বুধবার, 21 মে 2025
Logo
  • বুধবার, ২১ মে ২০২৫

‘আধ ঘণ্টার ব্যবধান না হলে জীবনের শেষ ট্যুর হয়ে যেত’, নৃশংস জঙ্গি হানার সাক্ষী বারাসতের দুই দম্পতি

‘ভাগ্যিস আধ ঘণ্টা আগে বৈসরণ ভ্যালি ছেড়েছিলাম। নাহলে হয়তো এটাই হতো জীবনের শেষ ট্যুর।’ ফোনের ওপারে কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়া বারাসতের নবপল্লির বাসিন্দা নবনীতা ভট্টাচার্য বাগচি ও অর্পিতা ভট্টাচার্য।

‘আধ ঘণ্টার ব্যবধান না হলে জীবনের শেষ ট্যুর হয়ে যেত’, নৃশংস জঙ্গি হানার সাক্ষী বারাসতের দুই দম্পতি

নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাসত: ‘ভাগ্যিস আধ ঘণ্টা আগে বৈসরণ ভ্যালি ছেড়েছিলাম। নাহলে হয়তো এটাই হতো জীবনের শেষ ট্যুর।’ ফোনের ওপারে কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়া বারাসতের নবপল্লির বাসিন্দা নবনীতা ভট্টাচার্য বাগচি ও অর্পিতা ভট্টাচার্য। তাঁদের গলায় এখনও আতঙ্কের সুর। পহেলগাঁও পর্যটকদের কাছে ‘মিনি সুইজারল্যান্ড’ হিসেবেই পরিচিত। সেখানে বেড়াতে গিয়ে বীভৎসতার সাক্ষী থাকল দুই পরিবার। মঙ্গলবার দুপুরে নিরিবিলি ভূস্বর্গে জঙ্গি হামলার কয়েক মুহূর্ত আগে অকুস্থলের কাছেই একটি খাবারের স্টলে দাঁড়িয়ে ঠান্ডা পানীয় ও ভেলপুরী খায় দুই পরিবার। তারপর ভ্যালি থেকে ঘোড়ায় চড়ে তাঁরা যান পহেলগাঁও বাজারে। সেখানে গিয়ে শোনেন জঙ্গি হানার কথা। একরাশ আতঙ্ক নিয়ে সেখান থেকে হোটেলে ফেরেন তাঁরা। যাত্রাপথে সেনা জওয়ানদের আনাগোনা, অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ শুনেই তাঁরা বুঝেছিলেন কতটা ভয়ঙ্কর ছিল বৈসরণ ভ্যালি।
বারাসতের নবপল্লির গুপ্ত কলোনির বাসিন্দা নবনীতা ভট্টাচার্য বাগচি পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। স্বামী শান্তনু বাগচি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। অর্পিতা ভট্টাচার্য নবনীতার বান্ধবী। তিনিও শিক্ষকতা করেন। তাঁর স্বামী সত্যব্রত ভট্টাচার্য একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। থাকেন নবপল্লিতেই। দুই দম্পতি গত ১৬ এপ্রিল কাশ্মীরে বেড়াতে যান। তাঁরা উঠেছিলেন পহেলগাঁওয়ের একটি হোটেলে। মঙ্গলবার সাইড ট্যুরে ছিল বৈসরণ ভ্যালি। পহেলগাঁও থেকে বৈসরণের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টায় পহেলগাঁও থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ১০ কিলোমিটার যাওয়ার পর বিরতি। তারপর আর রাস্তা নেই। হয় হাঁটা, না হয় ঘোড়া। তাঁরা ঘোড়া সাফারিতেই ওই দুর্গম পথ ধরে যান বৈসরণ ভ্যালিতে। দুপুর দেড়টা নাগাদ ঘোড়ায় চড়েই ফিরেছেন গাড়ি পর্যন্ত। রাস্তার ধারে খাবারের দোকান দেখে সেখানেই বসে পড়েন খেতে। সেই সময় গাড়িচালকের কাছ থেকেই তাঁরা প্রথম জঙ্গি হামলার ঘটনা জানতে পারেন। আনন্দের মুহূর্ত নিমেষে পরিণত হয় আতঙ্কে। তড়িঘড়ি হোটেলে পৌঁছন তাঁরা। রাস্তায় তখন পর্যটকদের গাড়ির ভিড়। সকলেই দ্রুত ফিরতে চাইছেন হোটেলে। উল্টোদিকের রাস্তা ফাঁকা ছিল। সেই পথে শুধু পুলিস আর জওয়ানদের গাড়ির যাতায়াত। সঙ্গে সেনা অফিসারদের কনভয় থেকে অ্যাম্বুলেন্স।
ততক্ষণে সারা দুনিয়া জেনে গিয়েছে জঙ্গি হামলার কথা। আত্মীয়, পরিচিতদের ঘন ঘন ফোন— কী, ঠিক আছো তো? হোটেলে কি ফিরতে পেরেছ? এভাবেই আতঙ্কের মধ্যে দিনের বাকি সময় কেটেছে নবনীতা, অর্পিতাদের।
রাতে হোটেল মালিক থেকে স্থানীয় মানুষ জঙ্গি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে মোমবাতি মিছিল করেছেন। স্লোগান উঠেছে, ‘সন্ত্রাস নয়, পর্যটক চাই।’ হোটেলের ঘর থেকে এই স্লোগান শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হয়েছে দুই দম্পতি। বুধবার সকালেই তাঁরা গুলমার্গের পথে রওনা দেন। এদিন কার্যত বন্ধের চেহারা নিয়েছিল গোটা এলাকা। নবনীতা ফোনে বললেন, বৈসরণ ভ্যালিতে প্রচুর পর্যটক ছিল। বেশ কয়েকটি খাবারের স্টলও ছিল। সেখানে ভেলপুরী খেয়ে ঘোড়ায় চড়ে ফিরেছি। ভাগ্যিস ফিরেছিলাম। না হলে হয়তো আমরাও জঙ্গিদের বুলেটে ঝাঁঝরা হয়ে যেতাম। অর্পিতা বললেন, পুলওয়ামা হামলার কথা বাড়ি বসে শুনেছিলাম। এবার তো আমরাই জঙ্গিদের টার্গেট হয়ে গিয়েছিলাম।