মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিশেষ শুভ, উপার্জন বাড়বে দ্রুত। কারও কথায় কাজ করে বিপদে পড়তে ... বিশদ
• কলেজ ক্যাম্পাসে নীল চুলের তন্বীর বেশ নামডাক।
• অফিস মিটিংয়ে ব্রাউনিশ স্টেপ কাটকে আড়চোখে দেখেন সবাই।
• বিয়েবাড়ির মধ্যমণি ছিলেন সল্ট অ্যান্ড পেপার লুকের জামাইবাবু।
হাল আমলে এ তো চেনা ছবি। কেতায় বাঁচা যাকে বলে। লুকে নতুনত্ব আনতে সহজ রাস্তা, চুলে রঙের খেলা। বয়স, ব্যক্তিত্বকে মাথায় রেখে চমৎকার হেয়ার কালার যদি করিয়ে নিতে পারেন, তাহলে সাজের অর্ধেক কাজ সেখানেই সেরে রাখা যাবে। কোন রং করাবেন, তার যত্নই বা কেমন হবে সে সব নিয়ে পরামর্শ দিলেন গোদরেজ প্রফেশনালস-এর ন্যাশনাল টেকনিক্যাল হেড হিনা দলভি।
হিনা মনে করেন একবার চুলে রং করালে রঙের প্রেমে পড়ে যাবেন। তখন আর পিছনে ফিরে তাকানো যাবে না। তাই রং করার আগে কিছু জিনিস মাথায় রাখা জরুরি। কী কী মনে রাখবেন? হিনা জানালেন, প্রথম হল ওয়ার্কিং লাইফস্টাইল। সেই অনুযায়ী চুলের রং বেছে নিন। দ্বিতীয়ত, চুলে রং করালেই কাজ শেষ নয়। তার সঠিক যত্ন জরুরি। কতটা যত্ন করতে পারবেন, কতটা সময় দিতে পারবেন সেটা আগে ভেবে নিন। যত্ন করতে না পারলে এই পথ এড়িয়ে চলাই ভালো। তৃতীয়ত কী ধরনের প্রোডাক্ট চুলে লাগাচ্ছেন, সেটা জেনে নেওয়া খুব জরুরি। ‘বিশেষজ্ঞকে জিজ্ঞেস করুন, চুলে কী লাগাচ্ছেন। সেটা আপনার চুলে প্রয়োজন কি না যাচাই করে নিন। এমন যেন না হয়, যেটা আপনার প্রয়োজন নেই, সেটাও চুলে লাগানো হচ্ছে’, বললেন হিনা।
সামনে কোনও অনুষ্ঠান। চটজলদি লুক বদলে ফেলতে হেয়ার কালার করিয়ে নেওয়ার প্রবণতা অনেকেরই রয়েছে। হিনা মনে করেন, হঠাৎই এহেন সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যত্নের খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া ভালো। কেমন সেই যত্ন? হিনার পরামর্শ, ‘বিশেষজ্ঞের কাছে জেনে নিন আপনার চুলের ধরন অনুযায়ী কোনটা সঠিক শ্যাম্পু। সপ্তাহে অন্তত একবার হেয়ার মাস্ক লাগাতে হবে। আরগান অয়েল ব্যবহার করুন। এই রুটিন মেনে চললে আপনি যে কোনও সময় সব রকম অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি।’
রং আদতে একটি রাসায়নিক। অনেক কম বয়স থেকে রং ব্যবহার করলে কি চুল অচিরেই সাদা হয়ে যাবে? এই প্রশ্নও উঁকি দেয় মনে। দীর্ঘদিন ধরে পেশাদার হিসেবে কাজ করা হিনা বললেন, ‘রং করলে পাকা চুল হয় না। এটা মিথ, সত্যি নয়। চুলের গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা হেয়ার কালারের নেই। মেলানিনকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা নেই। এটা সুপারফিশিয়াল কালারিং প্রসেস। যেটা চুলকে শার্প করে। ডেড সেলের উপর রং করা হয়। এটা চুলের বৃদ্ধিতেও কোনও ক্ষতি করে না। আয়রন, ভিটামিনের অভাব, বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে চুল পেকে যায়। ফলে রং করানোর আগে এই ভয় পাবেন না।’ তবে রং থেকে চুলের যে কোনও ক্ষতিই হয় না, এমন দাবিও করেননি তিনি। বুঝিয়ে বললেন, ‘রঙে কেমিক্যাল থাকেই। ফলে চুলের কোনও ক্ষতি হয় না, সেটা বলতে পারি না। কিন্তু বাড়িতে প্রয়োজন অনুয়ায়ী যত্নে রাখলে এবং সালফেট-প্যারাবেন ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করলে ও কন্ডিশনার লাগালে কোনও সমস্যা নেই।’
চুলে রং করানোর ইচ্ছে হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন হিনা। এ কাজ বাড়িতে আনাড়িভাবে করার নয়। বয়সের হিসেবে কোন সময় থেকে এই পদ্ধতি শুরু করা যায়? হিনার জবাব, ‘রঙের নেশা হলে আর ফেরা যায় না। ১৮ বছর বয়সের আগে হেয়ার এক্সটেনশন করানোর জন্যই বলব। হেয়ার কালার তারপর।’ ছ’মাস বাদে বাদে চুলে রং করানো ভালো বলে মনে করেন তিনি।
চুলে রং করালে লুক বদলে যায়, একথা ঠিক। কিন্তু কেমন রং বেছে নিচ্ছেন, এই অভিযানে সেটা গুরুত্বপূর্ণ। বয়স, ব্যক্তিত্ব, পেশা সব কিছুর কথা মাথায় রেখে রং নির্বাচন করুন। আপনাকে কোনটা মানাবে, সেটা বুঝে নিন। অন্য কাউকে ভালো লাগছে মানেই সে রং আপনার ব্যক্তিত্বকেও অন্য মাত্রায় পৌঁছে দেবে, এটা ভাবা বৃথা। তবে যে রংই আপনার আভরণ হোক না কেন, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তা নিয়ে চলতে পারাটাই আসল কথা। রং যেন কুণ্ঠার কারণ না হয়। কারও ত্বকের কোনও সমস্যা থাকলে চুলে রং করানোর আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিন।
মনে রাখবেন :
১) চুল রং করানোর পর শুষ্ক হয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাই চুলকে হাইড্রেট রাখা জরুরি। সেটাই ম্যাজিকের কাজ করবে। নরম এবং উজ্জ্বল রাখতে ডিপ কন্ডিশনিং করতে হবে।
২) রং করানোর পর পরই শ্যাম্পু করবেন না। এতে চুলের রং মলিন হয়ে যাবে। অন্তত ৪৮ ঘণ্টা পরে শ্যাম্পু করলে ভালো ফল পাবেন।
৩) অনেকেই হাইলাইট বা স্ট্রিকস পছন্দ করেন। অর্থাৎ পুরো চুলের রং পাল্টে না ফেলে নির্দিষ্ট অংশের ভোলবদল। সেক্ষেত্রে মাসে একবার বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে টাচ আপ করিয়ে নেওয়া জরুরি। পুরো চুলে রং করালে ৪৫ দিন অন্তর টাচ আপ করান।
৪) গরম জলে চুল ধোবেন না। এতে স্ক্যাল্পের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়ে যায়। ঈষৎ উষ্ণ জলে চুল ধোওয়া সবথেকে ভালো। সপ্তাহে অন্তত তিনদিন শ্যাম্পু করা জরুরি।
৫) চুলে রং করানোর পর পরই ব্লো ড্রাই, স্ট্রেটনিং, কার্লিং না করানোই ভালো। এতে চুল ভঙ্গুর হয়ে যায়। এছাড়াও ক্লোরিনমুক্ত জলে স্নান করুন। জলে ক্লোরিন থাকলে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।