বিদ্যার্থীরা পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অতিরিক্ত চিন্তার জন্য উচ্চ ... বিশদ
এই গবেষণার তথ্য হল, যেভাবেই হোক আর্সেনিক সহনশীল প্রজাতির ধানের বীজ উদ্ভাবন করা। রাজ্য সরকারের চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি বিজ্ঞানীদের হাতে ছিল প্রায় ছ’শো প্রজাতির ধানের বীজ। এইসব বীজ দিয়েই শুরু হয় গবেষণা।
২০১২ সালে উদ্ভাবন ঘটানো হয় ধানের সেই বিশেষ প্রজাতির। আইইটি ২১৮৪৫। এই প্রজাতির ধান আর্সেনিক সহনশীল। রাষ্ট্রপুঞ্জের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কৃষি বিজ্ঞানীরা এই ধানের স্বীকৃতি দিয়েছেন। ২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ধানটির নাম দেন মুক্তশ্রী। এই ধান পেতে চাষিরা আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি বিজ্ঞানী ড. বিজন অধিকারী জানিয়েছেন, ২০০৬ সাল থেকে নিরলস গবেষণা চালানোর পর ২০১২ সালে মুক্তশ্রী ধান আবিষ্কার করা হয়। ৬০০টি প্রজাতির ধানের বীজ নিয়ে কৃষি বিজ্ঞানীরা গবেষণা শুরু করেন। পরে তাঁরা দেখতে পান, সবরকমের সুগন্ধী ধানই হল কমবেশি আর্সেনিক সহনশীল। এর পর ১০০টি প্রজাতির সুগন্ধী ধানের উপর গবেষণা চালানো হয়। গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল, কোন কোন ধানে বেশিমাত্রায় আর্সেনিক সহনশীলতা রয়েছে। এর জন্য বেছে নেওয়া হয় রাজ্যের মানচিত্রে আর্সেনিক কবলিত চারটি জায়গা। সেগুলি হল, উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা। ওই জেলার বাগদা অঞ্চলের পিপলি গ্রাম। মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা ও বর্ধমানের পূর্বস্থলী। গবেষণায় দেখা যায়, একমাত্র রাধুনিপাগল ও মুক্তশ্রী ধান দু’টির মধ্যে দানায় খুবই কম পরিমাণে আর্সেনিক পাওয়া যাচ্ছে। এই মাত্রা এতটাই কম যে, আইসিপিএমএস -এর মতো আধুনিক মেশিনে ওই আর্সেনিক ধরা পড়েনি। অর্থাৎ এই জাত দু’টি হল আর্সেনিকমুক্ত ধানের জাত। আবার উৎপাদনশীলতার নিরিখে রাধুনিপাগলের চেয়ে মুক্তশ্রী অনেকটাই এগিয়ে। মুক্তশ্রী মিনিকিট, আইআর ৩৬, আইআর ৬৪-এর চেয়ে ১০-১৫ শতাংশ বেশি উৎপাদনশীল। বর্তমানে মুক্তশ্রী হল একমাত্র উচ্চফলনশীল আর্সেনিকমুক্ত ধান।
বিজনবাবু জানিয়েছেন, এই ধান বোরো ও খরিফ দুই মরশুমেই চাষ করা যায়। কারণ, এই ধানের খরা ও অতি বৃষ্টি সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে। এই ধান প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সহজে নুইয়ে পড়ে না। বোরোতে চাষ করলে মুক্তশ্রীর উৎপাদন হবে হেক্টরে সাড়ে পাঁচ টন। আর খরিফে চাষ করলে হেক্টরে উৎপাদন পাওয়া যাবে পাঁচ টন। এই ধানের চাল সরু ও সুগন্ধী। লম্বাটে ধান গাছ বলে চাল সরু হয়। চাষিরা এই ধান বিক্রি করে ভালো দাম পাবেন।
এদিকে উপ কৃষি অধিকর্তা (বীজ শংসিতকরণ) বিধান চক্রবর্তী জানিয়েছেন, চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্র তাঁদের মুক্তশ্রী ধানের প্রজনন বীজ দিতে শুরু করেছে। ২০০ কেজি বা তার বেশি বীজ দেবে। সেইমতো সরকারি খামার বা সরকার অনুমোদিত খামারে চলতি বোরো মরশুমে আধারীয় বীজ তৈরির কাজ চলছে। এই বীজ দিয়ে আগামী বছর খরিফে তৈরি করা হবে শংসিত বীজ। ওই শংসিত বীজ চাষিরা আগামী বছর বোরোর মরশুমে পাবেন। পুষ্ট ও জীবনীশক্তিতে ভরপুর হবে এই শংসিত বীজ। ফলে চাষিরা এই ধান চাষ করে ভালো লাভ পাবেন।