মাতুলের থেকে বিত্তলাভ হতে পারে। কোনও বিষয়ের মানসিক উদ্বেগ কমবে। বিদ্যাচর্চায় বিশেষ শুভ। ... বিশদ
২০২০ সাল। ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’-এর সঙ্গে সুর মিলিয়ে তখন বলা যেত, মুখ ঢেকে যায় মাস্কে। করোনা মহামারীর সঙ্গে লড়াইয়ের অনিবার্য উপকরণ। জীবাণু মোকাবিলায় সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেল মাস্ক। নানা ধরনের, নানা রঙের, নানা নকশার মাস্ক হয়ে উঠল ফ্যাশন স্টেটমেন্ট! তবে জীবাণুর মোকাবিলায় মাস্কের ব্যবহার শুরু করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছিল এক চিকিৎসককে। পদে পদে বাধা, হেনস্থা, ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ হয়েছিল তাঁর সঙ্গী। তিনি চিনা চিকিৎসক-বিজ্ঞানী উ লিয়েন থে। প্রকৃত নাম গো লেয়ান টাক। চিকিৎসাশাস্ত্রের ইতিহাসে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহারের পদ্ধতির জনক হিসাবে তাঁকে আজও কুর্নিশ করে বিশ্ব। তার আগে পর্যন্ত মাস্কের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসকদের ব্যবহার পর্যন্ত।
উ লিয়েনের প্রসঙ্গে আসার আগে বলা প্রয়োজন দু’জন চিকিৎসকের কথা। ফরাসি শল্য চিকিৎসক পল বার্গার ও পোল্যান্ডের ব্রেসলাউ (বর্তমানে রোকলা) বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি বিভাগের প্রধান জোহান মিকুলিকজ। কাজ করতে গিয়ে তাঁরা দেখেছিলেন, ড্রপলেটের মাধ্যমে মুখ থেকে জীবাণু বের হয়, তা অপারেশনের ঘা বিষিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি শ্বাসকষ্টকালীন হাঁচি, কাশিতে থাকা ব্যাকটেরিয়াও শরীরের ক্ষতি করে। ১৮৯৭ সাল থেকে তাঁদের হাত ধরে শুরু হল চিকিৎসার সময়ে মুখে মাস্ক পরা। সে সময় মাস্ক ছিল আসলে দু’টি দড়ির সঙ্গে বাঁধা গজ কাপড়ের একটি বড় টুকরো, যা পুরো মুখ ঢেকে রাখত। পরবর্তীতে বিজ্ঞানী হুবনার জানান, গজ কাপড় যত পুরুভাবে জড়ানো হবে তত মঙ্গল। প্রথমবার ব্যবহারের পরে তা ফেলে দেওয়ার নিদানও দিয়েছিলেন তিনি। এরপর থেকেই চিকিৎসক মহলে শুরু হল মাস্কের বহুল ব্যবহার।
সাধারণ মানুষের জন্য মাস্কের ব্যবহার শুরু হল তার কয়েক বছর পরে। বিজ্ঞানী উ লিয়েন থের সৌজন্যে। ১৯১০-১১ সালে চীনের উত্তর-পূর্বাংশে শুরু হয়েছিল ভয়াবহ মাঞ্চুরিয়ান প্লেগ বা নিউমোনিক প্লেগ। মৃত্যুহার প্রায় ১০০ শতাংশ। প্লেগ মোকাবিলায় চীনের ইম্পিরিয়াল কোর্ট চিকিৎসকদের একটি দলকে পাঠাল সরেজমিনে ঘুরে দেখতে। ওই দলের প্রধান ছিলেন উ লিয়েন। ঘুরে দেখে তিনি বুঝলেন এই বিশেষ ধরনের প্লেগ বায়ু বাহিত। তার আগে পর্যন্ত ধারণা ছিল প্লেগ ছড়ায় ইঁদুর, মাছির মতো প্রাণীর মাধ্যমে। তিনি রোগ ছড়ানো বন্ধ করার জন্য মাস্ক পরার পরামর্শ দিলেন। লিয়েনের এমন রিপোর্ট শোরগোল ফেলে দিল। বিশ্বের তাবড় চিকিৎসকরা ভাবলেন ভুল রিপোর্ট জমা দিয়েছেন তিনি। তাঁকে প্রধান পদ থেকে সরানো হল। সেই জায়গায় এলেন ফরাসি চিকিৎসক জেরাল্ড মেনি। লিয়েনের পরামর্শ ভুল প্রমাণ করার জন্য মাস্ক না পরেই চিকিৎসা করতে গেলেন মেনি। ফল হল মৃত্যু। সকলে এক বাক্যে মেনে নিলেন লিয়েনের পরামর্শ। জীবাণু সংক্রমণ রুখতে মাস্কের ব্যবহার শুরু হল। মহামারি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে চিকিৎসা-আইনে মাস্কের অন্তর্ভুক্তির পক্ষে সওয়াল করতে ১৯১১ সালে তিনি যান মাকডেনে আয়োজিত আন্তর্জাতিক প্লেগ সম্মেলনে। সারা বিশ্বে প্রশংসিত হল তাঁর অবদান। এরপর ১৯১৮ সালে বিশ্বের নানা প্রান্তে শুরু হয় স্প্যানিশ ফ্লুয়ের প্রকোপ। তা রুখতেও সাহায্য করে মাস্ক। এমনকী, আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকো, লস অ্যাঞ্জেলেস শহর, ইংল্যান্ড, ফ্রান্সে জারি হল মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ১৯৬০ সালে একবার ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া যায় (ওয়ানটাইম ইউজ), এমন মাস্ক তৈরি করা শুরু হয় সিনথেটিক উপকরণ দিয়ে। ফিল্টার দেওয়া মাস্ক আসে আরও পরে। আর ২০২০ সালে এই মাস্কই হয়ে উঠল করোনা মোকাবিলার অন্যতম অস্ত্র।