কর্মপ্রার্থীদের কোনও সুখবর আসতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদন্নোতির সূচনা। গুপ্ত শত্রু থেকে সাবধান। নতুন কোনও প্রকল্পের ... বিশদ
অতএব, ‘নেই রাজ্যে’ সাজগোজের বালাইও নেই। সেই কবে খালি হয়েছে ড্রেসিং-ড্রয়ার। হাত পড়েনি সাত রঙের লিপস্টিক বক্সে। আলট্রা ভায়োলেট, ইনফ্রা রেডের কি হলো কে জানে! আদিখ্যেতার আন্তর্জাতিক প্রেমিক রংও বুঝি শুকিয়ে কাঠ! পিঙ্কের কথাই বলছি। আজ কতদিন হল সাজঘরে দেখা হয়নি তার সঙ্গে। গাঢ়ত্ব হারিয়েছে বোধহয় মেরুনও! আসলে, ঘরণীদের সাজঘরে যাওয়াই যে নিষিদ্ধ করে দিয়েছে মারণ ভাইরাস কোভিড-১৯। কদাচিৎ বাড়ির বাইরে পা পড়লেও মুখ ‘সিল’। মানে মাস্কে মুখ ঢাকা। চিবুক থেকে নাসিকার মাঝ বরাবর। অদৃশ্য ঠোঁটের সৌন্দর্য্য। অতপর, সাজঘরে গিয়ে লাভ নেই। ঘরণী, তরুণী মায় কর্মরতাদের এই লাভ-ক্ষতির অঙ্কে এখন ব্যবসা বিপর্যয়ের প্রমাদ গুনছে কসমেটিক্স শিল্প।
লিপস্টিক। প্রসাধনী বাণিজ্যের মূল আধার। ব্যবসার বিপুল ভাণ্ডারে বড় অংশীদার। অর্থনীতির মন্দাতেও মলিন হয়নি তার মহিমা। আয়ের হিসেবে ‘লিপস্টিক ইনডেক্স’ ছিল ঊর্দ্ধমুখী। সেই লিপস্টিকই এখন মাস্কের আড়ালে তার শ্রী ঢেকেছে। অঙ্গ হারিয়ে খোঁড়াতে শুরু করেছে কসমেটিক্স শিল্প। সোজা হয়ে দাঁড়াতে এবার চোখে চোখ রাখছেন উৎপাদনকারীরা। জোর দিচ্ছেন কাজল, আইলাইনার, মাসকারা, কিংবা আইস্যাডোজ তৈরির উপর।
ভারতে এমনিতেই প্রসাধনী ব্যবসার বহর বৃদ্ধিতে খানিক এগিয়ে চোখ। ঠোঁটের কয়েক ধাপ উপরে। তবে বাজার দখলে চোখ-ঠোঁটের লড়াই চলছিল বেশ সেয়ানে সেয়ানে। সংশ্লিষ্ট শিল্পের তথ্য বলছে, সাজ-পণ্যের বিকিকিনির হাটে ৩৬ শতাংশ বাজার দখলে রেখেছে আই মেকআপের যাবতীয় আইটেম। সেক্ষেত্রে লিপস্টিকের বাজার এতদিন দাঁড়িয়েছিল ৩২ শতাংশে। এবার আর কোভিড, লকডাউনের ধাক্কা সামলাতে পারছে না সে। বাজারে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে লিপস্টিক। সঙ্গত কারণেই ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আই মেকআপ পণ্যের উৎপাদন ও বিপণনে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে কসমেটিক্স শিল্প। অকপটে তা স্বীকারও করে নিচ্ছেন নামাজাদা ব্র্যাণ্ডের কর্মকর্তারা।
লোরিয়েল ইন্ডিয়ার ক্রেতা সংক্রান্ত বিভাগের ডিরেক্টর কবিতা অ্যাংরে বলেছেন, ‘লকডাউনে বাড়ির বাইরে কেউ বেরোচ্ছেন না। সামাজিক সব অনুষ্ঠানই এখন নিষিদ্ধ। ফলে ক্রমেই বদলে যাচ্ছে রূপচর্চার রুচি, রেওয়াজ। মহিলাদের কাছে কদর হারিয়ে ফেলছে লিপস্টিক। চাহিদাও কমছে। আমরাও এখন ঝুঁকে পড়ছি আই মেকআপ পণ্যের ব্যবসার উপর।’ প্রথমসারির প্রসাধনী সামগ্রী বিপণনকারী সংস্থা ‘নায়িকা’র মুখপাত্রের কথায়, ‘ভারতে বরাবরই আই মেকআপ পণ্যের বাজার বড়। এখন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা হলেও লিপস্টিক নিয়ে গেল গেল রব তোলার এখনও সময় আসেনি।’ হিন্দুস্তান ইউনিলিভারের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘লকডাউনের জেরে লিপস্টিকের চাহিদা কমেছে ঠিকই। তবে সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে গেলে গ্রাহকরা তাঁদের পুরোনো অভ্যাসেই ফিরবেন। লিপস্টিকও ফিরে পাবে তার কদর। সেক্ষেত্রে একটু সময় তো লাগবেই।’ কিন্তু কবে আসবে সেই সময়? হলফ করে বলতে পারছেন কেউই। কোভিডের বাড়বাড়ন্ত এখন অপ্রতিরোধ্য। মাস্ক এখন মুখের ভূষণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও বলে দিয়েছেন, মাস্কই জীবনের অঙ্গ। তাই যদি হয়, ঢাকা মুখে লিপস্টিকের কী বা প্রয়োজন। তা হলেও লোহা আবিষ্কারের আগে নাগালে আসা এই রূপচর্চার পণ্যকে হারাতে চায় না প্রসাধনী শিল্প। ইতিহাস বলছে, সম্ভবত পাঁচ হাজার বছর আগে প্রাচীন সুমেরিয়ানরাই ঠোঁটের সৌন্দর্য্য বর্ধনের কৌশল আয়ত্ব করে। ক্রমে ক্রমে প্রাচীন মিশর, গ্রিস ঘুরে আধুনিক সভ্যতায় রূপচর্চার অন্যতম স্নেহবস্তু হয়ে ওঠে আজকের লিপস্টিক।