একাধিক সূত্র থেকে আয় ও সঞ্চয় বৃদ্ধির যোগ। কাজকর্মে উন্নতি হবে। মানসিক চঞ্চলতা ও ভুল ... বিশদ
এদিন গোপনসূত্রে খবর পেয়ে রামপুরহাটের হস্তিকাঁদা গ্রামের একটি জঙ্গলে হানা দেয় এনফোর্সমেন্ট। নেতৃত্বে ছিলেন ডিএসপি (ডিইবি) স্বপন কুমার চক্রবর্তী। আধিকারিকরা সরাসরি নিখুঁত লোকেশন ধরে ওই গোডাউনে চলে যান। সেটি খুলে দেখতেই চক্ষুচড়কগাছ। গোডাউন ভর্তি বিস্ফোরক। পুলিসকে দেখতে পেয়ে এক ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যায়। সন্দেহ, পলাতক ব্যক্তি বিস্ফোরক কারবারের সঙ্গে যুক্ত। এদিকে, সাধারণতন্দ্র দিবসের আগে এত বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়েছে। একই এলাকা থেকে বারবার বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় রামপুরহাট থানার পুলিসের নজরদারি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা।
তদন্ত চালিয়ে পলাতক ব্যক্তির নাম-ধাম জানতে পেরেছে পুলিস। ভোম্বল ঘোষ নামে ওই ব্যক্তি এলাকায় দুষ্কৃতী বলে পরিচিত। জঙ্গলের ওই গোডাউন থেকে একশো মিটারের মধ্যে তার বাড়ি। সে সারাক্ষণ বাড়ির জানালা দিয়ে গোডাউনে লক্ষ্য রাখত। ক্রেতা আসলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে বিস্ফোরক বিক্রি করে আবার গোডাউন বন্ধ করে দিত। পুলিসের দাবি, অবৈধ পাথর খাদানে সরবরাহের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদেও বিস্ফোরক পাচার করা হতো। এই মুহুর্তে মুর্শিদাবাদে জঙ্গি গোষ্ঠী জেএমবি, বাংলা টিমের হদিশ মিলছে। বিস্ফোরকগুলি জঙ্গিদের কাছে যেত কি না, বা বাংলায় নাশকতার ছক ছিল কি না, সেটাও ভাবাচ্ছে পুলিসকে। সবকিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা।
হস্তিকাঁদা গ্রামটি রামপুরহাট ও ঝাড়খণ্ডের সীমানা ঘেঁষা। গ্রামের একপাশে গভীর জঙ্গল। সেই জঙ্গলে পাকা গোডাউন ঘর তৈরি করে অবৈধ বিস্ফোরক কারবার চালিয়ে আসছিল দুষ্কৃতীরা। গ্রামের অনতিদূরে রামপুরহাট থানার নাকা পয়েন্ট। সেখানে সর্বক্ষণ পুলিস কর্মীরা থাকেন। তাঁদের নাকের ডগাতেই কীভাবে এই কারবার চলছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা। সোমবার রাতে গোপন সূত্রে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের আধিকারিকরা কারবারের বিষয়টি জানতে পারেন। প্রস্তুতি নেওয়া হয় অভিযানের। তৈরি হয় বিশেষ টিম। এদিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ আচমকা গোটা জঙ্গল ঘিরে অভিযান শুরু হয়। সেই সময় গোডাউনের ভিতরে ছিল ভোম্বল। এমনটাই পুলিসের দাবি। কিন্তু পুলিসকে দেখেই সে দৌড়ে পালিয়ে জঙ্গলের ভিতর গা ঢাকা দেয়।
পুলিস গোডাউনে ঢুকে দেখে থরে থরে সাজানো বিস্ফোরক। সেখান থেকে ২০ হাজার পিস ডিটোনেটর, ৬ প্যাকেট অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও পাঁচ প্যাকেট তার উদ্ধার হয়েছে। এই তারের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পুলিস জানিয়েছে, যে পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে তাতে রামপুরহাটের মতো শহরকে একনিমিষেই উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। পুলিস তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে, ভোম্বল মূল কারবারি নয়। সে গোডাউনের পাহারাদার। তার নামে থানায় একাধিক চুরি, ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যেই কারবারের মূল মাথাদের নাম পাওয়া গিয়েছে। ভোম্বল সহ তাদের জালে তুলতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ ও পুলিস।
ঘটনা হল, প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের এই সময়ে হস্তিকাঁদা থেকে বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। ২০২১ সালে ৯ আগষ্ট হস্তিকাঁদা জঙ্গলের ভিতরের রাস্তায় বিস্ফোরক বোঝাই একটি পিকআপ ভ্যান ও গাড়ি আটক করে পুলিস। দুটি গাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ৩ হাজার ৪০০ পিস জিলেটিন স্টিক। গ্রেপ্তার করা হয় আন্তঃরাজ্য বিস্ফোরক পাচারকারী যশপাল সিংকে। বাড়ি পাঞ্জাবের অমৃতসরে। গত বছর ২৫ জানুয়ারি এই গোডাউন থেকে ৬ হাজার ৪০০ পিস জিলেটিন স্টিক উদ্ধার করে পুলিস। প্রাথমিক তদন্তে পুলিসের অনুমান, এই অবৈধ কারবারের সঙ্গে আন্তঃরাজ্য বিস্ফোরক পাচার চক্র যুক্ত রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গলের মধ্যে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে বাড়িটি। দিনের বেলায় ওই বাড়িতে কাউকে যাতায়াত করতে দেখা না গেলেও সন্ধ্যা নামলেই ওই বাড়িতে আলো জ্বলতে দেখেছেন অনেকেই।