কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
মাছ চাষের জন্য কেমন হবে ট্যাঙ্ক?
গোলাকার ট্যাঙ্কই ভালো। তবে, চারকোণা হলেও চলবে। মোটা পলিথিন বা সিমেন্ট দিয়ে এই ট্যাঙ্ক তৈরি করা যেতে পারে। মৎস্য আধিকারিকরা বলছেন, ট্যাঙ্কে মাছ চাষের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, জল। গভীর নলকূপের জল ব্যবহার করতে হবে। ট্যাপের জল দেওয়া যাবে না। কারণ, ওই জলে ক্লোরিন বা ক্লোরোমিন থাকে। যা অ্যামোনিয়া বাড়িয়ে দিতে পারে। ফলে মাছের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ট্যাঙ্কে মাছ চাষের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অক্সিজেন। দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ ৪-৬ পিপিএম থাকা উচিত। জলে অক্সিজেনের মাত্রা কমে গেলেই মাছ মরতে শুরু করবে। সেজন্য সবসময় এয়ার পাম্পের ব্যবস্থা রাখতে হবে। অক্সিজেন মাপার জন্য হাতের কাছে কিট না থাকলে জলের তাপমাত্রা মাপতে হবে। শীতে যেন জলের তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির নীচে না নামে। আর গরমের সময় যেন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির বেশি না হয়। মাছ মুখ খুলে মারা গেলে বুঝতে হবে, জলে অক্সিজেনের ঘাটতি রয়েছে। জলের সঠিক লবণাক্ততা বজায় রাখাও জরুরি। কারণ, লবণ জলে অক্সিজেন ধরে রাখতে সাহায্য করে। নিয়ন্ত্রণে রাখে জলের পিএইচ। যা মাছের ক্লান্তি দূর করে। মাছের খাবার হজমে সাহায্য করে। অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বাড়তে বাধা দেয়। নাইট্রেট কমাতে সাহায্য করে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার শস্য শ্যামলা কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিষয়বস্তু বিশেষজ্ঞ (মৎস্য) ড. স্বাগত ঘোষ জানিয়েছেন, ট্যাঙ্কে মাছ চাষের ক্ষেত্রে যদি জল পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকে, ভালো। নতুবা প্রতিদিন ৫ শতাংশ করে জল বের করে দিতে হবে। এবং সম পরিমাণ নতুন জল যোগ করতে হবে ট্যাঙ্কে। সেইসঙ্গে ট্যাঙ্কের নীচে জমা হওয়া মাছের বর্জ্য পরিষ্কার করে দিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, প্রতি লিটার জলে যেন একটি করে মাছ থাকে। ট্যাঙ্কে বুঝেশুনে খাবার দিতে হবে। অতিরিক্ত খাবার দিলে তা যেমন নষ্ট হবে, তেমনই জল তাড়াতাড়ি খারাপ হয়ে যাবে। মৎস্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেলাপিয়া কিংবা পাঙ্গাস মাছের ক্ষেত্রে ভাসমান খাবার দেওয়া উচিত। কিন্তু শিঙি, মাগুরের ক্ষেত্রে ভাসমান খাবার দিয়ে অযথা বেশি টাকা খরচের প্রয়োজন নেই। তাঁদের সুপারিশ, যদি জলের পিএইচ কমে যায়, তা হলে সরাসরি চুন প্রয়োগ করতে হবে। কিন্তু যদি পিএইচ বেড়ে যায়, তা হলে তেঁতুল-জল যোগ করা যেতে পারে। জলে পিএইচ কমেছে কি না কীভাবে বোঝা যায়? মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলে পিএইচ কমলে মাছ অস্বাভাবিকভাবে সাঁতার কাটে। পাখনা ঝাপটায়। মাছের মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায়। মাছের বৃদ্ধি কমে যায়। ফুলকা দিয়ে পিচ্ছিল পদার্থ বের হয়। আবার যদি জলে পিএইচ বেড়ে যায়, তা হলে মাছের চোখ রক্তবর্ণ হয়। কুঁচকে যায় চামড়া। ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও জুপ্ল্যাঙ্কটন জলে থাকলে দিনের বেলা পিএইচ বাড়ে। আবার রাতে কমে যায়। ট্যাঙ্কে মাছ চাষে জলের অম্লত্ব পরিমাপের পাশাপাশি ক্ষারত্বও মাপতে হবে, বলছেন মৎস্য আধিকারিকরা। এসব মাপার জন্য বাজারে কিট কিনতে পাওয়া যায়। মৎস্য বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাছের খাবারের সঙ্গে অ্যামোনিয়ার গভীর সম্পর্ক। খাবার গ্রহণের পর ফুলকা ও মলমূত্র দিয়ে মাছ অ্যামোনিয়া গ্যাস ছাড়ে। ফলে বেশি খাবার প্রয়োগ ও বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার দিলে বেশি অ্যামোনিয়া তৈরি হয়।