মৃৎশিল্পী, ব্যবসায়ী প্রমুখদের বিশেষ কর্মোন্নতি যোগ প্রবল। পেশাদারি কর্মে শুভ ফল প্রাপ্তি। মানসিক চাঞ্চল্য। ... বিশদ
টানা ছ’সপ্তাহ ধরে চলছে ডাক্তারদের একাংশের কর্মবিরতি। আর এরই মাঝে হাজির দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অংশে ভয়াবহ বন্যা। সরকারি হিসেবে, বুধবার পর্যন্ত বন্যার বলি আমাদের ১৯ জন সহনাগরিক। এছাড়া দক্ষিণবঙ্গের ১২টি জেলায় দুর্গত অন্তত ৪৫ লক্ষ নরনারী। কিন্তু একসঙ্গে এত সংখ্যক মানুষকে ফ্লাড শেল্টারে ঠাঁই দেওয়া কি সম্ভব? তবুও প্রশাসন প্রায় লাখ দেড়েক মানুষকে তাদের উদ্যোগে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। বন্যা তো শুধু মানুষের ঘরবাড়ি কেড়ে নেয় না, ওইসঙ্গে আরও নানাবিধ বিপদে ফেলে। সবচেয়ে বড় সঙ্কট দেখা দেয় খাদ্য ও পানীয় জলের। স্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয়ের অভাব হয়ে ওঠে একাধিক অসুখ-বিসুখেরও কারণ। তার মধ্যে জ্বর, সর্দি, কাশি, ডায়ারিয়া, চর্মরোগ, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রবীণ নাগরিকদের বয়সজনিত কিছু রোগ তো থাকেই। এমন দুঃসময়ে সেবাযত্ন ও ওষুধের অভাবে এবং টেনশনে সেই পুরনো রোগগুলি আরও জাঁকিয়ে বসতে পারে অনেকের ক্ষেত্রে। সব মিলিয়ে এত মানুষ যে এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যেই পড়েছেন, তা বলাই বাহুল্য। এমন পরিস্থিতিতে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কাজ শেষ হলেই যাঁদের প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয় তাঁরা হলেন ডাক্তার। বন্যাকবলিত এলাকা মানেই দিকে দিকে মেডিক্যাল ক্যাম্প এবং সেসব স্থানে ডাক্তার, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের তৎপরতা। তাঁদের মিলিত সেবাযত্নেই একে একে সুস্থ হয়ে ওঠেন রোগীরা। অনেক কষ্টের ভিতরেও হাসতে পারেন হঠাৎ অসহায় হয়ে পড়া মানুষগুলি। কিন্তু এবার সেই আকাঙ্ক্ষিত, বাঞ্ছিত ছবিটা বহুলাংশে যেন উধাও! সৌজন্যে সেবা মুলতুবি রেখে বাংলার ডাক্তারদেরই একাংশের নাছোড় আন্দোলন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করে বিমর্ষ। কেননা, একসঙ্গে ১২টি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা যাকে বলে ভেসে গিয়েছে। বহু ব্লক বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে জেলা সদর থেকে। ধ্বংস হয়ে গিয়েছে বহু কাঁচাবাড়ি। দেওয়াল চাপা পড়েও মারা গিয়েছেন কেউ কেউ। মৃতের তালিকায় রয়েছে ছোটরাও। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরে দোতলা বাড়িও তলিয়ে গিয়েছে! ডিভিসির বাঁধ থেকে যেভাবে সাড়ে ৩ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে তাতে মুখ্যমন্ত্রী ভয়ানক ক্ষুব্ধ। তাঁর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সংস্থাটি এমন অবিবেচকের কাজ অতীতে করেনি। ঝাড়খণ্ডকে বাঁচাতে গিয়েই বাংলার অসংখ্য মানুষকে এইভাবে চরম বিপদের মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই ‘ম্যান-মেড’ বন্যার তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদও জানিয়েছেন তিনি। মমতা কথা বলেছেন ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এবং ডিভিসি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। এরপরেও কি বলে দিতে হবে—মানুষ বড় অসহায়, তারা কাঁদছে, সত্যিই কাঁদছে অসংখ্য মানুষ অঝোরে। এই পরিস্থিতি সরকার একা সামলাতে পারবে না। কিছু এনজিও’কে সঙ্গে নিয়ে বাকি উদ্ধার কাজ নিশ্চয় চলবে। সরকার ত্রাণও দেবে তার মতো। কিন্তু চিকিৎসার মতো জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তারের বিকল্প যে শুধুই ডাক্তার! তাই বিষয়টি তাঁদের বিবেকের উপর ছেড়ে দেওয়া ছাড়া উপায় কী? ওইসঙ্গে বন্যা মোকাবিলার স্থায়ী সমাধানও খুঁজতে হবে। মানুষ এবং বাঁধ দুটোই একসঙ্গে বাঁচাবার মেকানিজম বার করতে হবে প্রশাসনকে। এজন্য কেন্দ্র-রাজ্য ‘ডায়ালগ’ শুরু হোক এখন থেকেই। ঘাটালসহ আরও যেসব বন্যাপ্রবণ এলাকা রয়েছে সেগুলিকে বাঁচাতে মাস্টার প্ল্যান রূপায়িত হোক দ্রুততার সঙ্গে। এগুলি নিয়ে কয়েক দশেকর টালবাহানায় এবার অন্তত পূর্ণচ্ছেদ পড়ুক। এই অব্যবস্থা আর চলতে পারে না।