মাতৃকুল থেকে সম্পত্তি প্রাপ্তির যোগ। ডাক্তার, আইনজীবী, প্রমুখের পেশার প্রসার, সুনাম ও উপার্জন বৃদ্ধির সম্ভাবনা। ... বিশদ
বাজারে ক্রিম ও লোশনের প্রাচুর্য, তবু ঘরোয়া উপকরণে তৈরি ক্রিম মাখবেন কেন? ত্বক বিশেষজ্ঞ দিব্যা সিং জানালেন ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি ক্রিমে এমন কিছু উপাদান থাকে যা ত্বককে দীর্ঘদিন ভালো রাখে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি ক্রিম পুরোপুরি প্রাকৃতিক জিনিস দিয়ে বানানো।
এই ক্রিম বা লোশনে সব উপাদানই নিজের চাহিদা অনুযায়ী মেশানো যায়। পরিমাণ ও মাত্রা নিজের ত্বক অনুযায়ী মেপে ব্যবহার করা যায়।
এই ক্রিম নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী অল্প পরিমাণে বানানো সম্ভব। ফলে ফ্রেশ জিনিসটা ত্বকে লাগাতে পারবেন। এতে ত্বকের অতিরিক্ত দেখভাল করা সম্ভব হবে। এবং ত্বক দীর্ঘদিন পর্যন্ত ভালো থাকবে।
সারাবছর ক্রিম লাগান
দিব্যা আরও জানালেন, ত্বকের দেখভালে সারা বছরই উপযুক্ত ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন। এখন প্রশ্ন হল, কীভাবে বুঝবেন কোন লোশন বা ক্রিম আপনার ত্বকের জন্য ভালো। তার জন্য কোনও রূপ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। ত্বক শুধুই যে শুষ্ক বা তৈলাক্ত হবে তা নয়। অনেকের আবার কম্বিনেশন ত্বক থাকে। অর্থাৎ কিছুটা তৈলাক্ত, খানিকটা শুষ্ক। হয়তো হাতের পাতা খুবই ড্রাই কিন্তু নাকের চারপাশ, কপাল ইত্যাদি তৈলাক্ত। এমন ত্বকের ভিন্ন ধরনের দেখভাল, আলাদা ক্রিম বা লোশন প্রয়োজন। এই ক্রিম বাড়িতে বানিয়ে নেওয়া ভালো।
হোমমেড ক্রিমের রেসিপি
সব বয়সে সাধারণ ত্বকে ব্যবহারের জন্য কেমন ক্রিম বানাবেন বাড়িতে? দিব্যা বললেন, ১ কাপ গোলাপ জলে ২ ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। নিজের পছন্দ অনুযায়ী সুগন্ধ বেছে নিন। তাতে মেশান চা চামচ ভিটামিন ই অয়েল। এই উপকরণগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে আলাদা করে রেখে দিন। ইতিমধ্যে কাপ আমন্ড অয়েল, কাপ ল্যানোলিন, অল্প বিওয়্যাক্স কুরে নিয়ে তা আঁচে বসিয়ে গলিয়ে নিন। এরপর তা ঠান্ডা হতে দিন। ঠান্ডা হলে তেলগুলো জমে যাবে। এরপর এই মিশ্রণটিকে ব্লেন্ডারে ঢেলে তার সঙ্গে অল্প অল্প করে গোলাপ জলের মিশ্রণটা মেশান। একসঙ্গে পুরোটা ব্লেন্ডারের সাহায্যে মিশিয়ে নিন। দেখবেন একটা ক্রিমের মতো টেক্সচার আসবে। তখন পরিষ্কার কাচের পাত্রে তা তুলে ফ্রিজে রাখুন। এই ক্রিম সব ধরনের ত্বকের পক্ষেই উপযুক্ত।
বাড়িতে বানান নাইট ক্রিম
বয়স মোটামুটি চল্লিশে পৌঁছলে বা তার কিছু আগে থেকেই রোজ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে হালকা একটা নাইট ক্রিম মাখা ভালো। এতে ত্বক দীর্ঘদিন নরম ও উজ্জ্বল থাকে। এই ক্রিমটি যদি বাড়িতে বানাতে পারেন তাহলে তো কথাই নেই। কেমন করে বানাবেন সেই ক্রিম? তার জন্য ১ টেবিল চামচ ক্যাস্টর অয়েল, ১ টেবিল চামচ রোজ অয়েল, ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ১ টেবিল চামচ বিওয়্যাক্স কোরানো একসঙ্গে একটা পাত্রে নিন। তারপর একটা কড়াই বা হাঁড়িতে জল গরম করুন। তার উপর তেলওয়ালা পাত্রটি বসিয়ে ডাবল বয়েলিং পদ্ধতিতে সবটা গলিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ একটু ঠান্ডা করে তাতে ৫ ফোঁটা ভিটামিন ই তেল মেশান। সবটা একটা ভিস্ক বা স্প্যাচুলার সাহায্যে মিশিয়ে নিন। তা কাচের পাত্রে রেখে দিন। রোজ রাতে শোওয়ার সময় মুখে মেখে নেবেন।
