দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম বাড়বে। অফিস কর্মীদের পক্ষে দিনটি শুভ । শিক্ষার্থীদের সাফল্য ও খ্যাতি ... বিশদ
সুহৃদং সর্বভূতানাং জ্ঞাত্বা মাং শান্তিমৃচ্ছতি।।
—‘আমাকে যজ্ঞ ও তপস্যার ফলদানের কর্তা ও ফলভোক্তা, সর্বলোকের মহেশ্বর ও সর্বজীবের সুহৃদ বলে যিনি জানেন, তিনি শান্তিলাভ করেন।’
অবতাররূপে শ্রীকৃষ্ণ এই কথা বলছেন। চতুর্থ অধ্যায়ে তিনি এই সম্বন্ধে বলেছেন। ভোক্তারং যজ্ঞতপসাং, ‘যতরকম যজ্ঞ ও তপস্যা হয়, তার ফলভোক্তা ও ফলদাতা’ হিসাবে আমাকে জানো। তাৎপর্য এই, এগুলি শেষ পর্যন্ত তাঁর কাছেই, সেই পরম সত্যের কাছেই পৌঁছয়। সর্বলোকমহেশ্বরম্, ‘সমগ্র বিশ্বের প্রভু’, তিনি এই বিশ্বের ধারক, এক ও অদ্বিতীয় অনন্ত দিব্যসত্তা। তাঁর তৃতীয় বৈশিষ্ট্যটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি সুহৃদং সর্বভূতানাং, ‘সর্বজীবের বন্ধু’। ঈশ্বরকে এখানে সকলের সুহৃদ বলা হয়েছে। তাঁকে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। ভারতীয় ধর্ম থেকে ভয়ের ভগবান বহু যুগ আগেই বিদায় নিয়েছিলেন। তার পরিবর্তে আবির্ভূত হলেন প্রেমিক ঈশ্বর। এইজন্য শ্রীকৃষ্ণ এখানে বলছেন, ‘আমি সকলের সুহৃদ’। আমাকে এইভাবে উপলব্ধি করলে মানুষ শান্তিলাভ করে। এইটিই সর্বশেষ পংক্তি।
এটি অতি সুন্দর শ্লোক যার উপজীব্য ভক্তি বা বিশুদ্ধ প্রেম। কার প্রতি ভক্তি? বেদান্তের সগুণ-নির্গুণ ঈশ্বরের সগুণ ভাবের প্রতি ভক্তি। সপ্তম ও অন্যান্য অধ্যায়ে এই ভক্তির বিষয়ই আলোচিত হবে। এখানে কেবল তার একটু ভূমিকা করে বলা হয়েছে, ‘আমাকে সকল জীবের সুহৃদ বলে জানো’। কী চমৎকার ভাব! কী আশ্বাসের কথা! আমাদের সীমিত শক্তি, সীমিত ক্ষমতা, কিন্তু এক অসীম শক্তি আমাদের পিছনে আছেন। ইচ্ছে করলে আমরা সবসময় সেই অনন্ত শক্তির ভাণ্ডার থেকে শক্তিলাভ করতে পারি। যেমন ধরুন, একটি ছোট ব্যাঙ্ক যদি অনেক লোক একসঙ্গে টাকা তুলতে আসে, তবে ব্যাঙ্কটি লাটে উঠবে। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যদি পিছনে থাকে, তবে সেই ব্যাঙ্কের কোন ভয় নেই। ঠিক তেমনই, আমাদের মনুষ্যজীবনের শত দুর্বলতা সত্ত্বেও যদি আমার প্রবল বিশ্বাস থাকে যে, এই বিশ্বের পশ্চাতে এক অনন্ত সত্য আছেন, তিনি আমার পিছনেও আছেন এবং তিনিই আমার নিকটতম বন্ধু, আমার অন্তরাত্মা, আমাকে সাহায্য করতে সদা প্রস্তুত, তবে আমরা মানসিক অশান্তি থেকে মুক্ত থাকব ও শান্তি পাব।
আজকের এই মানসিক অশান্তির জগতে, ঈশ্বরকে আমাদের একান্ত প্রয়োজন। পাশ্চাত্যের এক লেখক বলেছেন, ‘ঈশ্বর বলে যদি কেউ নাও থাকেন, তবে একজন ঈশ্বরকে উদ্ভাবন করতে হবে।’ বাস্তবিক, আজ তাঁকে আমাদের বড় প্রয়োজন। ঈশ্বরের প্রতি প্রবল বিশ্বাস রাখুন, কিন্তু এখানে তাঁকে উদ্ভাবন করবার প্রয়োজন নেই। আমাদের দর্শন বলে যে এই পরিবর্তনশীল জগতের পশ্চাতে একটি অপরিবর্তনীয় সত্য আছে।