বিশেষ কোনও কর্মের আর্থিক সংস্থান নিয়ে মানসিক চিন্তা বৃদ্ধি পাবে। আর্থিক ঝুঁকি নেবার আগে দুবার ... বিশদ
তেল গড়িয়ে পড়ছে...। কষিয়ে রান্না করা মাটন থেকে নয়। তেল চুপচুপে চুল থেকেও নয়। বরং আপনার কপাল, গাল, নাক বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে তেল। এতটাই তৈলাক্ত ত্বক যে, তা নিয়ে সমস্যার শেষ নেই। কখনও বন্ধুমহলে কটাক্ষের শিকার হন। কখনও বা কীভাবে এই তৈলাক্ত ত্বক ভালো রাখবেন, তার উপায় খোঁজেন। এই টালবাহানায় নিশ্চয়ই কখনও মনে হয়েছে, এই তেলতেলে ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগানোর কোনও প্রয়োজন নেই। তাতে ত্বক আরও তৈলাক্ত হয়ে যাবে। এভাবে অনেকেই ভাবেন। আর তাতে সবথেকে বেশি ক্ষতি করেন নিজের। কারণ এই ভাবনা সম্পূর্ণ ভুল। তা স্পষ্ট জানালেন রূপ বিশেষজ্ঞ শর্মিলা সিং ফ্লোরা।
সত্যি নাকি মিথ্যে
‘তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগালে আরও তেলতেলে হয়ে যাবে। এটা একটা মিথ। সে কারণে যদি কেউ ময়েশ্চারাইজার না লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন, তার থেকে বড় ভুল আর হয় না। ময়েশ্চারাইজার যে কোনও ধরনের ত্বকের ক্ষেত্রেই জরুরি। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে পিএইচ ব্যালেন্স যুক্ত ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন। যাতে তেল এবং জলের ব্যালেন্স রয়েছে। অয়েলি স্কিন হলে কম তেলযুক্ত ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন। আজকাল নানারকম ভেষজ তেল দিয়েও নানা ময়েশ্চারাইজার তৈরি হয়। ফলে সেটা একটু দেখে নিতে হবে’, স্পষ্ট বললেন শর্মিলা।
শুধু তাই নয়। অনেকে মনে করেন, ময়েশ্চারাইজার লাগানোর ফলে তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ বেশি হয়। সেটাও সত্যি নয় বলে দাবি করে শর্মিলা বলেন, ‘ব্রণর জন্য নন-অয়েলি কিছু লাগালে ত্বকের উপরটা পুরো শুষ্ক হয়ে যায়। মুখ টানে। তা থেকে ব্রণ ফেটে যায়। কুঁচকে যায়। নানারকম অসুবিধার সৃষ্টি হয়। ফলে ওয়াটার বেসড ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ক্যাস্টার অয়েল জল দিয়ে তৈলাক্ত ত্বকে লাগালেও ব্রণ চলে যায়।’
ওয়াটার বেসড ময়েশ্চারাইজার
ত্বকের যত্নের গোড়ার কথা ক্লিনজিং, টোনিং এবং সবশেষে আর্দ্রতার জন্য ময়েশ্চারাইজিং প্রয়োজন। সব ধরনের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে। ফলে আপনার ত্বক কোন ধরনের, তা আগে জেনে নিন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। ত্বকে বলিরেখার পরিমাণ বেশি হয়, তাহলে ঘন ময়েশ্চারাইজারের প্রয়োজন। শর্মিলার পরামর্শ, ‘দিনের বেলা ময়েশ্চারাইজার লাগানোর পর সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করুন। রান্নাঘর, ছাদের মতো জায়গা, যেখানে গরম রয়েছে, সূর্যের তাপ সরাসরি গায়ে লাগতে পারে, তেমন জায়গায় গেলেই সানস্ক্রিন লাগাতে হবে। দিনে অন্তত দু’বার লাগাবেন। সন্ধের পর যে কোনও সময় ময়েশ্চারাইজার লাগানো যায়। এখন রাইস ওয়াটার রয়েছে। সারাদিন তাও ব্যবহার করা যায়।’
সমস্যার কারণ
