শনিবার, 17 মে 2025
Logo
  • শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

নাম বিভ্রাট!

মনোরম পরিবেশ। সবুজে ঘেরা চারদিক। সেই জায়গার নাম নাকি আইসল্যান্ড! আবার গ্রিনল্যান্ডের কথা যদি ধরা যায়। নাম শুনে সেই জায়গায় রাশি রাশি গাছ আছে বলে মনে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই জায়গা বরফের চাদরে ঢাকা!

নাম বিভ্রাট!

শান্তনু দত্ত: মনোরম পরিবেশ। সবুজে ঘেরা চারদিক। সেই জায়গার নাম নাকি আইসল্যান্ড! আবার গ্রিনল্যান্ডের কথা যদি ধরা যায়। নাম শুনে সেই জায়গায় রাশি রাশি গাছ আছে বলে মনে হবে। কিন্তু বাস্তবে সেই জায়গা বরফের চাদরে ঢাকা! এই দুই দেশের নামকরণে এমন বিভ্রাট কেন? আসলে এই দুই দেশের নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে মজার গল্প। কী সেই গল্প? আজ জেনে নেওয়া যাক। 
গ্রিনল্যান্ড পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপ। এই দেশে সবুজের পরিমাণ খুব কম। দ্বীপটির ৮০ শতাংশ ভরা বরফে। আর আইসল্যান্ড হল উত্তর আটলান্টিক ও আর্কটিক মহাসাগরের মাঝে একটি দ্বীপরাষ্ট্র। সেখানে মাত্র ১১ শতাংশ ভূমি বরফে ঢাকা। বাকি ভূখণ্ড সবুজ। আসলে আগেকার দিনে একটা প্রথা ছিল। কোনও নতুন জায়গায় পৌঁছে মানুষ প্রথমে যা দেখতেন, সেই অনুযায়ী ওই জায়গার নামকরণ করা হতো। যেমন ধরা যাক ফ্লোরিডার কথা। স্পেনের অভিযাত্রীরা সেখানে পৌঁছেছিলেন বসন্তকালে। সেই সময় ওই জায়গা ফুলে ভরা। তাই নাম দেওয়া হয়েছিল ফ্লোরিডা। অর্থাৎ ফুলের দেশ। কথিত আছে, নবম শতকে নরওয়ের ভাইকিং বা জলদস্যু নাদাদর প্রথম আইসল্যান্ডে আসেন। তখন ওই অঞ্চলে শীতকাল চলছিল। তুষারপাত দেখে তিনি এলাকার নামকরণ করলেন ‘আইসল্যান্ড’। শীতকাল চলে যাওয়ার পর আইসল্যান্ডের উর্বর জমি আর সবুজ পরিবেশ মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। গড়ে ওঠে জনবসতি। সেই সময় এরিক দ্য রেড নামের এক জলদস্যুকে খুনের অপরাধে নির্বাসিত করা হয়। খুঁজতে খুঁজতে পার্শ্ববর্তী একটি দ্বীপে যান তিনি। সেই দ্বীপ ছিল বরফে ঢাকা। এরিক উপলব্ধি করেন, এই দ্বীপকে জনপ্রিয় করে তুলতে না পারলে তাঁকে সারাজীবন সেখানে একা কাটাতে হবে। বরফের মধ্যে দিনযাপন করাও কঠিন হয়ে উঠবে। তখন একটি কৌশল করেন তিনি। দ্বীপটির নাম দেন গ্রিনল্যান্ড। সেই নাম শুনে অনেকে বসতি স্থাপনের জন্য এই দ্বীপের প্রতি আকৃষ্ট হন। আরও একটি মতে, এরিক গ্রিনল্যান্ডের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে গিয়েছিলেন। তখন সেখানে গ্রীষ্মকাল। তাই পরিবেশ হিমশীতল ছিল না। এমনকী, এত বরফও তিনি পাননি। তাই জায়গার নামকরণ করেন ‘গ্রিনল্যান্ড’। অন্যদিকে, ভাইকিংরা বসতি স্থাপনের আগে থেকে গ্রিনল্যান্ডে থাকতেন ইনুয়িত জাতিগোষ্ঠী। তাঁদের কাছে কালালিত নুনাত বা দ্য ল্যান্ড অব দ্য পিপল নামে পরিচিত গ্রিনল্যান্ড। 
 আইসল্যান্ড প্রসঙ্গে আরও একটা গল্প রয়েছে। নাদাদরের পর উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের দ্বীপ আইসল্যান্ডে আসেন সুইডিশ ভাইকিং গারোর সভাভারোসন। আইসল্যান্ডের পরিবর্তে নিজের নামে ওই জায়গার নামকরণ করেন তিনি। নাম হয় ‘গারোর দ্বীপ’। আইসল্যান্ড এখনও এই নামে পরিচিত। এরপর ভাইকিং ফ্লোকি ভিলগারোরসন এখানে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আসার পথে তাঁর মেয়ে নৌকা থেকে পড়ে মারা যায়। ভেঙে পড়েন ফ্লোকি। রাগে ও হতাশায় ফ্লোকি ফের দ্বীপের নামকরণ করেন আইসল্যান্ড। তিনি চেয়েছিলেন যে দ্বীপে আসতে গিয়ে তিনি নিঃস্ব হয়েছেন, সেখানে যেন অন্য কেউ না আসেন। পরে নিজের দেশে ফিরে গিয়ে এই গল্প ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন ফ্লোকি। তবে, তাঁর সঙ্গে নাবিকদলে থাকা থারোফ প্রচার করেন, আইসল্যান্ডের সৌন্দর্য। পরে সেখানে জনবসতি গড়ে উঠলেও নাম আর পরিবর্তন করা হয়নি। আবার অনেকে বলেন, ভাইকিংদের ভয় ছিল, সবুজ দ্বীপের কথা জানতে পারলে শত্রুরা সেখানে আক্রমণ করতে পারেন। সেই কারণে নামকরণ করা হয় আইসল্যান্ড।