জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
স সন্ন্যাসী চ যোগী চ ন নিরগ্নির্ন চাক্রিয়ঃ।।
—‘কর্মফলের ওপর নির্ভর না করে যে ব্যক্তি কর্তব্যকর্মের অনুষ্ঠান করেন, তিনি (যথার্থ) কর্মত্যাগী এবং দৃঢ়চিত্ত; যিনি অগ্নি স্পর্শ করেন না, তিনি নন, বা যিনি কর্ম করেন না, তিনিও নন।’
এই প্রথম শ্লোকটিতেই শ্রীকৃষ্ণ আমাদের বলছেন, ‘কে যোগী, কে যথার্থ সন্ন্যাসী বা ত্যাগী’। তিনি নিজেই এই প্রশ্ন তুলে নিজেই তার উত্তর দিচ্ছেন: অনাশ্রিতঃ কর্মফলং কার্যং কর্ম করোতি যঃ, ‘যিনি নিজের জন্য কোন কর্মফলের প্রত্যাশা না করে, কর্তব্য কর্ম করে যান’—এই হলো দৃষ্টিভঙ্গি। গীতার সমগ্র শিক্ষার ভিত্তিই এই অনাসক্তি—কর্মফলের উপর নির্ভর করো না; তা সকলের প্রাপ্য, শুধু তোমার নয়। অতএব, অনাশ্রিতঃ কর্মফলং কার্যং কর্ম করোতি যঃ, এই বাণীর তাৎপর্য হলো: নিষ্ঠা ও আত্মোৎসর্গের মনোভাব নিয়ে কর্তব্যকর্ম পালন করুন। সেখানে ক্ষুদ্র ‘আমি’কে আর দেখা যাবে না। বিরাট ‘আমি’, সকলকে অঙ্গীভূত করে যে আমি, তা-ই ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। কাজেই, এই অবস্থায় আমাদের কর্মফল আমরা অনায়াসেই ত্যাগ করতে পারি—‘এরপর আর আমাদের কর্মফলের প্রয়োজন নেই’। অনাশ্রিতঃ কর্মফলং কার্যং কর্ম করোতি যঃ, স সন্ন্যাসী চ, যাঁর এইরকম মনোভাব, ‘সেই ব্যক্তি যথার্থ সন্ন্যাসী, যথার্থ যোগী, যথার্থ ত্যাগী পুরুষ, সত্যই একজন যোগসিদ্ধ পুরুষ’; ন নিরগ্নিঃ ন চাক্রিয়ঃ, ‘যাঁরা কেবল আনুষ্ঠানিক সন্ন্যাস গ্রহণ করেছেন, তাঁরা নন।’ নিরগ্নিঃ কথাটির অর্থ, ‘যিনি অগ্নিকুণ্ডে নিজের আহার্য প্রস্তুত করেন না’, গৃহস্থরা যজ্ঞের জন্য আগুন জ্বালান, আবার রান্নাবান্নার কাজেও আগুন ব্যবহার করেন। সন্ন্যাসী কিন্তু নিজের জন্য রাঁধেন না, ভিক্ষা করে যা পান, তাতেই তিনি পরিতুষ্ট থাকেন। তাই সংস্কৃত ভাষায় তাঁকে নিরগ্নিঃ বলা হয়। কিন্তু কেবল নিরগ্নিঃ হলেই যে কেউ সন্ন্যাসী হয়ে গেলেন, তা নয়; ন চাক্রিয়ঃ, ‘যিনি কর্ম করেন না, তিনিও নন।’ যিনি ফলের প্রতি অনাসক্ত হয়ে কর্মানুষ্ঠান করেন, তিনিই যথার্থ সন্ন্যাসী।
কেন আমরা কর্মানুষ্ঠান করে থাকি? এর কারণ হলো আমাদের অপূর্ণ কামনা-বাসনা; তাই কর্মানুষ্ঠান আমাদের করতেই হয়, কামনাই আমাদের কর্মে প্রবৃত্ত করে। যখন আপনার কামনা-বাসনা থাকবে না, তখন আপনার কর্মও থাকবে না। এই কারণে, কর্মত্যাগকে উচ্চ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বদের একটি বৈশিষ্ট্য বলে মনে করা হয়। কিন্তু কর্মত্যাগ আদৌ উচ্চ আধ্যাত্মিকতার লক্ষণ নয়। অতএব, কর্মত্যাগ করেই আপনি যথার্থ যোগী বা সন্ন্যাসী হতে পারেন না। ন নিরগ্নিঃ ন চাক্রিয়ঃ। ক্রিয়ঃ কথার অর্থ ‘কর্ম’। কর্মে উৎসাহ দেয় বাসনা; প্রথমে বাসনা, তারপর উদ্দীপনা এবং তারপর কর্ম।
স্বামী রঙ্গনাথানন্দের ‘ভগবদ্গীতা ও বিশ্বজনীনবার্তা’ (২য় খণ্ড) থেকে