মাঝারি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিশেষ শুভ, উপার্জন বাড়বে দ্রুত। কারও কথায় কাজ করে বিপদে পড়তে ... বিশদ
হাল আমলের বাংলা ছবির গানে শুনছি, ‘সাজো...সাজাও এমন করে/বুঝতে নারি কেমন তুমি...।’ এ সময়ের ব্রাইডাল মেকআপ বা বিয়ের দিনের বিশেষ মুখসজ্জাও কি সে কথা বলছে? অর্থাৎ এমন মেকআপ হবে যে কনের চেনা চেহারা ঢাকা পড়বে! নাকি সে তুমি, সেই তুমিই থাকবে? অর্থাৎ মেকআপ এত সূক্ষ্ম হবে যে মুখের সাধারণ ফিচার নষ্ট হবে না অথচ বিশেষ দিনটির জন্য সাজ কনেকে ঠিক আলাদা করে রাখবে বাকি সকলের থেকে। এসব নিয়েই কথা হচ্ছিল অভিষেক নাইয়ার সঙ্গে। এমনিতে ডিজাইনার হিসেবে পরিচিতি তাঁর। তবে মেকআপ নিয়েও যথেষ্ট ব্যুৎপত্তি রয়েছে অভিষেকের। অনেকেই হয়তো জানেন না, গত পনেরো বছর ধরে মেকআপেও হাত পাকিয়েছেন তিনি। ব্রাইডাল মেকআপ তাঁর বিশেষ আগ্রহের জায়গা। তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম আমাদের দেশে এখন ব্রাইডাল মেকআপ নিয়ে কীরকম পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে বা কনেরা কী ধরনের মুখসজ্জা পছন্দ করছেন? কথায় কথায় অভিষেক বললেন, ‘অতীতে ‘পাউডারিশ লুক’ বা ‘আপ স্কিন টোন’ অর্থাৎ যার ত্বকের রং যেমন রয়েছে, তার থেকে বাড়িয়ে হাই স্কিন টোন করার ট্রেন্ড ছিল। অর্থাৎ একটু বেশি-বেশি সাজব যাতে অন্যদের থেকে আলাদা লাগে। কিন্তু এটা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে। এখন সাধারণভাবে দু’রকম প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। একটা ক্যাটেগরিতে পড়ছে আরবি মেকআপ-এর প্রভাব। যেখানে রয়েছে হাই বেস, এয়ার ব্রাশ মেকআপ, হাই ডেফিনেশন মেকআপ ইত্যাদি। হাই ডেফিনেশন মেকআপে মাল্টি কালার্ড আইশ্যাডো থেকে শুরু করে ভারী আই ল্যাশ, চুলে অনেক বেশি ভল্যুম দেওয়া ইত্যাদি থাকছে। সোশ্যাল মিডিয়া খুললে সেটা বেশ বোঝা যায়।’
তবে অভিষেক নিজে বা কলকাতার আরও অনেক নামী মেকআপ আর্টিস্ট ব্রাইডাল মেকআপের যে কাজটা করছেন, সেটা এর বিপরীত খাতে। অভিষেকের কথায়, ‘যাঁদের মধ্যে পরিমিতিবোধ রয়েছে তাঁরা চাইছেন মেকআপ-এর পরেও নিজেকে যেন নিজের মতোই দেখতে লাগে। কেননা কন্ট্যুরিং করলে ফেস-এর ড্রয়িং পাল্টে যায়। সেটা আদৌ করব কি না, বা করলে কতটুকু করব, সেই ভারসাম্যটা খুব প্রয়োজন। মেকআপে ফাউন্ডেশন থেকে কনসিলার, কমপ্যাক্ট কত কিছু ব্যবহার করতে হয় একের পর এক। তারপরেও যেন সাজটা পরিমিত লাগে, এটাই তাঁরা চান। বিয়ের দিনে অন্য কারও মতো দেখতে লাগুক, সেটা ওই কনেদের কাছে কাম্য নয়।’
মেকআপে প্রথম আসে বেস-এর কথা। অভিষেকের মতে, ‘বেস মেকআপ একদমই যেন মোটা না হয়। অর্থাৎ কনসিল করতে গিয়ে খুব বেশি অ্যাপ্লিকেশন করে মোটা লেয়ার হয়ে গেলে কনে হাসলে বা কথা বললে মুখে তৈরি হবে ক্র্যাক লাইনস। যেটা দেখতে একেবারেই ভালো লাগবে না। তাই বেস মেকআপ খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
