কাজকর্মের ক্ষেত্রে দিনটি বিশেষ শুভ। নতুন যোগাযোগ ও উপার্জন বৃদ্ধির ক্ষেত্র প্রস্তুত হতে পারে। বিদ্যায় ... বিশদ
রঞ্জনা আর অরণ্যর পায়ের তলায় সর্ষে। কাজের ফাঁকে ছুটি ম্যানেজ করে প্রতি মাসেই কাছে দূরে ট্যুর প্ল্যান ছকে ফেলে তারা। টিকিট থেকে বুকিং সবই করে কম্পিউটারের সাহায্যে। এইভাবে ভালোই চলছিল। হঠাৎই অরণ্যর অফিসে একটু সমস্যা দেখা দেয়। নানারকম গণ্ডগোলের ফলে চাকরিটা ছাড়তে বাধ্য হল অরণ্য। তারপর শুরু হল রোজগারের নানাবিধ চেষ্টা। একদিন এক আত্মীয়র মধুচন্দ্রিমার পরামর্শ দিতে গিয়ে অরণ্যর মনে হয় বিনা পারিশ্রমিকে লোককে বেড়ানোর প্ল্যান ছকে না দিয়ে বরং এটাকেই পেশা করলে কেমন হয়? শুরু হল নিজস্ব ট্রাভেল কনসালটেন্সি খোলার পরিকল্পনা। তাও বেশ কয়েক বছর হয়ে গিয়েছে। অরণ্য আর রঞ্জনা এখন পেশাদার ট্রাভেল কনসালট্যান্ট। বেড়ানোর পরিকল্পনা ছকে অন্যের জন্য কাস্টমাইজড ট্যুর প্ল্যান করাই তাদের পেশা। ব্যবসা এতটাই সাফল্যের মুখ দেখেছে যে রঞ্জনাও নিজের চাকরি ছেড়ে অরণ্যর কাজে হাত লাগিয়েছে।
অরণ্যদের মতো আপনিও কি ভ্রমণপাগল? সেই নিয়ে বিস্তর পড়াশোনা করতে ভালোবাসেন? কোথায় কোন সময় বেড়াতে যাওয়া উচিত, জায়গা বিশেষে বেড়ানোর জন্য কোন প্রয়োজনীয় তথ্য নিজের সংগ্রহে রাখা দরকার, চেনা জায়গায় বেড়াতে গিয়েও কীভাবে একটু অফবিট স্পটে ঘুরে আসা যায়— এইসব নিয়ে যদি আপনার অগাধ জ্ঞান থাকে তাহলে আপনিও কিন্তু ট্রাভেল কনসালটেন্সিকে পেশা হিসেবে বাছতে পারেন। তবে তার জন্য কিছু নিয়ম মেনে এগতে হবে।
অভিজ্ঞ ট্যুর-প্ল্যানার রাজেন দাস জানালেন, ‘ভ্রমণকে পেশা হিসেবে নিতে গেলে সাধারণত কোনও পড়াশোনা লাগে না। তবে ট্যুরিজম বিষয়ে একটা সার্টিফিকেট কোর্স করা থাকলে বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ে। লোকে ভরসা পায় যে আপনি এই কাজটি ভালোভাবে করতে পারবেন। তবে ট্যুর প্ল্যানিং বা কনসালটেন্সি যদি পেশা হিসেবে বাছতে চান তাহলে সে বিষয়ে গতানুগতিক পড়াশোনার বাইরেও কিছু জিনিস খেয়াল রাখা দরকার।
হোটেল বুকিং ও টিকিট
ট্রাভেল এজেন্সি বা কনসালটেন্সি যাই হোক না কেন তার খুবই জরুরি অংশ হল হোটেল বুকিং এবং ট্রেন বা প্লেনের টিকিট কাটা। সেক্ষেত্রে আইআরসিটিসি-র এজেন্সি থাকলে সবচেয়ে ভালো। এছাড়া বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের সঙ্গেও ভালো যোগাযোগ থাকা জরুরি। নাহলে টিকিট কাটতে অসুবিধে হয়। যে কোনও ব্যবসা করতে চাইলেই প্রথম ধাপ হল ট্রেড লাইসেন্স জোগাড় করা। সেটা থাকলে ট্রেন, প্লেনের টিকিট থেকে হোটেল বুকিং সবক্ষেত্রেই সুবিধে হবে। হোটেল বুকিংয়ের ক্ষেত্রে সরাসরি যোগাযোগ ও সম্পর্ক বজায় রাখাও একটা বড় বিষয়। অর্থাৎ যেসব জায়গা আপনার ভ্রমণ তালিকায় রয়েছে সেখানকার জায়গা প্রতি চার থেকে পাঁচটি বেসরকারি এবং একটি সরকারি হোটেলে নিজস্ব যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। তার জন্য সেখানে গিয়ে কথা বলা দরকার। আপনার সঙ্গে হোটেলের ম্যানেজারের সম্পর্ক কেমন, তার উপর অনেক সময়ই ঘরের মান নির্ভর করে। ফলে এই সম্পর্ক যত ভালো থাকবে আপনার ব্যবসাও ততই ভালো হবে।
ক্রেতাদের মনোভাব বুঝুন
ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা সেলস-এর মতো। আপনার প্রোডাক্ট আপনাকে ক্রেতাদের কাছে বেচতে হবে। তার জন্য পর্যটনের জায়গাগুলোর আকর্ষণীয় প্যাকেজ তৈরি করতে হবে। সেটার জন্য চাই বিস্তর পড়াশোনা। একই জায়গাকে বিভিন্নভাবে আকর্ষণীয় করে তুলতে না পারলে নানারকম পর্যটক আসবে না। সেক্ষেত্রে আপনার ব্যবসাও লাভ দেখবে না। তাছাড়া পর্যটকদের মনোভাব বুঝে তাদের জন্য উপযুক্ত প্যাকেজ তৈরি করে দিতে হবে। নববিবাহিত দম্পতির কাছে যেমন বেড়ানোর প্যাকেজ বেচবেন, বাবা-মা বাচ্চার ইউনিটের কাছে তেমনটা বেচবেন না। আবার ছোট বাচ্চা সহ বাবা মা যেমন জায়গা পছন্দ করবে বয়ঃসন্ধির বাচ্চা সহ বাবা মা তেমনটা করবেন না। বয়স্ক দম্পতি, শুধু মহিলা, অফিসের সহকর্মী ইত্যাদি নানা কম্বিনেশনে বেড়াতে যাওয়ার চল রয়েছে। এক একজন এক একরকম বেড়ানো পছন্দ করেন, সেসব বুঝে তাঁদের ভ্রমণসূচি বানিয়ে দিতে হয়। এসব নিয়ে পর্যাপ্ত পড়াশোনা করলে তবেই ভালো ট্রাভেল কনসালট্যান্ট হওয়া সম্ভব।