হঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়া শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ
প্রযোজনা: প্রসেনিয়াম
পরিচালনা: শিউকুমার ঝুনঝুনওয়ালা
মনস্তত্ত্ব আর আবেগ দুটি অত্যন্ত জটিল বিষয়। যার ব্যাখ্যা করা সহজ নয়। কারণ এই দুটি বিষয়ের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকে না। তাই যখন মানুষ ভুল করে, তখন তার কাজের একটা ব্যাখ্যা থাকে নিজের কাছে। যেটা সে অন্যদের বোঝাবার চেষ্টা করে। কিন্তু সে বুঝতে পারে না যে তার ছোট্ট একটা ভুল অন্য একজনের কত বড় ক্ষতি করে দিতে পারে। অথচ তৃতীয় কোনও ব্যক্তি যদি কোনও ছলনার আশ্রয় নিয়ে তার ভুলটা ধরিয়ে দেয় তখন সে বাধ্য হয় স্বীকার করে নিতে। যেমনটা স্বীকার করে নেন রাঠোর পরিবারের সদস্যরা। সঞ্জয় রাঠোর একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাঁর মেয়ে স্নেহা ও ছেলে মনীশ এবং স্ত্রী নয়নাকে নিয়ে সুখের সংসার। তাঁদের একমাত্র মেয়ের বিয়ের এনগেজমেন্টের দিন হঠাৎ একজন ব্যক্তি তাঁদের বাড়িতে আসেন। পুলিস অফিসার হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। সঞ্জয়বাবুকে বলেন রুহী যোশেফ নামে একটি মেয়ের আত্মহত্যার তদন্ত করতে এসেছেন। বস্তির মেয়ে রুহীর মৃত্যুকে ঘিরে চাঞ্চল্য তৈরি হয়। জানা যায়, মেয়েটির আত্মহত্যা করা ছাড়া উপায় ছিল না। তবে মেয়েটির কাছ থেকে একটি ডায়েরি পাওয়া গিয়েছে যেখানে মিঃ রাঠোর, তার স্ত্রী, কন্যা, পুত্র এবং হবু জামাইয়ের নাম উল্লেখ করা আছে। যারা প্রত্যেকেই মেয়েটিকে বিভিন্ন নামে চিনত এবং তারা মেয়েটির সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে অন্যায় করেছে। এরপরেই এক এক করে রহস্য উন্মোচিত হতে থাকে। সঞ্জয়বাবু প্রথমে মেয়েটির ছবি দেখে অস্বীকার করলেও পরে তিনি স্বীকার করেন মেয়েটি তাঁর কারখানায় কাজ করত। তবে বছর দুয়েক আগেই তাকে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়েছিল। কারণ মজুরি বাড়ানোর দাবিতে মেয়েটি অন্যান্য শ্রমিকদের সঙ্গে আন্দোলন করে। সকলে মালিকপক্ষের কথা মেনে নিলেও সে মানতে রাজি হয় না। এরপর স্নেহাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন সেও মেয়েটির অন্য একটি কর্মস্থলে গিয়ে তার বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ করে। ফলে তার চাকরিটা চলে যায়। স্নেহার হবু স্বামীটির সঙ্গেও মেয়েটির পরিচয় ছিল। কীভাবে তাদের আলাপ থেকে বন্ধুত্ব সবকিছুই খুলে বলে। শেষে মনীশ অর্থাৎ রাঠোরের একমাত্র ছেলে অন্য নামে মেয়েটির সঙ্গে মেলামেশা করে এবং সে অন্তসত্ত্বা হয়ে যায়। ছেলেটি অবশ্য মেয়েটিকে বিয়ে করতে চেয়েছিল। কিন্তু মেয়েটি যখন জানতে পারে ছেলেটির বাবা সঞ্জয় রাঠোর, তখন সে রাজি হয় না। অগত্যা মেয়েটি একটি চ্যারিটেবল সংস্থার কাছে সাহায্যের জন্য যায়। প্রথমে তারা এগিয়ে আসে এবং পরামর্শ দেয় ছেলেটিকে বিয়ে করতে। কিন্তু মেয়েটি কিছুতেই রাজি হয় না। তখন সংস্থার কর্ণধার মিসেস রাঠোর নিজে তো সাহায্য করেই না উপরন্তু সকলকে নিষেধ করে দেয়। মেয়েটির কাছে সব রাস্তাই প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। ইন্সপেক্টর চলে যাওয়ার পর থানা থেকে একটা ফোন আসে। জানা যায় ওই নামে থানায় কোনও অফিসার নেই। তবে মেয়েটির আত্মহত্যার কারণে পুলিস আসছে তদন্ত করতে।
জে বি প্রিস্টলির লেখা ‘অ্যান ইন্সপেক্টর কলস’ নাটক থেকে এই সাইকোলজিকাল ড্রামাটি অ্যাডপট করা হয়েছে। উত্তমকুমার অভিনীত জনপ্রিয় বাংলা ছবি ‘থানা থেকে আসছি’-ও এই একই নাটক অবলম্বনে নির্মিত হয়েছিল। সম্প্রতি হিন্দি নাটক ‘ডিটেকক্টিভ ইন্সপেক্টর এস পি সিং’ মঞ্চস্থ হল জ্ঞান মঞ্চে।
আসলে ভালোবাসার মানুষের জীবনের বাস্তবতা এবং সত্যিকারের মুখগুলো যখন সামনে আসে তার পরিণাম কী হয় সেটাই তুলে ধরা হয়েছে নাটকে। পুলিস ইন্সপেক্টর মনস্তত্ত্ব ও আবেগের সঙ্গে বহির্জগতের কিছু জিনিসকে যুক্ত করে রহস্যের সমাধান করার চেষ্টায় রাঠোর পরিবারের সকলকে যন্ত্রণা দিতে এই সুন্দর খেলাটি করেন।
সম্পূর্ণ সাইকোলজিকাল ড্রামা এটি। মানুষের মনের মধ্যে থাকা বিবেক, ও তার দংশনকে কোনওভাবেই কেউ এড়িয়ে যেতে পারে না। বিষয়টি খুব সুন্দর করে তুলে ধরছেন নাটকের কুশীলবরা। নাটক দেখতে বসে গল্পের মধ্যে ডুবে যায় মন। অভিনয়ে প্রত্যেকেই খুব সুন্দর। ইন্সপেক্টরের ভূমিকায় সাহির সিদ্দিকি একাই একশো। দারুণ মানিয়েছে তাঁকে চরিত্রটিতে। স্নেহার ভূমিকায় রেশমি শর্মা, অজিতের চরিত্রে রিজভি, নয়নার চরিত্রে বিন্দু জয়সওয়াল যথাযথ। রোহন অগ্রহারি মনীশকেও ভালো লাগে। শেখ শাহনওয়াজের কাহিনী বিন্যাস ও জিম্বোর অসাধারণ সেট, বিভিন্ন দৃশ্যের বিস্তার ও প্রয়োগকে বিষয়ের মধ্যে প্রবেশ করাতে সক্ষম হয়। শিউকুমার ঝুনঝুনওয়ালার নির্দেশনা এবং সঞ্জয় দাসের আবহ নাটকটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে সাহায্য করেছে।