এর সঙ্গেই সাজের ক্ষেত্রে কনের চাওয়া নিয়ে আর একটি বিষয় যোগ করলেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘অনেকেই চান স্কিনটা যাতে গ্লো করে, গর্জিয়াস লুক থাকবে অথচ সূক্ষ্মভাবে। ফলে মাথায় রাখতে হবে যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকুই সাজব। শুধু মেকআপ নয়, এর সঙ্গে স্টাইলিংটাও জড়িত। আমি ডিজাইনিং-এর কাজ করি বলে সেটাও গাইড করি। অর্থাৎ শাড়ি, গয়না, হেয়ারস্টাইল সবটাই খুব নান্দনিক রাখতে হবে। মেকআপের ক্ষেত্রে স্কিন টোন কনের সাধারণ ত্বকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাখতে হবে। অর্থাৎ কারও রং চাপা হলে মুখের মেকআপ সাদাটে হবে না। নিজের ত্বকের রংই থাকবে কিন্তু একটা দীপ্তি যেন ছড়িয়ে থাকবে মুখে, যা তাঁকে বাকিদের থেকে আলাদা করবে। কারণ ওই দিনটা তো তাঁরই! ফ্যাশন যেমন এখন মিনিমালিস্টিক, মেকআপও হবে তাই। তারই সঙ্গে মুখে ছোটখাট কোনও দাগ বা ত্রুটি থাকলে সেটা যেন ধরা না পড়ে, এই দাবিটা থাকে মোটামুটি কনেদের তরফে। সেটা করতে আলাদা করে স্কিন টোন পাল্টাতে হয়, এমন নয়। প্রকৃত রং ধরে রেখে কনসিল করে ওই ত্রুটি মিটিয়ে দেওয়া সম্ভব।’
মিনিমাল মেকআপে গর্জিয়াস দেখতে লাগাটাই তাহলে মূল মন্ত্র? ‘আমার কাছে অন্তত সেরকম ব্রাইডই আসছেন। তাঁরা পরিমিত আইশ্যাডো চান। লিপস্টিকও চড়া চান না।’ হবু কনেদের কিছু বিষয় মাথায় রাখতে বলছেন অভিষেক। যেমন, নিজের স্কিন নিয়ে আত্মবিশ্বাসী থাকতে হবে। ত্বকের স্বাভাবিক রং বজায় রেখে মেকআপই যে ভালো, বুঝতে হবে। কোনও কিছু ওভারডু করলে চলবে না। একটু ম্যাট লুক থাকবে অথচ তাতে ঔজ্জ্বল্যের অভাব রয়েছে মনে হবে না। আর শাড়ির রঙেই আইশ্যাডো ম্যাচ করাতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। এক্ষেত্রে কালার যদি ‘টোন অন টোন’ (অর্থাৎ স্কিন টোনের সঙ্গে কোনটা যাচ্ছে) থাকে বা স্মোকি আইজ করা যায়, বেশ লাগবে। টোন অন টোন-এ ব্রাউন স্মোকি আইজ খুব সুন্দর লাগে। আর কাজলে মেয়েদের সবসময়ই ভালো দেখতে লাগে। বিয়ের দিনে ট্র্যাডিশনাল সাজে কাজল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। একটু মোটা করে কাজলের ছোঁয়া চোখ অপূর্ব করতে পারে। কাজলের এন্ড লাইনে একটু স্মাজ ভাব, ধরা যাক ব্রাউনিশ— এতে চোখে একটা ভল্যুম আসে। এক্সটেনশন আইল্যাশও লাগাতে পারে। তবে সেটা যেন লাইট ল্যাশ হয়, যাতে ন্যাচারাল লাগে। ডবল লেয়ার্ড বা খুব হেভি ল্যাশ লাগালে কৃত্রিম লাগবে। ল্যাশ না লাগিয়ে মোটা করে মাস্কারা লাগালেও ভালো লাগবে।
এছাড়া ব্লাশ অন-এর ক্ষেত্রে কালার বেছে নেওয়াও খুব গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রেও টোন অন টোন হওয়া দরকার। স্টাইলিং-এর কালার প্যালেট মাথায় রেখে এটা করা বুদ্ধিমানের কাজ। ব্রাইডালের ক্ষেত্রে খুব বেশি কন্ট্যুরিংও দরকার পড়ে না। কারণ তাতে ছবিতে ডার্ক ভাব আসে বা মুখের আকৃতি পাল্টে যায়। কনের মুখকে যতটুকু প্রাধান্য দিতে করা দরকার, ততটুকু করলেই হল। আর ঠোঁটের জন্য খুব ডার্ক শেড বেছে না নেওয়াই ভালো। চোখ ভারী করে ন্যুড শেডের লিপস্টিক একটা ভারসাম্য তৈরি করে। ন্যুড শেডের মধ্যে পিঙ্ক, রাস্ট, রেডিশ-ও পাওয়া যায়। এই প্যালেটগুলো একটা ওয়ার্ম টোন তৈরি করে, যেটা বিয়ের দিনের জন্য আদর্শ। এছাড়া মেকআপে খুব গ্লিটারি কিছু না দেওয়াই ভালো। গ্লিটারি ও মেটালিক, দু’রকমই আছে, জানালেন অভিষেক। তাঁর মন্তব্য, ‘মেটালিক-এ একটা ঔজ্জ্বল্য বাড়ানোর সুযোগ আছে। গ্লিটারি ভীষণ চিকচিকে, সেটা মনে রাখা ভালো। নিজেকে নিজের মতো তুলে ধরার মেকআপই আমার মনে হয় সেরা।’
ছবি: অংশুমান চট্টোপাধ্যায়, দেবাশিস বিশ্বাস
গ্রাফিক্স : সোমনাথ পাল