বিপুলশঙ্কর বসু, ইটাহার: উত্তর দিনাজপুর জেলার চাষিদের মধ্যে ভুট্টা চাষ নিয়ে আগ্রহ দিনদিন বেড়েই চলেছে। গতবছর জেলায় ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছিল। এবছর যার পরিমাণ অনেকটাই বেড়েছে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গতবছর  জমিতে ভুট্টা ফলিয়ে ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। ফলে এবছর এই চাষে আগ্রহ তাঁদের অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে এক প্রকারের পোকার আক্রমণে ভুট্টা  চাষে ক্ষতির পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। সেই আশঙ্কায় জেলাজুড়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে পোকা দমনে সচেতনতা বৃদ্ধি ও তার মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় কীটনাশক যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায়, তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে, উন্নতমানের  ভুট্টার শোধিত বীজ  যাতে জেলার চাষিরা কম দামে পেতে পারেন, সেজন্য নানা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে কৃষি দপ্তরের পক্ষ থেকে।
উত্তর দিনাজপুর জেলার যুগ্ম কৃষি অধিকর্তা  বি মোহন রাজা রেড্ডি বলেন, মুরগির খাদ্য হিসেবে পোল্ট্রি ফার্মগুলিতে ভুট্টার চাহিদা ব্যাপক।  তাছাড়া গত বছর পশ্চিমবঙ্গ বাদে অন্যান্য রাজ্যে ভুট্টা চাষ মার খেয়েছিল। স্বাভাবিকভাবে এ রাজ্য থেকে প্রচুর পরিমাণ ভুট্টা অন্য রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। ফলে চাহিদা বেশি থাকার জন্য ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। উত্তর দিনাজপুর জেলা ভুট্টা চাষের জন্য অত্যন্ত অনুকুল। এখানকার মাটি, আবহাওয়া এই চাষের পক্ষে পুরোপুরি উপযুক্ত। সেকারণে ভুট্টা চাষে আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে। এছাড়াও অন্যান্য জেলার তুলনায় এই জেলায় শীতকাল অনেকটাই দীর্ঘমেয়াদি, যা ভুট্টা চাষের জন্য অত্যন্ত  ভালো।
তিনি বলেন, তবে ভুট্টা গাছে ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’ নামে এক ধরনের পোকার আক্রমণ আচমকাই লক্ষ্য করা গিয়েছিল গত বছর। সেই পোকার আক্রমণ ঠেকাতে কৃষি দপ্তর থেকে বিশেষ তৎপরতায় নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা  জেলাজুড়ে যাতে ‘ফল আর্মি ওয়ার্ম’ পোকা দমনের জন্য কীটনাশক বাজারে সব সময় পাওয়া যায়, সেজন্য সবরকম ব্যবস্থা করেছি। এছাড়াও চাষিদের সচেতন করার জন্য বিশেষ শিবিরের আয়োজন করছি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে।  ভুট্টা গাছ মাটি থেকে প্রচুর পরিমাণে রস টেনে নেয়, ফলে পরপর একই জমিতে টানা কয়েকবার ভুট্টা চাষ করলে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পায়।  তাই কৃষিদপ্তরের পরামর্শ, দু-তিন বছর ভুট্টা চাষ করার পর সেই মাটিতে পরের বছর অন্য শস্য চাষ করা ভালো। এই প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে  চাষের জমির উর্বরতা পুরোপুরি ফিরে আসবে।
অন্যদিকে, জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (বিশ্বব্যাঙ্ক প্রকল্প) সুকান্ত দাশগুপ্ত বলেন, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে প্রতি হেক্টরে ১২ টন পর্যন্ত ভুট্টার ফলন হয়। গত বছর আশি  হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের ফলে এ জেলায় ৮ লক্ষ ৭৫ হাজার ৫৬৮ মেট্রিক টন ফলন হয়েছিল। রাজ্যের মধ্যে এই জেলায় সবচেয়ে বেশি ভুট্টার ফলন হয়। ভুট্টা চাষ করে গতবছর কালিয়াগঞ্জের কৃষক বিকাশ বর্মন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কৃষিকর্মন পুরষ্কার হিসেবে ২ লক্ষ টাকা পেয়েছেন।  ভুট্টা চাষে আমাদের রাজ্যও কৃষিকর্মন পুরস্কার পেয়েছে। তাই আমরা এই চাষে কৃষকদের আগ্রহ  যাতে আরও বাড়ে, সে ব্যাপারে সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছি। এই জেলায় যাতে উন্নতমানের বীজ কম দামে কৃষকরা পেতে পারেন, তার ব্যবস্থা করছি আমরা। এছাড়াও কৃষিজমির উর্বরতা রক্ষায় ভুট্টা চাষের ফাঁকে ডালশস্য চাষে যাতে তাঁদের আগ্রহ বাড়ে,  সেজন্য নানা রকম সচেতনতামুলক কর্মসূচি গ্রহণ করছি। রায়গঞ্জ ব্লকের চাষিরা বলেন, ভুট্টা চাষে লাভ বেশি। তাই অন্যান্য চাষের তুলনায় এই চাষে  আগ্রহ বেড়েছে আমাদের।  নিজস্ব চিত্র