কর্মে ও ব্যবসায় বাধা থাকলেও অগ্রগতি হবে। আর্থিক যোগ শুভ। ব্যয় বাড়বে। সম্পত্তি নিয়ে শরিকি ... বিশদ
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের দেশ চিরকাল ন্যূনতম তিনটি চাহিদা পূরণের কথা বলেছে: রোটি কাপড়া আউর মকান; বাংলায় খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান। মানব উন্নয়ন সূচক যে ধরনের সমাজ গঠনের প্রেরণা জোগাচ্ছে, তা এই ন্যূনতম চাহিদাকে ছাপিয়ে অনেকখানি। খাবার প্রথম প্রয়োজন ক্ষুধানিবৃত্তির জন্য। পুষ্টির প্রসঙ্গটি আসে উদরপূর্তির পরে। বস্ত্র প্রথম প্রয়োজন লজ্জা নিবারণের জন্য। নরনারীর দৈহিক সৌন্দর্যবর্ধন এবং ফ্যাশনের প্রসঙ্গটিও তেমনি পরবর্তী ধাপ। খাদ্য ও বস্ত্রের পরবর্তী চাহিদাটিই হল গৃহের। বন্যজীবন থেকে মানুষের যখন সামাজিকজীবনে উত্তরণ হল তখন গৃহের চাহিদাটি আর তৃতীয় চাহিদা রইল না, তিনটি মিলিত হয়েই যেন একটি চাহিদা হয়ে গেল। কেননা, খাবার তৈরি করতে একটি রান্নাঘর জরুরি। শুধু বস্ত্রে সম্ভ্রম রক্ষা হয় না। মানুষের জন্য দেওয়ালের আড়াল অনুভূত হল। খেয়ে-পরে যে মানুষ বড় হচ্ছে তার সুস্থতা ও নিরাপত্তার জন্য গৃহ আবশ্যক গণ্য হল। স্বভাবতই মানব উন্নয়ন সূচক আলাদা করে গৃহের উল্লেখ না করে, বিষয়টি সুস্থ-সুখী জীবনের অন্তর্গত ধরে নিল। সূচকে কোন দেশের কোন র্যাঙ্ক দেওয়া হবে সেটা স্থির করার জন্য, ইউএনডিপি ওইসঙ্গে দেখে নিতে চাইল সরকারগুলির এই সংক্রান্ত নীতি। কোন সরকার উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের অবস্থান বা র্যাঙ্ক (৯৪) যথেষ্ট খারাপ ছিল। সেটা আরও নেমে গিয়েছে (১০১)। অবনমন এমন হয়েছে যে প্রতিবেশীদের কাছেও মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। ভারতের চেয়ে ঢের এগিয়ে রয়েছে মায়ানমার (৭১), বাংলাদেশ (৭৬), নেপাল (৭৬) এবং পাকিস্তানও (৯২)!
এই ক্ষুধার্ত ভারতের মধ্যেও ‘অন্য এক ভারত’ নির্মাণের চেষ্টা করে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর খাদ্যসাথী এবং দুয়ারে রেশন কর্মসূচির কল্যাণে বাংলার মানুষকে এখন আর খিদের যন্ত্রণা টের পেতে হয় না। এখানে নানাবিধ কর্মসূচি রূপায়ণের মাধ্যমে কৃষি, গ্রাম, নারী প্রভৃতি ক্ষেত্রের মানুষের আয় বৃদ্ধির নিরলস প্রয়াস জারি রয়েছে। স্বাস্থ্যসাথীর মাধ্যমে চালু রয়েছে সুষ্ঠু স্বাস্থ্য পরিষেবা দানের ব্যবস্থা। এই রাজ্য সরকারের কাছে সমানভাবে গুরুত্ব পেয়েছে গরিব মানুষের গৃহের সমস্যা। ২০১৬-১৭ সালে শুরু হয়েছে বাংলা আবাস যোজনা। ৩৪ লক্ষ গৃহ নির্মাণের লক্ষ্য স্থির করে ইতিমধ্যেই ২৮ লক্ষ বাড়ি মমতার প্রশাসন নির্মাণ করেছে। বাদবাকি বাড়িও দ্রুত নির্মাণের লক্ষ্যে এগচ্ছে এই সরকার। উন্নয়নে মমতার সকারের এই অগ্রাধিকার বোধই এক দশকে সারাভারতে বাংলাকে আলাদাভাবে চিনে নিতে সাহায্য করে। একথা অত্যুক্তি নয় যে, উন্নয়নের সংজ্ঞা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার স্পষ্টতই পাল্টে দিয়েছে। এই প্রশ্নে তাঁর লক্ষ্য গরিব মানুষ এবং পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলি। ব্যাপারটা রাষ্ট্রসঙ্ঘের উন্নয়ন কর্মসূচি এবং মানব উন্নয়ন সূচকের সঙ্গেই সঙ্গতিপূর্ণ। বাংলায় এই উন্নয়ন-দৃষ্টিকোণ গৃহীত না-হলে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ভারতের ছবিটা আরও অনুজ্জ্বল হতোই। অন্য রাজ্যগুলিও এই ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ সরকারের নীতি অনুসরণ করলে আগামী দিনে ভারতের মুখরক্ষা হবে। এটা খুব জরুরি। মোদি সরকারের সৌজন্যে মুখরক্ষাই ভারতবাসীর কাছে আজকের সর্ববৃহৎ চ্যালেঞ্জ!