড়ে গেল। জুতো খুলতে খুলতে গৌতমের খাটেই বসলাম। ও এখনও ফেরেনি। সাইকেলটাও দেখছি না। জামা-টামা খুলে এখন একটু গড়িয়ে নিই। পাশের ঘরে রেডিও চলছে— ‘কেন রে এতই যাওয়ার তাড়া...’। কাল থেকে অফিসের পর এ ঘরে আর ফিরতে হবে না। নীচের ওই গলি, ও-পাশের বড় রাস্তা কালীতলা বাজার পেরিয়ে রোজ অফিসে যাব না। রেডিও বন্ধ হল। সাড়ে তিনটে। রাস্তার কলে বোধহয় জল এল। বালতির শব্দ শুনে শুয়ে শুয়েই একটু চোখ বুজে এল। সন্ধের দিকে সমীরদার বাড়ি যাব একবার। অফিসে আসছেন না। অসুস্থ। যাওয়ার আগে ইলার সঙ্গেও দেখা করা দরকার। ইলা মানে সমীরদার বোন।
পাশের ঘরে দরজা খোলার শব্দ। কেউ এল বোধহয়। মেসের সব বোর্ডাররাই এখন ফিরতে শুরু করবে। এবার বেরনো দরকার। জানলার পাল্লায় বসে দুটো কাক একসঙ্গে ডাকতেই উঠে বসলাম। খাটের নীচ থেকে বাক্সটা টেনে বের করলাম। সব গুছিয়ে নিই। আচ্ছা, ওবাড়িতে গিয়ে যদি দেখি, গৌতমও গিয়েছে? ওর সঙ্গে আমার ঠান্ডা লড়াই আছে। এই লড়াইয়ের কারণ অবশ্য ইলা। কাল থেকে লড়াইয়ের একজন যোদ্ধা ছুটি নিচ্ছে। গৌতম কি খুশি হবে? ইলা তুমি? আজকাল অবশ্য নিয়মিত তোমাদের বাড়ি আর যাই না। উৎসাহ পাই না। রোজ রোজ বাইরের ঘরে বসে শুধু কথার খেলা আর ভালো লাগে না। গলা শুকিয়ে আসে। অস্বস্তি হয়। আমরা দু’জনেই যেন টেলিফোনের রিসিভার মুখে লাগিয়ে বসে থাকি। শুধু কথা আর কথা। কতদিন ভালো লাগে? ইলাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। বাইরের ঘরে আলো জ্বলছে। পাশের বাড়িতে খুব জোরে টিভি চলছে। হাসির শব্দ। কড়া নাড়লে কী শুনতে পাবে? দরজায় ধাক্কা দিলাম। সাড়া শব্দ নেই। এবার কড়া নাড়লাম।
—কে?
উত্তর দিলাম না। আবার কড়া নাড়লাম। দরজা খোলার শব্দ। ইলার মুখ উঁকি দিল। আসুন—
—সমীরদা কেমন আছেন?
—ভালো না, দরজা ছেড়ে ইলা পাশে সরে দাঁড়াল। কাল তো সারারাত প্রায় বেহুঁশ ছিলেন।
ভেতরে যেতে যেতে বললাম— বউদি কোথায়?
—ডাক্তারের কাছে গেছে। বসুন আপনি— ইলা ভেতর দিকে সরে গেল। ঘরে গিয়ে সোফায় বসলাম। সেই ঘর। অনেক সন্ধ্যা এখানে কাটিয়েছি। উল্টোদিকের দেওয়ালে ছৌ নাচের মুখোশটা এক ভাবেই ঝুলছে। সামনের নিচু টেবিলে ছাই ভর্তি অ্যাসট্রে। ডানদিকে বইয়ের আলমারি। ঠিক ওপরেই দেওয়াল ঘড়ি। সাতটা পাঁচ। বাঁদিকের জানলা এখন বন্ধ। কাচের শার্সির বাইরেটা অন্ধকার।
ইলা সামনেই  দাঁড়িয়ে। ঘরের চারদিক আর একবার দেখে নিয়ে বললাম— সমীরদা কোন ঘরে?
ইলা পাশের ঘর দেখাল —আসুন।
ওর পেছন পেছন গেলাম। হাল্কা নীল আলো জ্বলছে। ওষুধের গন্ধ। সমীরদা চোখ বুজে শুয়ে। বিছানার পাশে দাঁড়ালাম। সামনেই নিচু টুলে তিনটে ওষুধের শিশি। কাচের গ্লাস। দরজার পাশে বড় টেবিলটায়  ফ্লাস্ক। কমলালেবু দুটো, হেলথ ড্রিংকসের কৌটো। ইলা আমার দিকেই চেয়েছিল। চোখাচোখি হতেই বললাম, আজ ডাক্তার এসেছিলেন? 
