কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
আপনাদের গল্পটা কেমন?
(হা হা হা...) গল্পটা মানসী সিনহার। পরিচালনাও ওর। এখন তো গতির যুগে সবাই ছুটছে। আমাদের বাবা, মায়েরা বড় করার সময় প্রতি মুহূর্তে শিখিয়েছে বাবা, মায়ের দায়িত্ব তোমাকে নিতে হবে। এখনকার বাবা, মায়েরা তা শেখান না। এখন শেখানো হয়, তোমাকে আমাদের কথা ভাবতে হবে না। তুমি নিজের জায়গায় নিজের মতো করে দাঁড়াও। সুতরাং তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা তৈরি হচ্ছে। তাদের কোনও দোষ নেই। তারা ভাবছে, আমাকে তো বাবা বলেই দিয়েছে ওদের কথা ভাবার দরকার নেই। তাহলে আমি কেন ভাবতে যাব? স্বাভাবিক ভাবেই শেষ বয়সে বাবা, মায়ের নিঃসঙ্গতা তৈরি হয়। শেষে তো আর দুটো লোক থাকবে। তার মধ্যে একজন চলে গেলে শূন্যতা আসে। জীবন থেকে যেন রং চলে যায়। নিঃসঙ্গতা এই ছবির গল্প। বিবর্ণ অবস্থায় জীবনে রং এলে একজন তা কীভাবে গ্রহণ করবে? কতটা সমাজে ভয় পাবে? তার কাছের লোকেরাই বা বিষয়টা কীভাবে গ্রহণ করবে? এবং তরুণ প্রজন্ম সেটা কীভাবে গ্রহণ করবে?
অভিনেত্রী মানসীকে পরিচালক হিসেবে কেমন দেখলেন?
ও আমার পছন্দের অভিনেত্রী। বন্ধুও। পরিচালক হিসেবে খুব খুঁতখুঁতে। বলত, ‘অপা এটা আমি চাইছি না’। আমি বলতাম, তুই নিজে চেষ্টা করলেও এটা আমার থেকে ভালো করতে পারবি না। সারাক্ষণ ঝগড়া হয়েছে (হাসি)।
অভিনেতা কি হঠাৎ পরিচালক হয়ে যেতে পারেন? পরিচালনার জন্য আলাদা দক্ষতা প্রয়োজন হয় না?
ভালো অভিনেতা পরিচালনা করলে, তা খারাপ হয় না। যেমন শাশ্বত (চট্টোপাধ্যায়) একটা সময় ‘এক আকাশের নীচে’ ধারাবাহিক অসাধারণ পরিচালনা করেছিল।
আপনি কখনও পরিচালনা করবেন?
নিজের পেশা থেকে সরে যাওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। আমাদের এখানে শুধু পরিচালনা করলে তো হয় না। অনেক জ্বালা নিতে হয়। এখানে তো দক্ষিণের বা বলিউডের পরিচালকদের মতো করে কাজ হয় না। কোনও টেকনিশিয়ান টাকা পেল না, সেটাও পরিচালককে দেখতে হয়। আবার ঠিক সময় লাঞ্চ না এলে সেটাও পরিচালককে দেখতে হয়। সুতরাং পরিচালকের অনেক চাপ থাকে। আমি ওভাবে পরিচালনা করতে পারব না। আমি ঘর ঝাঁট দিই বা অভিনয় — যে কাজই করি, নিজের ২০০ শতাংশ দিই। নিজেকে নিংড়ে দিই। কিন্তু পরিচালনা করতে গিয়ে আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে যদি মাথা ঘামাতে হয়, সেটা আমি করব না।
অভিনয়ের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসে নিজের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আপনি সচেতন?
অবশ্যই। নিজের সীমাবদ্ধতা জানি বলেই কোন জায়গায় নিজেকে ভাঙতে হবে, সেটাও আমি জানি। তার জন্যই ২৮ বছর ধরে অভিনয় করছি।
পেশাদার কোনও ভুল নিয়ে আজ আপশোস হয়?
অনেক ভুল করেছি। আমি মনে করি, ভুল না করলে তো ঠিক করার সম্ভাবনা থাকে না। সেজন্যই ভুল করা জরুরি। কিন্তু একবার যে ভুল করেছি, তা আর কখনও করিনি। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েছি। সেটা আমাকে পরিণত করেছে।
এখন নাকি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার্সের বিচারে টেলিভিশনে কাস্ট করা হয়, এটা সত্যি?
একটা সোশ্যাল মিডিয়া ফলোয়ারের ট্রেন্ড এখন চলছে। তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। নতুনদের কাস্টিংয়ের ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ার ফলোয়ার সংখ্যা দেখা হয়, এটা সত্যি। কিন্তু ফলোয়ারের সংখ্যা দিয়ে কাজের মান বিচার করা যায় না। এটা সাময়িক। গুণের দাম দিতেই হবে। গুণ থাকলে তবেই টিকবে। নাহলে টিকবে না। আমি দূরদর্শনের সময়ের লোক। ১৬ বছর বয়স থেকে কাজ করছি। বহু ট্রেন্ড বদলাতে দেখলাম। এটাও থাকবে না।
আপনিও তো সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব অ্যাকটিভ?
ওটা আমার ভালোলাগা। আমার নাচের স্কুলের মেয়েদের উৎসাহ দিতে আমি রিল আপলোড করি।
ব্যক্তিগত এবং পেশাদার জীবনে মিডলাইফ ক্রাইসিস সামলান কীভাবে?
ছোট থেকে বিভিন্ন ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়েই বড় হয়েছি। তাই ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট আমার শেখা। আমার মিডলাইফ ক্রাইসিস ম্যানেজ করতে পারি, কারণ আমি মিডলাইফকে অ্যাকসেপ্ট করতে পারি। আমার বুড়ো হতে কোনও ভয় নেই। বয়সকে মেনে নিতে কোনও অসুবিধে নেই। বড় ছেলের মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করতেও সমস্যা নেই। ছোট থেকে এতরকমের সমস্যা দেখেছি জীবনে, ফলে কিছুটা কিছুটা করে জীবনকে গুছিয়ে রেখেছি। আমার হঠাৎ কখনও মনে হয় না, ইস এমন একটা বয়সে পৌঁছলাম! কী হবে? আমার চারপাশ ফাঁকা হয়ে গেল! না। আমি নিজেকে সেভাবেই গড়েছি। আমি জানি, আমার এই বয়সটা একদিন আসবে। তখন আমি নিজেকে কীভাবে চালাব, কীভাবে নিজেকে সময় দেব, সেটা আমার জানা।