তৈলাক্ত ত্বকের উপযুক্ত
তৈলাক্ত ত্বক হলে বা ব্রণর সমস্যা থাকলে ঘরোয়া ক্রিম ও লোশন খুবই ভালো কাজ করে। এতে এমন তেল মেশাতে হবে যেগুলো অতিরিক্ত তৈলাক্ত নয় বা ঘন নয়। তার জন্য ১০ গ্রাম সূর্যমুখী তেল, ৫ গ্রাম আর্গান তেল, ৫ গ্রাম শিয়া বাটার একটা পাত্রে নিন। এবার তা ডাবল বয়েলিং পদ্ধতিতে গরম করে নিন। তারপর অন্য একটা পাত্রে ডিস্টিলড ওয়াটার আর গোলাপ জল নিয়ে তাও ডাবল বয়লারে ফুটিয়ে নিন। এবার তেল ও জলের মিশ্রণ একসঙ্গে মিশিয়ে ক্রমাগত নাড়তে থাকুন। দেখবেন তা মিশে একটা লোশনের মতো জিনিস তৈরি হচ্ছে। তখন সেটাকে কাচের পাত্রে রেখে দিন। এই ক্রিম তৈলাক্ত ত্বকের পক্ষে খুবই উপকারী। এতে ব্রণর সমস্যাও কমবে।
ত্বক যখন শুষ্ক
রুক্ষ ত্বকের জন্য যে ক্রিম উপযুক্ত তাতে বিশেষ কিছু উপাদান থাকে। বাড়িতে বানানোর সময় সেই উপকরণগুলো একটু বেশি মাত্রায় মেশালে ক্রিম ত্বকের উপর বেশি ভালো কাজ করে। অ্যালোভেরা জেল নিন ১ কাপ। তার সঙ্গে মেশান হাফ কাপের একটু বেশি নারকেল তেল। তার সঙ্গে নিন চা চামচ গ্লিসারিন আর কাপ বিওয়্যাক্স। এগুলো সব ১ টেবিল চামচ গোলাপ জল দিয়ে একসঙ্গে গুলে নিন। প্রয়োজনে হাল্কা আঁচে ডবল বয়েলারে তা মেশাবেন। তারপর এই মিশ্রণে ১ চা চামচ ভিটামিন ই তেল মেশান। সবটা ক্রমাগত নাড়তে নাড়তে মেশাতে থাকুন। একটু পরেই মিশ্রণটি ঘন দেখাবে। এই ক্রিমে অ্যালোভেরা জেল একটু বেশি পরিমাণে মেশালে (১ কাপ) তার তৈলাক্তভাব ত্বকে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়।
কম্বিনেশন স্কিনের জন্য
অল্প বয়সে যাদের খুব শুষ্ক ত্বক থাকে তাদেরই একটু বেশি কম্বিনেশন স্কিন হয়। অতএব এই ধরনের ত্বকের জন্য একটু ঘন ক্রিম বা লোশনই উপযুক্ত। এই ধরনের ক্রিম বাড়িতে বানাতে চাইলে কাপ শিয়া বাটার, কাপ কোকো বাটার আর ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল লাগবে। মাইক্রোআভেনে মোটামুটি ৩০ সেকেন্ড কোকো বাটার গলিয়ে নিন। তার চেয়ে কম সময়ে গলে গেলে আরও ভালো। এরপর বাকি দুটো উপকরণ গলানো কোকো বাটারের সঙ্গে মিশিয়ে নাড়তে থাকুন। পুরো মিশ্রণটা ঠান্ডা হয়ে একটু জমে গেলে তা আবারও নেড়ে মেশান। এরপর তা মাখার উপযুক্ত হবে।
অ্যান্টি-রিঙ্কল ক্রিম
বেশি বয়সেও যদি টানটান ত্বক থাকে তাহলে কেমন হয়? দারুণ লাগবে তাই তো? ত্বকের সঙ্গে মনেও তারুণ্যের ঝিলিক অনুভব করবেন তখন। তা এমন ত্বক পাওয়ার জন্য অনেকেই নানা ধরনের ক্রিম, তেল ইত্যাদি মুখে হাতে লাগান। আজ বরং বলি ঘরোয়া পদ্ধতিতে এই ধরনের ক্রিম কেমন করে বানাবেন। তার জন্য কাপ আমন্ড অয়েল, ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল, ২ টেবিল চামচ কোরানো বিওয়্যাক্স, চা চামচ ভিটামিন ই অয়েল আর ১ টেবিল চামচ শিয়া বাটার একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। তার সঙ্গে ল্যাভেন্ডার বা সাইট্রাস ফ্লেভারের এসেনশিয়াল অয়েলও মেশাতে পারেন। সুন্দর গন্ধ হবে। এই ক্রিম রোজ স্নানের পরে এবং সন্ধেবেলা মুখে, হাতে, গলায়, ঘাড়ে লাগান। চোখের চারপাশে বিশেষভাবে মাখুন। দেখবেন ত্বক অনেক বয়স পর্যন্ত টানটান থাকবে। যে কোনও ঘরোয়া ক্রিমেই এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করুন, বললেন দিব্যা সিং। নিজের পছন্দসই সুগন্ধযুক্ত এসেনশিয়াল অয়েল ক্রিমে সুন্দর গন্ধ আনে। সকাল সন্ধে এই ক্রিম মুখে লাগিয়ে দেখুন, ত্বক ভালো থাকবেই।