টুলটা একটু পাশে সরাতে সরাতে ইলা বলল, সকালে একবার এসেছিল—
—কী বলছেন?
মুখ নিচু করে বলল, কিছুই তো বলেনি—
সমীরদাকে দেখলাম। চোখ বুজে একভাবেই শুয়ে। একটু নড়ছেন না। ইলা বালিশটা একটু উঁচু করে দিচ্ছে। সামনে ঝুঁকে সমীরদার ডান হাতটা একবার ছুঁয়েই পিছিয়ে এলাম। দারুণ গরম। কত টেম্পারেচার, কে জানে। পাশের বাড়িতে টিভি বন্ধ হতেই এ বাড়ির দরজায় শব্দ হল।
বউদি এল বোধহয়— ইলা দরজার দিকে এগল।
আমি আর ইলা এখন বাইরের ঘরে। অরুণা বউদি বাড়ির ভেতরে আছে কোথাও। এই ক’দিনের ধকলেই মুখের চেহারা পাল্টে গিয়েছে। ছোটাছুটির পরিশ্রম। দুঃশ্চিন্তাও তো কম নয়। সমীরদার যদি কিছু হয় তো, এরা দাঁড়াবে কোথায়?
ইলা উল্টোদিকের সোফায় বসে, কী একটা বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছে। ওকে আজ বড্ড বেশি গম্ভীর দেখাচ্ছে। কেমন যেন বিষণ্ণ। বইয়ের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে মাঝে মাঝে দেওয়াল ঘড়িটার দিকে চাইছে। অন্যমনস্কভাবে আমাকে দেখছে। আবার বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছে। নিজেকে এখন খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে। সমীরদা অসুস্থ জেনেও, এ ক’দিনে একবারও আসিনি। অথচ এ বাড়িতে কতবার এসেছি। এখানে চাকরিতে এসে প্রথম প্রথম সময় কাটতে চাইত না। খুব একঘেঁয়ে লাগত। একদিন সমীরদার সঙ্গে এসে অরুণা বউদি, ইলা— এঁদের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর থেকে, সময় পেলেই চলে আসতাম। গল্প-টল্প করে সময় কাটত। আজ এখানে আসার আগে কত কথাই তো ভাবছিলাম। এই অসুস্থ লোকটাকে ক’বার মনে পড়েছে?
দেওয়াল ঘড়িতে শব্দ হল। সাড়ে আটটা। ইলা একভাবেই মুখ নিচু করে বইয়ের পাতা ওল্টাচ্ছে। এভাবে কতক্ষণ আর বসে থাকা যায়? একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বললাম, গৌতম এসেছিল?
মাথা নেড়ে ইলা বলল, বিকেলে এসেছিলেন। বউদি কী একটা ওষুধ আনতে দিয়েছে—।
একটু ইতস্তত করে বললাম, কাল কলকাতা যাচ্ছি। ইন্টারভিউ আছে। চাকরিটা হয়ে যেতে পারে।
ইলা সোজা হয়ে বসল। একভাবে চেয়ে থেকে আস্তে আস্তে বলল, দাদাকে বলেছিলেন? বউদি জানেন?
মাথা নেড়ে বললাম, বলা আর হল কই?
উঠে দাঁড়িয়ে ইলা বলল, দাঁড়ান, বউদিকে খবরটা দিই— বলতে বলতে পর্দা সরিয়ে ভেতরের ঘরে গেল।
এখন নিজেকে খুব বোকা মনে হচ্ছে। কলকাতায় যাব না কোথায় যাব, ‘ইন্টারভিউ’ দেব নাকি আর কিছু করব— এসব না বললেই হতো। ওরা নিজেদের ঝামেলায় আছে, আমি কী করব না করব, তা শোনার মতো মানসিক অবস্থা কি ওদের আছে? আসলে এটাই আমার দোষ। কখন কী বলতে হয়, কীভাবে বলতে হয়, জানি না। এখানে আসার আগে ইলার কথাই তো ভাবছিলাম। যাওয়ার আগে ওর সঙ্গে একবার দেখা করতে চেয়েছিলাম। শুধুই কী দেখা, নাকি অন্য কোনও ইচ্ছা ছিল? সেই ইচ্ছাকে প্রকশ করার মতো সাহস আমার আছে?...
