কাপড়ের ব্যবসায় অগ্রগতি। পেশাদার শিল্পীদের পক্ষে দিনটি শুভ। উচ্চ/উচ্চতর শিক্ষায় উন্নতি। ... বিশদ
কী এই সেমিকন্ডাক্টর? তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম একধরনের বিশেষ ধাতব বস্তু। সিলিকন, জার্মেনিয়াম, গ্যালিয়াম আর্সেনাইড প্রভৃতি রাসায়নিক যৌগকে সেমিকন্ডাক্টর বলা হয়। নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এগুলির তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতাও বেড়ে যায়। এই ইন্ডাস্ট্রিতে সেমিকন্ডাক্টর যন্ত্রের ডিজাইন, অ্যাপ্লিকেশন এবং অ্যাসেম্বলির কাজ হয়। যেকোনও ইলেকট্রনিক সার্কিট তৈরিতে সেমিকন্ডাক্টর ডিভাইস অত্যন্ত জরুরি একটি উপাদান। কম্পিউটারের সিপিইউ, ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, ডিজিটাল ক্যামেরা, টিভি, ওয়াশিং মেশিন থেকে শুরু করে গাড়ি এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারি নির্মাণ পর্যন্ত বহুক্ষেত্রে সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহৃত হয়। আজকের দিনে শিল্পের ফোকাস হচ্ছে সিলিকন চিপস এবং সেমিকন্ডাক্টরস—যেগুলি আধুনিক প্রযুক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ। নিত্যনতুন বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনে এই জিনিস শক্তি জোগায়। ইলেকট্রনিক ডিভাইসের কার্যকারিতা সর্বাধিক করে তুলতে এর বিকল্প নেই। গৃহিণী রান্নাঘরের কাজকর্মকে জলবৎ করে তোলা থেকে শুরু করে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে বিপ্লব ঘটানো পর্যন্ত সবেতেই সেমিকন্ডাক্টর এক অনবদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। এনার্জি এফিশিয়েন্ট লাইটিংয়ের জন্য আমরা যে এলইডি বাল্ব ব্যবহার করি এবং সূর্যালোককে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্য যে সোলার প্যানেল আমরা দেখতে পাই, সেখানেও বস্তুত এক জাদুকরের ভূমিকায় অবতীর্ণ সেমিকন্ডাক্টর। আধুনিক সিগন্যাল সিস্টেমের সূক্ষ্মতার যাবতীয় কৃতিত্ব এই বস্তুটির। যেকোনও বড় ডিভাইসকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে তোলা এবং তার পারফর্ম্যান্স ও এনার্জি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতেও অনবদ্য কাজ করে জিনিসটি। এরপর আমাদের বুঝতে বাকি থাকে না, শিল্প বিপ্লবের আসন্ন পর্বে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি আরও কত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। বরং একথাই অকাট্য যে, সেমিকন্ডাক্টরই হচ্ছে আগামীর শিল্প।
এই সংক্রান্ত পণ্যের ব্যবহার বিশ্বব্যাপী হলেও শিল্পটি একেবারে কেন্দ্রীভূত হয়ে আছে গুটিকয়েক কোণে—যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং তাইওয়ান। এই সংক্রান্ত ডিজাইন প্রস্তুত, গবেষণা এবং ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে তারাই ‘কি প্লেয়ার’। এই দেশগুলি রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টে (আর-অ্যান্ড-ডি) বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে চলেছে। কারণ তারা জানে, প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সূত্রে বিশ্ববাজার দখল করতে সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রির চেয়ে বড় হাতিয়ার এই মুহূর্তে মানব সভ্যতার হাতে নেই। আর সেখানেই দরজা খুলে যাচ্ছে আমাদের কলকাতা তথা বাংলার সামনে। ভারত-মার্কিন যৌথ উদ্যোগে কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার নির্মাণের ঐতিহাসিক ঘোষণাকে ‘রাজ্যের মুকুটে নয়া পালক’ বলেই এক্স-এ উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ওইসঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা, রাজ্যের নিরলস প্রচেষ্টাতেই কলকাতাকে এই অভূতপূর্ব বিনিয়োগের কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। প্রথম সারির এই ‘নলেজ বেসড’ শিল্পস্থাপনের ক্ষেত্রে রাজ্যের তরফে সবরকম সহযোগিতা করারও আশ্বাস দিয়েছেন মমতা। ডেলাওয়ারের উইলমিংটনে কোয়াড লিডার্স সামিটের মাঝেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে একাধিক প্রকল্প নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। তার মধ্যেই রয়েছে কলকাতায় সেমিকন্ডাক্টর ফ্র্যাব্রিকেশন প্লান্টও। সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে মার্কিন সংস্থা ‘গ্লোবাল ফাউন্ড্রিজ’ (জিএফ)। ‘জিএফ কলকাতা পাওয়ার সেন্টার’ নামে সেমিকন্ডাক্টর প্লান্ট তৈরির দায়িত্ব ওই সংস্থাটিই পাচ্ছে। উদ্যোগটি সফল হলে বিদেশ থেকে ভারতে সেমিকন্ডাক্টর আমদানি কমবে এবং বাংলায় বিকশিত হবে কর্মসংস্থানের পরিবেশ। তাই এই সুযোগকে আমাদের সমস্তরকমে স্বাগত জানানো দরকার। এই মুহূর্তে সরিয়ে ফেলা চাই যাবতীয় সংকীর্ণতা, অসূয়া মনোভাব এবং মতিচ্ছন্ন রাজনৈতিক লড়াই। কলকাতাসহ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা যাতে সবরকমে রক্ষিত হতে পারে, তার জন্য সদাসতর্ক থাকতে হবে প্রতিটি নাগরিককে। তাই এই প্রশ্নে প্রত্যাশিত যে শাসক এবং সবগুলি বিরোধী রাজনৈতিক দল সবচেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, বাংলার বদনাম হয় এমনটা কেউই করবেন না এবং রাজ্যের বদনাম রটানো থেকেও বিরত থাকবেন সকলে। কেননা, বিনিয়োগ আকর্ষণসহ শিল্পায়নে গতি আনতে সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং আঞ্চলিক খ্যাতির ভূমিকা বিরাট।