যাঁদের তৈলাক্ত ত্বক, তাঁদের সারাবছরই যেন ভোগান্তি একটু বেশিই। যতই সুন্দর করে মেকআপ করা হোক, কিছুক্ষণ পর মুখ আবার সেই তেলতেলে, চিটচিটে। রাস্তায় বেরলেই মুখে ময়লা জমে একাকার। বাইরের ধুলো তৈলাক্ত ত্বকে অনেক সহজে আটকে যায়। তাতে নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। তৈলাক্ত ত্বকে প্রাকৃতিক ভাবেই অনেক বেশি তেল নিঃসরণ হয়। ফলে অনেক সময় ময়েশ্চারাইজার না অ্যাপ্লাই করলেও বাইরে থেকে ত্বক আর্দ্রই লাগে। আসলে তা সঠিক নয়। যে তেল নিঃসরণের ফলে আর্দ্র লাগছে, তাতে ধুলো অনেক বেশি জমতে পারে। যা থেকে পরবর্তীকালে ব্রণ এবং ব্ল্যাকহেডসের পরিমাণ বাড়ে। আভ্যন্তরীণ শুষ্কতা বার্ধক্য ত্বরান্বিত করে। দ্রুত বলিরেখা পড়ে। ত্বক নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। র্যাশ হয়। সেখানে ময়েশ্চারাইজার প্রয়োজন। যদি দিনভর আপনার এসিতে বসে কাজ করতে হয়, তাহলে অফিসের সময়টা অন্তত দু’বার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ত্বক পরিষ্কার করে ফের ময়েশ্চারাইজার অ্যাপ্লাই করুন।
ঋতু পরিবর্তন
আবহাওয়ায় এখন গরম ভাব। আবার হালকা শীতের টান একেবারে উধাও হয়ে যায়নি। এই ঋতুকালীন পরিবর্তনে তৈলাক্ত ত্বক কিছুটা স্পর্শকাতর হয়ে যায়। নিয়মিত ওয়াটার বেস ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এতে যে কোনও মেকআপও ভালো বসবে। তৈলাক্ত ত্বকের মরা কোষ তুলে ফেলা খুব জরুরি। বেসন, টক দই, ওটমিলের মতো ঘরোয়া উপাদান দিয়ে তৈরি প্যাক অ্যাপ্লাই করুন। এতে ত্বকের মৃতকোষ সহজে উঠবে। যেহেতু এই ধরনের ত্বকে ব্রণর ভাগ বেশি, তাই বাজারচলতি স্ক্রাবার না ব্যবহার করাই ভালো। ব্রণ ফেটে দাগ তৈরি হলে, সে আবার অন্য সমস্যা। বাজারচলতি কিছু ময়েশ্চারাইজারে রাসায়নিক থাকে। কেনার আগে তা ভালো করে পরীক্ষা করে নিন। তৈলাক্ত ত্বকে ভুল ময়েশ্চারাইজার প্রয়োগে তা আরও বেশি স্পর্শকাতর হয়ে উঠতে পারে। ফলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। কারণ ত্বক ভালো রাখার জন্য সঠিক প্রসাধনী জরুরি। বাজারচলতি যে কোনও প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। সেখানেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ কাজে লাগে।
ঘরোয়া প্যাক
সারা বছরই ত্বক পরিষ্কার রাখতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বকের যত্ন নিন। গ্রিন টি এবং দুধ ত্বকের অতিরিক্ত তেল টেনে নেয়। ২ চামচ কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো, দুধের সঙ্গে মিশিয়ে ১ চামচ কাঁচা হলুদবাটাও প্যাকে যোগ করুন। বেসন দিয়ে মুখের মৃত কোষ তুলে ফেলতে পারেন। অথবা ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে শসার রস ও পুদিনাপাতার পেস্ট মিশিয়ে ত্বকে লাগান। চালের গুঁড়ো, কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো এবং মুসুর ডালবাটা একসঙ্গে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। লেবুর রসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে লাগালেও তৈলাক্ত ত্বক উজ্জ্বল হবে। ত্বক ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার, পরিমাণ মতো জল খাওয়া ও আট ঘণ্টা ঘুম জরুরি।