বউদি চা নিয়ে এল। পিছনে ইলা। হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিতে নিতে বললাম আবার চা কেন? সোফায় বসতে বসতে বউদি বলল, শুধু তো চা। শুনলাম, কাল চলে যাচ্ছেন?
পাশে দাঁড়িয়ে ইলা আমার দিকেই চেয়ে আছে। তাড়াতাড়ি বললাম, ছুটি নিয়েছি। চলে যাচ্ছি না।
বউদি ইলার দিকে চাইল, ও বলছিল কলকাতায় নাকি চাকরি পাচ্ছেন? ভালো খবর তো। 
—চাকরি কোথায়? ইন্টারভিউ পেয়েছি।
বউদি মাথা নাড়ে। —চাকরিটা হতেও পারে। হলেই ভালো। এখানে থেকেই বা কী করবেন? বউদি মাথা নিচু করল। আমাদের  অবস্থা তো দেখতেই পাচ্ছেন। কী যে হবে।
বউদির পাশে উল্টোদিকের সোফায় বসেছে ইলা। আবার আমার মুখোমুখি। কেউ কোনও কথা বলছি না। দেওয়াল ঘড়িতে টিকটিক শব্দ। দেওয়ালে টাঙানো ছৌ নাচের মুখোশটা কেমন যেন বিশ্রীভাবে চেয়ে আছে। মুখোশের পাশেই সাদা একটা টিকটিকি। আস্তে আস্তে ওপরে উঠছে। আমরা চুপচাপ বসে। এমন এক একটা মুহূর্ত আসে, যখন কথা না বলে, চুপ করে থাকতেই ভালো লাগে। কোনও কথা না বলেই অনেক কথা বলা হয়ে যায়। এভাবে কতক্ষণ আমরা বসে রইলাম খেয়াল নেই, হঠাৎ পাশের ঘরে শব্দ হতেই বউদি উঠে দাঁড়াল। —আসছি বলেই বেরিয়ে গেল। ইলা উঠতে গিয়েও বসে রইল। টেবিল থেকে বইটা তুলে নিয়ে পাতা ওল্টাতে থাকল। দেওয়াল ঘড়িতে রাত ন’টার শব্দ।
আরও কিছুক্ষণ পর এবাড়ি থেকে বেরলাম। টাটা রোড ধরে এখন কালীতলার দিকে যাব। একটা রিকশ পেলে ভালো হতো। ইলাদের বাড়ির দিকে চাইলাম। বাড়িটা এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। বাইরের ঘরে আলো জ্বলছে। পরিষ্কার জ্যোৎস্নায় সাদা একতলা বাড়িটা নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে আছে। সমীরদার শুয়ে থাকা চেহারাটা মনে পড়ল। বউদির কী চেহারা হয়েছে। রুক্ষ চুলে চিরুনি পড়েনি। চোখ বসা। মুখে অসমান রেখা। ইলাকেও শুকনো দেখাচ্ছিল। কেমন যেন অন্যমনস্ক। মুখ তেতো লাগছে একটু জল খেলে হতো। উল্টোদিক দিয়ে একটা সাইকেল এসে ইলাদের বাড়িটার সামনে দাঁড়াল। গৌতম। কড়া নাড়ার শব্দ। কেউ সাড়া দিচ্ছে না। দরজায় ধাক্কা পড়ল। পাশের বারি টিভিতে রাতের খবর হচ্ছে। দরজা খোলার শব্দ। একটা মুখ উঁকি দিল। ইলা বোধহয়। গৌতমকে ভেতরে আসতে বলে, একটু কী পাশে সরে দাঁড়াল। ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম। হাত নেড়ে কী যেন বলতে বলতে গৌতম সাইকেলটা নিয়েই ভেতরে ঢুকে গেল।...
এখন বাড়িটার দিকে চেয়েই দাঁড়িয়ে আছি। বাইরের ঘরে আলো জ্বলছে। কোনও শব্দ নেই। চাঁদের আলোয় রাস্তা, মাঠ, গাছ, বাড়ি— সব পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। একটা রিকশ এদিকে আসছে। সামনের আলোটা কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে আসছে। দমকা হাওয়ায় কিছু শুকনো পাতা পিচের রাস্তায় গড়িয়ে যেতেই মেস বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করলাম।