ব্যবসায়িক কাজকর্ম ভালো হবে। ব্যবসার প্রসারযোগও বিদ্যমান। উচ্চশিক্ষায় সন্তানের বিদেশ গমনের সুযোগ আসতে পারে। গৃহশান্তি ... বিশদ
একমুঠো সবুজ তরতাজা আভাসের খোঁজে এখন অনেকেই নিজেদের ব্যালকনিতে যত্ন সহকারে তৈরি করছেন ছোট্ট একফালি ‘মিনি গার্ডেন’। প্রতিদিন ব্যস্ততার ভিড়ে নেমে পড়ার আগে চায়ের কাপে আলগোছে চুমুকের মৌতাত। আর চোখের সামনে রংবেরঙের আবরণে ঘেরা সবুজের গালিচা— এই যুগলবন্দি দৈনিক ক্লান্তিকে নিমেষে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য একেবারে অব্যর্থ। শুধু ব্যালকনিতেই নয়, রান্নাঘরের কার্নিশ লাগোয়া স্ল্যাবে কিংবা অফিস ডেস্কেও সযত্নে লালিত হয়ে চলেছে রকমারি চারাগাছ। স্বল্প যত্নেই সবুজ পাতার ভিড়ে উঁকি দিচ্ছে গোলাপি কিংবা হলুদ রঙের ছোট্ট ফুল। এখন বিভিন্ন শুভ অনুষ্ঠানের স্মারক কিংবা উপহারস্বরূপও তুলে দেওয়া হচ্ছে ছোট্ট চারাগাছ। সব গাছেরই উপযুক্ত পরিচর্যা দরকার। বাড়িতে ‘মিনি গার্ডেন’ তৈরি করার শখ থাকলে আপনি নিজেই সঠিকভাবে যত্ন করতে পারবেন। তবে ফুলগাছ ও অন্যান্য চারাগাছ পরিচর্যায় কিছু বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে।
• উপযুক্ত স্থান
বারান্দার যেখানে আপনার শখের বাগান করবেন বলে চিন্তাভাবনা করছেন, আগে সেই জায়গাটি ভালো করে নিরীক্ষণ করে নিন। সেখানে ঠিকঠাক আলো-বাতাস খেলে কি না, দেখে নেওয়া প্রয়োজন। ফুলগাছের পরিচর্যায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য জায়গা, বাড়ির দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম কোণ। মৃদুমন্দ বাতাসের পাশাপাশি, প্রখর সূর্যরশ্মিও এই অংশে অপেক্ষাকৃতভাবে কম পৌঁছায়, কাজেই অতিরিক্ত রৌদ্রতাপে ফুলগাছের পাতাগুলি অকালে শুকিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই স্পাইডার প্ল্যান্ট এবং স্ট্রেপ্টোকার্পাস জাতীয় ইন্ডোর প্ল্যান্টগুলিকে এমন জায়গায় রাখা যায়। ফুলের চারাগাছ পরিচর্যার জন্য দিনের বেলায় ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং রাতের বেলায় ২২-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আপনি ফুলের চারা জানালার পাশে ঠান্ডা জায়গায় রাখতে পারেন। আলোর সঙ্গে সঙ্গে ফুলগাছের যত্নে উপযুক্ত আর্দ্রতাও প্রয়োজন। বাড়িতে যদি হিউমিডিফায়ার থাকে, সেক্ষেত্রে সেটি চারাগাছের আশপাশের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধিতেও সহায়ক হতে পারে। মোটামুটি ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আপেক্ষিক আর্দ্রতা বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়।
• পরিমিত জল
চারার সঠিক পরিচর্যায় সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল পরিমিত জলের ব্যবহার। অতিরিক্ত সূর্যরশ্মির মতোই মাত্রাতিরিক্ত জলের ব্যবহারেও ফুলগাছ এবং অন্যান্য চারাগাছেরও বৃদ্ধি বাধা পায়। গাছে জল দেওয়ার আগে একবার টবের মাটি ছুঁয়ে দেখে নিন জল দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কিনা! মাটি খুব বেশি আর্দ্র থাকলে একদিন অন্তর নিয়ম করে জল দেওয়া যেতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে গাছের প্রকৃতি এবং ধরন অনুসারেও জলের মাত্রার হেরফের হয়ে থাকে। যেমন ঠান্ডা পরিবেশে বেড়ে ওঠা চারাগাছের তুলনায় উষ্ণ এবং শুষ্ক পরিবেশে বাড়তে থাকা চারাগাছের অতিরিক্ত জলের প্রয়োজন হয়। একইভাবে ফুল এবং পাতায় ভরপুর কোনও গাছের যে পরিমাণ জলের প্রয়োজন, সেই তুলনায় ফুলবিহীন বা ক্যাকটাস, অথবা বিরল পাতাযুক্ত কোনও গাছে জল অনেকটাই কম লাগে। তাই যে সব গাছে প্রয়োজনীয় জলের পরিমাণ কম বলে মনে হবে, সেই গাছের পাতায় প্রতিদিন একটু একটু করে জল স্প্রে করে দিতে পারেন, এতে পাতা সজীব থাকবে।
