সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: উন্নয়ন হয়নি। তাই ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের কোনও তাপ উত্তাপ নেই রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের মানুষের। সীমান্ত লাগোয়া এই এলাকা চোরা চালান, পাচারকারী, দুষ্কৃতীদের স্বর্গরাজ্য। নদীয়ার মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের একসময়ের রাজধানী ছিল কৃষ্ণগঞ্জের শিবনিবাসে। বর্গি হানা থেকে রক্ষা পেতে দীর্ঘ সময় তিনি এখান থেকে শাসনকার্য সামলান। তিনি এশিয়ার বৃহত্তম শিবলিঙ্গ শিবনিবাসে স্থাপন করেন। শিবনিবাসকে কাশী তূল্য বলা হতো। মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রর পূর্বপুরুষ ভবানন্দ মজুমদার কৃষ্ণগঞ্জের মাটিয়ারী গ্রামে নদীয়া রাজের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৬৬৫ সালে ভবানন্দের প্রপৌত্র মহারাজা রাঘব রায় পুত্র রুদ্র রায়ের নামে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন নদীয়ায় প্রথম শিবমন্দির ‘রুদ্রেশ্বর’। কৃষ্ণগঞ্জে একাধিক শিল্পকর্ম ও মন্দির দেখতে জেলা ও বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ আসেন। বহু বিখ্যাত মানুষের বাস ছিল এই বিধানসভা কেন্দ্রের ভাজনঘাট, মাজদিয়া, বার্ণপুরে। ১৮৬২ সালে শিয়ালদহ থেকে রানাঘাট হয়ে গেদের ওপর দিয়ে যাওয়া দর্শনা পর্যন্ত ১১১ মাইল রেলপথ চালু হয়। কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রর মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা মাথাভাঙা, চূর্ণি, ইছামতী এই তিনটি নদীকে কেন্দ্র করে আগে পূর্ববঙ্গের সঙ্গে নদীপথে ব্যবসা চলত। সমস্তই আজ অতীত। একসময় মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাম দেওয়া কৃষ্ণগঞ্জই আজকের কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র। হাঁসখালি বিধানসভা কেন্দ্রটি পরে কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক ও হাঁসখালির আটটি পঞ্চায়েত নিয়েই কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র হয়েছে। কৃষিই এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা। তাছাড়া বহু মৎস্যজীবীও রয়েছেন। বিভিন্ন ক্রাইম, একাধিক রাজনৈতিক নেতার খুনের ঘটনাও ঘটেছে এখানে। কৃষ্ণগঞ্জের ফুলবাড়িতে সরস্বতী পুজোর রাতে খুন হন তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস। এলাকার বাসিন্দা  মনোতোষ বিশ্বাস বলেন, এখানে ভালো অডিটোরিয়াম, পার্ক কিছু নেই। এমনকী মন্দিরগুলোরও সংস্কার হয় না। তবে কিছু রাস্তা হয়েছে। আমরা বাইরে গেলে অনেকে পাচার, চোরাচালান নিয়ে জিজ্ঞাসা করে। আমাদের মাথা নিচু হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে নদী নিয়ে কাজ করা স্বপন ভৌমিক বলেন, নদী দখল করে বাড়ি হচ্ছে। অবৈধ ভাবে মাটি কেটে ইট ভাটায় পাঠানো হচ্ছে। মাথাভাঙা, চূর্নি ও ইছামতী নদীর অবস্থা খুব খারাপ। নদীগুলির সংস্কার হচ্ছে না। কৃষ্ণগঞ্জের নামডাক থাকলেও উন্নয়ন না হওয়ায় ভোট নিয়ে মানুষের উৎসাহ নেই। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী মুকুটমণি অধিকারী বলেন, এখানে দীর্ঘদিন ধরে বামফ্রন্টের ও বিজেপির সাংসদ ও বিধায়ক ছিল। তাঁরা উন্নয়ন করেননি। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ বীতশ্রদ্ধ। বাইরেও রটে অনেক কিছু। তবে আমি সাংসদ হলে অবশ্যই এই পুরনো জনপদের হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব। বিজেপির রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী জগন্নাথ সরকার বলেন, উন্নয়ন তো রাজ্যের হাতে। পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ আছে। কেন্দ্র টাকা দিয়েছে। কিন্ত রাজ্য খরচ করেনি। আর চোরের দলে নাম লেখায় যারা, তাদের মুখে উন্নয়নের কথা মানায় না।