কর্মে ও ব্যবসায় বাধা থাকলেও অগ্রগতি হবে। আর্থিক যোগ শুভ। ব্যয় বাড়বে। সম্পত্তি নিয়ে শরিকি ... বিশদ
ডিভিসি নির্মাণের প্রথম উদ্দেশ্য ছিল বন্যানিয়ন্ত্রণ। তার সঙ্গে যোগ হয় সেচ ব্যবস্থার উন্নতি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, বনসৃজনসহ পরিবেশ সংরক্ষণ—সর্বোপরি সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বাসিন্দাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। ডিভিসি তৈরির পর দামোদর এবং তার একাধিক শাখা নদ-নদীর উপর কয়েকটি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যেমন—তিলাইয়া, কোনার, মাইথন, পাঞ্চেত, দুর্গাপুর ও তেনুঘাট। নির্মাণ করা হয় মোট সাতটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। ডিভিসির এই সামগ্রিক কর্মকাণ্ড থেকে উপকৃত হয়ে থাকে পূর্ব ভারতের মূলত দুটি রাজ্য ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ। বাংলার যে-সব অঞ্চল সবিশেষ উপকৃত হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—নিম্ন দামোদর উপত্যকার দুটি জেলা বর্ধমান (পূর্বতন) ও হুগলি। আংশিকভাবে উপকৃত হয় হাওড়া, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া। দুই রাজ্যের প্রায় ২৫ হাজার বর্গ কিমি এলাকার উপর ডিভিসির ইতিবাচক প্রভাব অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু ১৯৭৮ সালের বিধ্বংসী বন্যার পর থেকে বারবার ডিভিসির কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ২০০১ এবং ২০১৭ সালেও ১৯৭৮-এর ভয়াবহ স্মৃতি ফিরে আসে নিম্ন দামোদর অঞ্চলের মানুষের মনে। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে বন্যানিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দায় অস্বীকার করতে পারে না ডিভিসি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ডিভিসির অধীন জলাধারগুলির নাব্যতা বা গভীরতা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নিয়মমতো সংস্কার হয় না, পলি নিষ্কাশন হয় না। এছাড়া দামোদর এবং তার শাখা নদীগুলির নাব্যতাও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বহু স্থানে নদ-নদীগুলি বস্তুত ‘চুরি’ হয়ে গিয়েছে। এর জন্য কিছু মানুষের সীমাহীন লোভ এবং আত্মঘাতী অবিবেচনাকেই দায়ী করা যায়।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে গত কয়েক দশক যাবৎ অভিযোগ করা হয় যে, বর্ষাকালে ডিভিসির জলাধারগুলি থেকে জল ছাড়ার নিয়মকানুন মানা হয় না। অনেক সময়ই ডিভিসি কর্তৃপক্ষের খেয়াল-খুশি মতো বিপুল পরিমাণ জল ছেড়ে দেওয়া হয়। আগাম সতর্কবার্তা না-থাকায় বহু মানুষের পক্ষে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে তাঁরা টাকা-পয়সা, গহনা, জরুরি নথিপত্র পর্যন্ত সরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন না। বস্তুত সর্বস্বান্তই হতে হয় হাজার হাজার মানুষকে। দুদিন আগে একই কাণ্ড ঘটেছে। অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে হাওড়া ও হুগলির জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চলের। দুর্গত অঞ্চল পরিদর্শন করার পর ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে ফের শোনা গেল ‘ম্যান মেড বন্যা’-র কথা। যথারীতি অভিযোগ অস্বীকার করেছে ডিভিসি। কিন্তু এত বড় সর্বনাশের কারণ কী? তার যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা তাদের কাছে নেই। দায় অস্বীকার করলেই পাপমুক্তি হয় না। রাজ্য সরকার সর্বাগ্রে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টির প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দৃষ্টি আকর্ষণসহ দ্রুত প্রতিকার দাবি করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। এবার পালা কেন্দ্রীয় সরকারের। নিম্ন দামোদর অঞ্চলের মানুষকে এই বাৎসরিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য কেন্দ্রকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। এজন্য দরকার মোদি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং মান্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ গ্রহণ। না-হলে ডিভিসি তার উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা অচিরেই হারিয়ে ফেলবে। বাংলার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রের যে ক্ষতি হবে তা কিন্তু অপূরণীয়। দামোদর নদের পরিবর্তে ডিভিসি-ই রাঢ়বঙ্গের দুঃখের কারণ হিসেবে নিন্দিত হতে থাকবে।