• সঠিক টব বা পাত্র
সেরামিক টবেই যে শুধু গাছ লাগাতে হবে এমনটা কিন্তু নয়। ব্যবহারের সুবিধার্থে প্লাস্টিক টবও ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু যে কোনও টব ব্যবহারের আগে তার উপযুক্ত জলনিকাশি ব্যবস্থাও যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় যেন কোনওভাবেই জল জমে না থাকে। টবের তলার মাটিতেও জল জমে থাকা উচিত নয়, সেক্ষেত্রে গাছের শিকড় পচে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। এছাড়া উপযুক্ত আয়তনের টব ব্যবহারে গাছের বৃদ্ধিও ত্বরান্বিত হয়। কাজেই জবা এবং মাধবীলতা জাতীয় যে সকল গাছ দ্রুত বড় হয়ে ফুলে ভরে ওঠে, সেই চারাগুলোকে প্রথম থেকেই সঠিক আয়তনবিশিষ্ট পাত্রে রোপণ করা বিশেষ প্রয়োজন।
• জৈব সার
পোকামাকড়, পিঁপড়ের হাত থেকে গাছ বাঁচাতে রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে প্রয়োজনীয় জৈব সার দিন। নিম তেল কিংবা জলের সঙ্গে সঠিক জৈব সার মিশিয়ে গাছের গোড়ায় বা পাতায় স্প্রে করলে ফল মেলে। চা পাতাও গাছের গোড়ায় দিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রেই তা জৈব সারের কাজ করে। টবের মাটিতে সপ্তাহে একদিন করে ইউরিয়া-পটাশ সমৃদ্ধ জৈব সার ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখবেন সার যেন কোনওভাবেই গাছের গোড়ায় প্রবেশ না করে। বাড়িতে যদি গোলাপ চারা থাকে তাহলে অতিরিক্ত সতর্কতা চাই। অক্টোবর থেকে গোলাপ গাছের পরিচর্যা শুরু করলে নভেম্বর-ডিসেম্বরে মধ্যে গোলাপ ফুলের রকমারি বাহার দেখতে পাবেন। আলো, বাতাস এবং জলের পাশাপাশি গোলাপ গাছে জৈব সার প্রয়োগের সময়ও নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী করতে হয়। ১০০ মিলিগ্রাম পচা খোল, ৫ লিটার জলে মিশিয়ে তবেই ব্যবহার করুন। সাতদিনের বাসি পচা খোল ব্যবহার না করাই ভালো। তাতে ছত্রাক সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
• আগাছা নির্মূল
শীতে রুক্ষ-শুষ্ক পরিবেশে গাছের পাতায় ধুলোর মলিন আস্তরণ পড়ে। একইসঙ্গে গাছের পাতা বিবর্ণও হয়ে পড়ে। তাই গাছের পাতায় জল স্প্রে করার পাশাপাশি সঠিক সময়ে বিবর্ণ পাতা কিংবা অন্যান্য আগাছা নির্মূল করে ফেলা প্রয়োজন। শুকনো পাতা দিয়ে টবের মাটি ঢেকে রাখতে পারেন, শীতকালে মাটির আর্দ্রতা ধরে রাখার ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হয়।
• অনুপস্থিতিতে যত্ন
বারান্দাভর্তি রকমারি গাছ ফেলে রেখে দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে মন কেমন করছে? বাড়ির এই অবলা সদস্যদের জলখাবারের বন্দোবস্তও আগেভাগে সেরে রাখতে পারেন। একটি বড় পাত্র বা গামলা জলে ভর্তি করুন, তার উপর গাছের টবগুলো বসিয়ে দিন। খেয়াল রাখবেন, টবের নিকাশি ব্যবস্থা যেন উপযুক্ত হয়। এছাড়াও বড় কোনও বোতলে জল এবং প্রয়োজনীয় সার ভর্তি করে বোতলের মুখটা বন্ধ করেই টবের মাটিতে উপুড় করে দিন। তাতেও বেশ চুঁইয়ে চুঁইয়ে জল মাটিতে পড়বে। মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখবে এবং আপনার শখের গাছগুলো তরতাজা থাকবে। বাড়িতে না থাকলে কখনওই চারাগাছগুলো সরাসরি সূর্যালোকের সংস্পর্শে রেখে যাবেন না।